“স্বামী হারাইয়া এহন কী পাইলাম”

যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলের রায়ে সাজা কমায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন ‘দুর্বৃত্তের’ হামলায় নিহত সাক্ষী মোস্তফা হাওলাদারের স্ত্রী ও স্বজনরা।

পিরোজপুর প্রতিনিধিএস এম পারভেজ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Sept 2014, 12:52 PM
Updated : 19 Sept 2014, 07:16 PM

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাঈদীর বিরুদ্ধে অষ্টম সাক্ষী ছিলেন মোস্তফা হাওলাদার। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর রাতে নিজ বাড়িতে হামলায় মোস্তফা নিহত হন। তার পরিবারের কয়েকজন সদস্য এখনও রয়েছেন পুলিশের নিরাপত্তা হেফাজতে।

জামায়াতের নায়েবে আমির সাঈদীর ফাঁসির রায় কমিয়ে আপিল বিভাগ আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়ার পর শুক্রবার পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলার উমেদপুর গ্রামে মোস্তফা হাওলাদারের বাড়িতে তার স্ত্রী ও স্বজনদের সঙ্গে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধির কথা হয়। 

মোস্তফার স্ত্রী হাসিনা বেগম বলেন, “সাঈদীর ফাঁসির পরিবর্তে আমারে এহন ফাঁসিতে ঝুলাইয়া মারলেও মোর আর কোনো দুঃখ থাকবে না, স্বামীকে হারাইয়া এহন আমি কী পাইলাম?

“ছেলেমেয়েদের না পারি পড়ার খরচ যোগাইতে, না পারি ঈদে নতুন জামা কাপড় কিন্যা দিতে, ভালমন্দ ঠিকমত খাইতেও দিতে পারি না। অষ্টম শ্রেণি পাশ ছোড ছেলে হাফিজুলের চাকরির জন্যে বড় বড় স্যারদেরও এত কইলাম কিন্তু কেউ মোর ছেলেডারে এট্টা চাকরি বাকরি দেল না।”

এ সময় মোস্তফার শতবর্ষী বৃদ্ধা মা আয়কুল বেগম, স্ত্রী হাসিনা বেগম, মেঝ মেয়ে লীজা বেগম ও অষ্টম শ্রোণি পড়ুয়া মেয়ে সোনিয়া আক্তার কান্না করছিলেন।

হাসিনা বেগম জানান, তার স্বামীকে হত্যার পর দিনেরাতে পালাক্রমে পাঁচ জন পুলিশ প্রহরার মধ্যেও কয়েক মাস আগে সন্ত্রাসীরা রাতে বাড়ি এসে দরজায় কোপ দিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় তারা দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। মাঝেমধ্যে মোবাইল ফোনেও হুমকি দেয়।

জিয়ানগর থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গত বছরের ৭ ডিসেম্বর রাত দেড়টার দিকে সন্ত্রাসীরা সিঁদ কেটে ঘরে ঢুকে মোস্তফার মাথায় ভারি বস্তু দিয়ে আঘাত করে দুর্বৃত্তরা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুদিন পর মোস্তফার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় মোস্তফার ছোট ভাই আ. মজিদ হাওলাদার বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় লোকজনদের বিরুদ্ধে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর জিয়ানগর থানায় মামলা করেন।

এ মামলায় আট জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও তারা সবাই এখন জামিনে রয়েছে।

এরা হলেন মোসলেম বয়াতি (৫০), ওবায়দুল্লাহ (২৭), বনি ইয়ামিন ফকির (৬০), আ. বারেক মুন্সি (৫০), শফিকুল ইসলাম (৩২), রবিউল ইসলাম (১৭), আ. রহিম হাওলাদার (৩৭) ও সোহাগ হাওলাদার (২০)।

পরে মামলাটি সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয় বলে জানান ওসি।

তিনি আরো জানান, সাঈদীর রায় ঘোষণার আগে নিহত মোস্তফার ছোট ছেলে হাফিজুল ও মামলার বাদী মাহাবুবুল আলমসহ ১০ জন সাক্ষীকে বিশেষ পুলিশী সুরক্ষার জন্য স্থানীয় পুলিশ লাইনসে আনা হয়েছে।

সিআইডির উপ-পরিদর্শক সরদার ইউনুস আলী জানান, মামলার তদন্ত কাজ ও আসামি গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

যুদ্ধাপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীর ফাঁসির রায় দেয়। গত বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ডের বদলে আমৃত্যু কারাবাসের রায় দেয়।