ইইউ পার্লামেন্টের প্রস্তাব অনভিপ্রেত ও অজ্ঞতাপ্রসূত: ইনু

ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ‘ভুল তথ্য দ্বারা পরিচালিত’ হয়ে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সমালোচনা করছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Sept 2014, 12:39 PM
Updated : 19 Sept 2014, 07:28 PM

তিনি বলেছেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্টে পাস হওয়া ওই প্রস্তাব ‘অনভিপ্রেত ও অজ্ঞতাপ্রসূত’।

বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে পাস হওয়া ওই প্রস্তাবে ‘দায়মুক্তির সুযোগ নিয়ে’ র‌্যাব মানবাধিকারের লঙ্ঘন ঘটাচ্ছে দাবি করে তা বন্ধ করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় ইউরোপীয় পার্লামেন্ট।

শুক্রবার নিজের নির্বাচনী এলাকা কুষ্টিয়া সফরে গিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এই প্রস্তাব নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জাসদ সভাপতি ইনু।

তিনি বলেন, “র‌্যাবের দায়মুক্তি দেয়ার কোনো বিধানই নাই।  সুতরাং ইউরোপীয় পার্লামেন্ট যে ভুল তথ্য দ্বারা পরিচালিত হয়েছে- এই ঘটনার ওপর আমি বলে দিচ্ছি।”

ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ‘র‌্যাবের আইনই পড়ে দেখেনি’ মন্তব্য করে ইনু বলেন, গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’ পরিচালনার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সংসদে ওই অভিযানে নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর কার্যকলাপের দায়মুক্তি দেন।

“আর শেখ হাসিনার সরকার দায়মুক্তির বিধান খারিজ করেছে। আমরা মনে করি, দায়মুক্তির যত বিধান আছে তা অগণতান্ত্রিক। র‌্যাবের দায়মুক্তি দেয়ার পরিকল্পনা আমাদের নেই।

“এ অবস্থায় ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রস্তাবটি অনভিপ্রেত ও অজ্ঞতাপ্রসূত। এটি ক্ষতিকর প্রস্তাব।”

বাংলাদেশ সম্পর্কে মন্তব্য করার আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতি পরামর্শ দেন তথ্যমন্ত্রী।

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর পার্লামেন্টে পাস হওয়া ওই প্রস্তাবে বাংলাদেশের জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার বিষয়টি তুলে ধরে ‘ভিন্নমত দমনের কোনো চেষ্টা’ না চালাতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

এর সমালোচনা করে ইনু বলেন, “অন্য দেশের পার্লামেন্টে বাংলাদেশের সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ে মন্তব্য করাটা দুঃখজনক। তবে সম্প্রচার নীতিমালা আমাদের সংবিধানের সঙ্গে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সঙ্গে এবং গণমাধ্যমের কর্মীর সংবাদ প্রবাহের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এখানে কণ্ঠরোধ করার কোনো শব্দ পর্যন্ত নাই।”

যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলের রায়ের ব্যাপারে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “যে রায় (এসেছে) সে রায়ে আমরা অসন্তুষ্ট, ক্ষুব্ধ।  কিন্তু এ রায়ের মধ্য দিয়ে আমরা দেখেছি, সাঈদী যতোই ধর্মের আলখেল্লা পরুক না কেন, আদালতের রায় প্রমাণ করল- তিনি খুনি, নারী নির্যাতনকারী এবং যুদ্ধাপরাধী।

যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নীরবতারও সমালোচনা করেন  এই ক্ষমতাসীন নেতা।

তিনি বলেন, “নীরবতা পালন করার মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়া প্রমাণ করলেন, উনি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্রধান পৃষ্ঠপোষক, উনি মনঃক্ষুণ্ন। নীরবতার মাধ্যমে তিনি সমবেদনা জ্ঞাপন করলেন।”

সন্ত্রাসী হামলায় আহত সাংবাদিক ফারুক আহমেদ পিনুকে দেখতে দুপুরে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে যান তথ্যমন্ত্রী।

এনটিভির কুষ্টিয়া করেসপন্ডেন্ট পিনুর ওপর হামলার সমালোচনা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “খোঁজখবর নিয়েছি। হামলায় জড়িতদের মোটামুটি সনাক্ত করা গেছে।  তবে প্রকৃত আসামিরা যাতে গ্রেপ্তার হয় এবং তারা যেন শাস্তি পায়- এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।”

পিনুর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে এ সময় স্থানীয় সাংবাদিকদের পাঁচটি সংগঠনের পক্ষ থেকে তথ্যমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়।  

জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন, পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম, সদর হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আজিজুন নাহার, জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন ও হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।