গাজীপুরে শ্রমিকের মৃত্যু, অসুস্থ ৪০

গাজীপুরের ভোগড়ায় এক শ্রমিকের মৃত্যুসহ বেশ কয়েকজন অসুস্থ হওয়ার পর অসন্তোষের মুখে চারটি পোশাক কারখানায় ছুটি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Sept 2014, 11:53 AM
Updated : 20 Sept 2014, 11:53 AM

শনিবার ‘মাসট্রেড ইন্টারন্যাশনাল গার্মেন্টস লিমিটেড’ নামের কারখানার সুয়িং অপারেটর সাহিদা আক্তারের (৩০) মৃত্যু হয় এবং অন্তত ৪০ জন অসুস্থ হন।

শ্রমিকদের দাবি, কারখানার পানি পান করে তারা অসুস্থ হয়েছেন। তবে, কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, কারখানায় ঢোকার পথেই তারা অসুস্থ হয়েছেন।

চিকিসকরা জানান, গণহিস্টেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন শ্রমিকরা। কোনো ফুড পয়জনিংয়ের আলামত পাওয়া যায়নি।

মাসট্রেড ইন্টারন্যাশনাল গার্মেন্টস লিমিটেড কারখানার সুয়িং অপারেটর মো. শহিদুল ইসলাম জানান, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কারখানায় ঢুকে পানি পান করার পর কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাদের মধ্যে সাহিদা আক্তারের মৃত্যু হয়।

একই কথা জানান, কারখানার আয়রনম্যান শাহাদৎ হোসেন।

কারখানার ব্যবস্থাপক শেখ তাহমিনা পারভিন জানান, পানি পান করে নয় সকাল ৮টার দিকে কারখানায় ঢুকে প্রধান ফটকে কার্ড পাঞ্চ করার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন সুয়িং অপারেটর সাহিদা আক্তার।

বোর্ডবাজারের তায়রুন্নেছা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা  করেন।

পরে আতঙ্কে আরো কয়েকজন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থদের গাজীপুর সদর হাসপাতালে ও তায়রুন্নেছা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

তিনি জানান, সাহিদার জন্য বীমার দুই লাখ টাকা প্রদানের ব্যবস্থা করা ছাড়াও লাশ গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশালে পৌঁছানো ও দাফনের ব্যয়ভার বহন করা হবে। 

তায়রুন্নেছা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জামিলা ও তাসলিমা নামের দুই শ্রমিক ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া সোহেল রানা ও শরীফাসহ আরো ১৪ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

গাজীপুর সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসক আব্দুস সালাম সরকার জানান, ওই কারখানার ২৪ জন অসুস্থ শ্রমিক এ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তারা সকলেই ‘মাস সাইকোজেনিক ইলনেস’-এ (গণহিস্টেরিয়া) আক্রান্ত হয়েছেন।

“প্রাথমিকভাবে পরীক্ষায় আমরা ফুড পয়জনিংয়ের কোনো আলামত পাইনি,” বলেন তিনি।

ঘটনার পর শিল্পাঞ্চল পুলিশ জোন-২ (গাজীপুর) এর পুলিশ সুপার আবুল খায়ের, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. এনামুল কবির এবং জয়দেবপুর থানা পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কারখানা পরিদর্শন করেছেন। 

জয়দেবপুর থানার উপ-পরিদর্শক মো. শহিদুল ইসলাম জানান, ঘটনার পর শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

পরে একই ভবনে অবস্থিত মাসট্রেড ইন্টারন্যাশনাল গার্মেন্টস লিমিটেড, লাজিম গার্মেন্টস, নিডল টাচ গামেন্টস ও রেড ফিউরি নামের চারটি পোশাক কারখানা কর্তৃপক্ষ শনিবারের জন্য ছুটি ঘোষণা করে।

জয়দেবপুর থানার ওসি খন্দকার রেজাউল হাসান মৃত সাহিদার দেবর দুলাল মিয়ার বরাত দিয়ে জানান, দুলাল একই কারখানায় চাকুরি করেন। সকালে সাহিদা কারখানায় গিয়ে হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার সময় কারখানার অন্য শ্রমিকরা তাকে ধরে ফেলে এবং তায়রুন্নেছা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

ওই হাসপাতালের চিকিৎসক মো. সায়েম বলেন, তাকে মৃতাবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে।

দুলাল পুলিশের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তার ভাবী একজন হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের রোগী ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি প্রেসারের ঔষধ সেবন করে আসছিলেন।

দুপুরে ওই নারী শ্রমিককের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য তায়রুন্নেছা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে গাজীপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।