সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে রাজপথে থাকার প্রত্যয় নিয়ে শেষ হয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সম্মেলন, যাতে সভাপতি হিসেবে গোলাম কুদ্দুস এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে হাসান আরিফ নির্বাচিত হয়েছেন।  

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Sept 2014, 05:01 PM
Updated : 20 Sept 2014, 05:01 PM

রাজধানীর পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান মিলনায়তনে শনিবার রাতে সম্মেলনের শেষে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব হানিফ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, “পরে ৫৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির বাকিদের নাম জানিয়ে দেওয়া হবে।”  

সকালে দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “কাজের চেয়ে ব্যক্তি বড় নয়। কাজ করতে গিয়ে ব্যক্তি যেন কখনোই বড় না হয়ে দাঁড়ায়।”

অষ্টমবারের মত অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনের মূল স্লোগান ছিল ‘আপনা মাঝে শক্তি ধরো নিজেরে করো জয়’।

স্লোগানের কথা উল্লেখ করে প্রধান অতিথি বলেন, “আমাদের দেশে সাংস্কৃতিক অঙ্গন ভিক্ষা-চাঁদা-অনুদান নির্ভর। অনুষ্ঠান করতে হলে চাঁদা তুলতে হয়,ভিক্ষা চাইতে হয়,অনুদানের জন্য ঘুরতে হয়। এভাবে সাংস্কৃতিক আন্দোলন চলতে পারে না।

“এ কারণে আমাদের শিল্পচর্চার ক্ষেত্রে অনেক মধ্যবর্তী ব্যবসায়ী ঢুকে পড়েছে, যাদের কারণে অনেক আপোষ করতে হচ্ছে। এভাবে কখনোই সাংস্কৃতিক আন্দোলন চলতে পারে না। অথচ যেকোনো অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমরা সংস্কৃতিকর্মীরাই সবচেয়ে বড় কাজটি করে এসেছি সেই ’৫২ সাল থেকেই। এই আবৃত্তিশিল্পীরা, এই নাট্যশিল্পীরা, এই সঙ্গীতকাররাই আন্দোলন চালিয়ে গেছে।”

সংস্কৃতিগুলো স্বনির্ভর হয়ে ওঠার জন্য আয়ভিত্তিক কর্মকাণ্ড যাতে শুরু করতে পারে সেজন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে একটা প্রকল্প শুরুর পরামর্শ দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের বিদায়ী সভাপতি নাট্যব্যক্তিত্ব নাসিরুদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, “১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৩০টি সফল বছর পার করেছে আন্দোলনে, সংগ্রামে মানুষের পাশে থেকে এবং সৃষ্টিশীলতার উদ্যমে ভরপুর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।

“সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট কোনো একটি সংগঠন নয়, এটি একটি আন্দোলন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট চেতনানির্ভর একটি প্রতিষ্ঠান, একটি চেতনানির্ভর আন্দোলন। এই চেতনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।

“এ চেতনা হাজার বছরের যে ইতিহাস-ঐতিহ্য রয়েছে, শিল্প-সংস্কৃতির উত্তরাধিকার আমরা, যে অসাম্প্রদায়িকতা, যে গণতন্ত্র, মানুষের যে মানবিকতার চেতনা, সেই চেতনার কথা বলবে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।এ চেতনার উন্মেষ এবং এর আলোকেই গত ৩০ বছর ধরে এ সংগঠনের পথ চলা।”

জোটের শুরুর দিকের নেতাদের কথা স্মরণ করে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রকাশ করেন নাসিরুদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ও নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার ও মামুনুর রশীদ,জোটের সহ-সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন আবৃত্তিশিল্পী আহকামউল্লাহ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে তিনশ’রও বেশি সংস্কৃতিকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সৈয়দ শামসুল হক। এরপর ‘শিখা চিরন্তন’ পর্যন্ত শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে উদ্বোধনী পর্ব শেষ হয়।

দিনের দ্বিতীয়ার্ধে সারা দেশ থেকে আসা জোটের প্রতিনিধিদের নিয়ে সম্মেলন সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সংগঠনটির বিধি অনুযায়ী প্রতি দুইবছর পর এই সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও এবার প্রায় পাঁচ বছর পর অনুষ্ঠিত হলো।