শাহবাগে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ, সংঘর্ষে আহত ৬

দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনের রাস্তায় মাত্র ২০ গজের ব্যবধানে তিন পক্ষের সমাবেশের মধ্যেই পাল্টাপাল্টি শ্লোগান, ধস্তাধস্তি আর হাতাহাতিতে জড়ালো গণজাগরণ মঞ্চের দুটি পক্ষ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Sept 2014, 01:05 PM
Updated : 19 Sept 2014, 07:20 PM

আগের দিনের মতো শুক্রবারও গণজাগরণ মঞ্চের এক অংশের মিছিলে বাধা দিয়েছে পুলিশ। পিটুনি আর ধস্তাধস্তিতে আহত হয়েছেন ইমরান এইচ সরকারসহ অন্তত ছয়জন।

বিকেল ৪টার দিকে জাদুঘরের প্রধান ফটকের বাঁ দিকে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ শুরু করে কামাল পাশা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন গণজাগরণ মঞ্চের একাংশ। এর আধা ঘণ্টা পর জাদুঘরের ফটকের ডান পাশে শুরু হয় ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বাধীন গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশ।

দুই পক্ষের অবস্থানের মাঝে ছিল গণজাগরণ মঞ্চে ক্রিয়াশীল কয়েকটি ছাত্র সংগঠন নিয়ে তৈরি হওয়া শাহবাগ আন্দোলনের সমাবেশ, যার নেতৃত্বে রয়েছেন ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু।

এক পর্যায়ে গণজাগরণ মঞ্চের দুই অংশের সমাবেশ থেকে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ও শ্লোগান শুরু হয়ে যায়। মাত্র ২০ গজের মধ্যে ১৩টি মাইক ও সাত-আটটি ভারি সাউন্ড সিস্টেমের শব্দে কার কি বক্তব্য তা বোঝাই কঠিন হয়ে পড়ে। 

ইমরান নেতৃত্বাধীন অংশের সমাবেশ

কামাল পাশা নেতৃত্বাধীন অংশের সমাবেশ

সমাবেশের শুরুতেই ইমরান অভিযোগ করেন, তারা প্রথমে ট্রাকের ওপরে সমাবেশ করতে চাইলে তাদের ট্রাক ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয়া হয়েছে।

“আমরা যেন সমাবেশের জন্য মাইক ব্যবহার করতে না পারি সেজন্য চারদিকে থেকে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পাশের সমাবেশের সবগুলো মাইক ও ভারি সাউন্ড সিস্টেমগুলো আমাদের দিকে তাক করে রাখা। আমরা কোনো কর্মসূচি দিলে একই সময়ে পাল্টা কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে। আমরা বক্তব্য দেয়া শুরু করলে তারা গান বাজাচ্ছে।”

ইমরান প্রশ্ন করেন, “এতোসব আয়োজন কেন? কারণ আমাদের কন্ঠস্বর যাতে জনগণ শুনতে না পায়।… হামলা মামলা ও পেটোয়া বাহিনী দিয়ে যাই করেন, যতো ভয়ই দেখান, ইমরান কাউকে ভয় করে না।… যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সামনে নেয়ার জন্য যার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো দরকার, গণজাগরণ মঞ্চ তার বিরুদ্ধেই দাঁড়াবে।”

অন্যদিকে ইমরান নেতৃত্বাধীন জাগরণ মঞ্চের কর্মীদের হুমকি দিয়ে বক্তব্য দেন কামাল পাশা।

ইমরানকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “আপনাদের মঞ্চ থেকে অনেক বড় বড় বক্তব্য আসছে। এ ধরনের বক্তব্য আসলে মুখ সেলাই করে দেয়া হবে। আমরা হাত বাড়িতে রেখে আসিনি।”

শাহবাগ আন্দোলনের মিছিল

 

পুলিশের সঙ্গে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের ধস্তাধস্তি

পাশাপাশি অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সাঈদীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মিছিল বের করেন ইমরান নেতৃত্বাধীন অংশের কর্মীরা।

মিছিলটি শাহবাগ থানার সামনে দিয়ে কিছুটা এগোনোর পর তাদের বাধা দেয় পুলিশ। উভয়পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে পুলিশি ধাওয়ার মুখে কয়েকজন কর্মী গণজাগরণ মঞ্চের তথ্য কেন্দ্রের দিকে এগিয়ে যান।

এ সময় সেখানে সমাবেশে থাকা কামাল পাশা নেতৃত্বাধীন অংশের এক কর্মী মাইকে ঘোষণা দেন, ইমরানের নেতৃত্বাধীন অংশের কর্মীরা তাদের ওপর হামলা করেছে। হামলায় তাদের এক কর্মী ‘মৃত্যুশয্যায়’ বলেও মাইকে প্রচার করা হয়।

এ সময় কামাল পাশার নেতৃত্বাধীন অংশের কর্মীরা চেয়ার ও লাঠিসোটা নিয়ে ইমরান নেতৃত্বাধীন অংশের কর্মীদের ধাওয়া করে।

এতে উভয় পক্ষের হাতাহাতি এবং চেয়ার ছোড়াছুড়ির এক পর্যায়ে কামাল পাশা অংশের মেহেদী নামে একজন আহত হন। পরে তাকেও হাসপাতালে নেয়া হয়।

মাইকে এক কর্মীর গুরুতর আহত হওয়ার কথা বলার পরেও সেদিকে নজর না দেয়ায় উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের দিকে লাঠিসোটা নিয়ে তেড়ে যান কামাল পাশার কয়েকজন অনুসারী।

ইমরানসহ আহতদের হাসপাতালে নেয়ার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।

 

সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি

এর আগে সমাবেশের বক্তব্য শেষে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেন ইমরান এইচ সরকার।

তিনি জানান, শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় শাহবাগে মশাল মিছিল, রোববার বিকাল ৪টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সোমবার ৪টায় মুক্ত আলোচনা, মঙ্গলবার স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠান, বুধবার প্রতিবাদী গান ও কবিতা, বৃহস্পতিবার মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হবে।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলের রায় হয় বুধবার, যাতে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়।

ওই রায় প্রত্যাখ্যান করে সাঈদীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বুধবার দুপুরে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে ইমরান নেতৃত্বাধীন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের ছোড়া গরম জল ও কাঁদুনে গ্যাসে ইমরানসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। পরদিন সন্ধ্যায়ও শাহবাগ এলাকায় মিছিল বের করলে তাদের বাধা দেয় পুলিশ।

তবে বুধবার আপিল বিভাগ সাঈদীর রায় ঘোষণার পর কামাল পাশা নেতৃত্বাধীন অংশ একই দাবিতে শাহবাগে বিক্ষোভ করলেও তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়নি।

পরদিন সাঈদীর ফাঁসির দাবিতে শাহবাগ এলাকায় বিক্ষোভ করে শাহবাগ আন্দোলন। সরকারের শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টি সমর্থিত ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি বাপ্পাদিত্য নেতৃত্বাধীন এই অংশের মিছিলেও বাধা দেয়নি পুলিশ।