একঝাঁক পানকৌড়ির অভয়াশ্রম

বয়স্ক ভারি গলার কাশির মতো খক্ খক্, খেকর-খেকর শব্দ বাগেরহাট শহরের পুরাতন কোর্ট চত্বর এলাকা দিয়ে চলাচলকারী লোকজনের কাছে অতি পরিচিত। এ পথচারীদের মাথায় কখনোবা ছুটে আসে কটু গন্ধের পাখির বিষ্ঠা।

অলীপ ঘটক বাগেরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Sept 2014, 04:35 PM
Updated : 19 Sept 2014, 07:26 PM

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এ এলাকায় ভৈরব নদীর পাড়ে কয়েকটি গাছে বাস করে আসছে একঝাঁক পানকৌড়ি।

গাছ গাছালি আবৃত তুলনামূলক নিভৃত এই এলাকাটি এখন ওই পাখিদের নিরাপদ অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে।

শহরের মানুষও যেন তাদের উপস্থিতিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তাই হয়ত এখানে এলেই মনের অজান্তে রিকশার হুডে হাত যায় আরোহীর। এখানে যেকোনো সময় মাথায় ছড়াতে পারে পানকৌড়ির পুরীষ।  

আর পথচারীরা বই, খাতা কিংবা ছাতা ধরেন মাথায়। কেউবা রাস্তায় ছড়িয়ে থাকা বিষ্ঠার দাগের সীমানা থেকে দূরত্ব রেখে দ্রুত রাস্তাটুকু অতিক্রম করে যান।

স্থানীয়রা জানান, ছোট পানকৌড়িরা এখানে আসে জ্যৈষ্ঠ মাসে। এখানে তারা জোড় বাঁধে, বাসা বানায়, ডিম দেয় ও বাচ্চা ফোটায়।

আবার ছানাপোনা বড় হলে আশ্বিনের প্রথম দিকে উড়াল দেয় অন্য কোনো আবাসের উদ্দেশে। তবে ফাঁকা থাকে না গাছগুলো। ওরা চলে যেতেই অগ্রহায়ণে আসে সাদা বকের দল, শালিক আর চড়ুই।

বকের দল বাচ্চা তুলে ফিরে যায় বৈশাখের শেষে। তবে এখানে বকেদের অবস্থান পানকৌড়িদের মতো সরব নয়।

আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে অতি পরিচিত পাখি এই পানকৌড়ি। ওদের খাদ্য হলো মাছ। কালো শরীরে ছড়ানো লেজ, হাঁসের মতো পা। সাপের মতো লম্বা বাঁকানো গ্রীবা, সুঁচালো বাঁকা ঠোঁট। প্রজনন মৌসুমে শরীরের কালো রং কিছুটা ফিকে হয়ে যায়।  

এদের সচরাচর দেখা যায় নদী ও বিল এলাকায়। উঁচু গাছে ডালপালা দিয়ে বাসা বাঁধে। মা পানকৌড়ি একবারে দুই থেকে ছয়টি পর্যন্ত ডিম পাড়ে। ছেলে-মেয়ে উভয় পাখি পালাক্রমে ডিমে তা দেয়। বাচ্চা ফুটতে লাগে ১৭ থেকে ২১ দিন।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মাছের ঘেরে এদের বিচরণ নিয়মিত এবং এরা ঘের মালিকদের অতি অপছন্দের। ডুব সাঁতারে মাছ ধরতে দক্ষ এই ছোট পানকৌড়ি অনেক সময় দুঃসাহস দেখিয়ে বাড়ির পুকুরেও নেমে পড়ে। শিকারিদের কারণে আর আবাস ভূমি সংকুচিত হয়ে এখন ক্রমেই বিপন্ন হয়ে পড়ছে এরা।

বাগেরহাট পুরাতন আদালত চত্বর, বাগেরহাট সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশন, জেলা প্রশাসকের বাসভবন, জেলা রেকর্ড রুম, কোর্ট মসজিদ চত্বর আর জেলা অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কার্যালয়কে ঘিরে পঁচিশ থেকে ত্রিশটি বিভিন্ন ধরনের গাছে পানকৌড়ির আবাসস্থল।

বাগেরহাট সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মীর ফজলে সাঈদ ডাবলু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করে এখানে পাখি আসে। বিগত সময়ে এই এলাকায় গাছের ডাল কেটে পাখিদের থাকার ব্যবস্থা নষ্ট করা হয়েছিল। সে কারণেই হয়ত ওদের আগমন কমেছে। তাদের নিরাপত্তা দিতে হবে।

সিপিবির বাগেরহাট জেলা সাধারণ সম্পাদক ফররুখ হাসান জুয়েল বলেন, “পুরাতন কোর্ট এলাকায় দলীয় কার্যালয় হওয়ায় দিনের বেশিরভাগ সময় আমি এই চত্বরে থাকি। বক-পানকৌড়িদের প্রতি মানুষের কোনো অন্যায় আচরণ আমার নজরে আসলে তার প্রতিবাদ করি। তবে ইদানিং এখানে পাখি ধরা ও হত্যার ঘটনা ঘটছে। মাঝে মাঝে বাজারে বিক্রি হয় শুনেছি।”

এগুলো বন্ধ করতে সচেতনতা বাড়ানোর কথা জানান তিনি।

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মু. শুকুর আলী তার সরকারি বাসার গাছে পাখিদের এই বিচরণে খুবই আনন্দিত। পাখিদের প্রতি নিজের সহনশীলতার কথা জানিয়ে এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, “আমাদের সবাইকে আরও সহনশীল হতে হবে।”