শুক্রবার দুপুরে ডিএমপির গণমাধ্যম কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “গ্রেপ্তার সাতজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে যে মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যার ব্যাপারে তারা কিছু কিছু তথ্য জানত। ”
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর তুরাগের আশুলিয়া ল্যান্ডিং স্টেশন পার্কিং এলাকা থেকে জেএমবির একাংশের ভারপ্রাপ্ত আমির আব্দুল্লাহ আল তাসনিম ওরফে নাহিদসহ ওই সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বাকি ছয়জন হলেন- মো. নাঈম আলী (২৮), মো. সিকান্দার আলী ওরফে নকি (২৫), মাহমুদ ইবনে বাশার (২৩), মো. মাসুম বিল্লাহ (২৬), ফুয়াদ হাসান (১৮) ও আলী আহমদ (২৪)।
গত ২৭ অগাস্ট রাতে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারে বাসায় ঢুকে গলা কেটে হত্যা করা হয় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের নেতা ও ইসলামী ফ্রন্টের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুকীকে, যিনি একাধিক টেলিভিশনে ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপনাও করতেন।
ফারুকী হত্যাকাণ্ডে তার পরিবার ইতোমধ্যে একটি মামলা করেছে। ওই হত্যাকাণ্ডের পেছনে উগ্র ইসলামপন্থিরা রয়েছে বলে পরিবারের অভিযোগ।
এর মধ্যে গত ৪ সেপ্টেম্বর ইসলামী ফ্রন্টের সহযোগী সংগঠন ছাত্রসেনার পক্ষ থেকে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তিসহ ছয় টিভি উপস্থাপককে ফারুকী হত্যার ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ হিসাবে উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগ দায়ের করা হয়।
এরা হলেন- এনটিভি ও এটিএন বাংলার ইসলামী অনুষ্ঠানের আলোচক জামায়াতের রুকন তারেক মনোয়ার ও নরসিংদী জামায়াতের সাবেক আমির কামাল উদ্দিন জাফরী; দিগন্ত ও পিস টিভির ইসলামী অনুষ্ঠানের আলোচক কাজী ইব্রাহীম; এটিএন বাংলার ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক আরাকানুল্লাহ হারুনী; আরটিভি ও রেডিও টুডের উপস্থাপক খলেদ সাইফুল্লাহ বখশী এবং বাংলাভিশনের ‘কোরানের আলো’ অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মুখতার আহমদ।
‘জেএমবির আইএস যোগ’
মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, জেএমবি নেতা মাওলানা সাইদুর রহমান কারাগারে থাকায় এই জঙ্গি সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ২৯ বছর বয়সী তাসনিম। গাজীপুরে আদালতে বোমা হামলার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আব্দুল আল সোহাইলের ভাই তিনি।
বাকি ছয় জেএমবি সদস্যের মধ্যে মো. সিকান্দার আলী ওরফে নকি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ব্লগার রাজিব হত্যার ঘটনায় তাকে সন্দেহ করা হলেও হত্যায় তার সরাসরি সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি বলে জানান যুগ্ম কমিশনার মনিরুল।
আর মাহমুদ ইবনে বাশার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, তাসনিম ওরফে নাহিদের বিরুদ্ধে গাজীপুর ও টাঙ্গাইল জেলায় হত্যা ও বিস্ফোরণ সংক্রান্ত ২০টির বেশি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার অন্যদের বিষয়েও খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।
মনিরুল বলেন, “জেএমবি সদস্যরা মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলাদেশে তাদের জন্য কাজ করার পরিকল্পনাও করেছিল। সংগঠন গোছাতে তারা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সদস্য সংগ্রহের জন্যও কাজ করছে। এ বছর তারা মূলত নারী কর্মী সংগ্রহে কাজ করছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। ”
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই সাত জঙ্গির কাছ থেকে বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহার উপযোগী প্রায় ১০ কেজি রাসায়নিক এবং চারটি পিতলের মূর্তি পাওয়া গেছে।
এছাড়া উগ্র জঙ্গিবাদের কিছু বই ও লিফলেট উদ্ধার করা হয়েছে, যাতে জেএমবি পরিচালনার নিয়ম-নীতি সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা রয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
মনিরুল বলেন, “ভিভিআইপি, ভিআইপিসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা ছিল জেএমবি সদস্যদের। তাদের ওপর হামলা চালিয়ে বিশ্ব মিডিয়ার নজর কেড়ে আইএস এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টাও ছিল তাদের পরিকল্পনায়।
“তারা কয়েকটি পরিকল্পনা করে ব্যর্থও হয়েছিল। কারাগারে আটক এক জঙ্গি নেতাকে কারাগার থেকে স্থানান্তরের সময় ছিনিয়ে নেয়ারও পরিকল্পনা ছিল তাদের।”
এরইমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে জেএমবির যোগাযোগ হয় বলে মনিরুল জানান।
দুই মামলায় রিমান্ডে
সাত জেএমবি জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের পর রাতেই তাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। এর মধ্যে এক মামলায় আদালত তাদের দুই দিনের রিমান্ডেও পাঠিয়েছে।
তুরাগ থানায় করা এ দুই মামলার মধ্যে একটি সন্ত্রাসবিরোধী আইনের, অন্যটি বিস্ফোরক আইনে।
এর মধ্যে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় শুক্রবার তাদের ঢাকার হাকিম আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে বিচারক দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।