সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের নেতৃত্বে সফিউল্লাহ

এ কে খন্দকারের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল কে এম সফিউল্লাহকে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম ‘মুক্তিযুদ্ধ’৭১ এর চেয়ারম্যান করা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Sept 2014, 10:40 AM
Updated : 19 Sept 2014, 02:31 PM

শুক্রবার ফোরামের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে এর নির্বাহী সদস্য তুষার আমিন জানান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এ কে খন্দকার সাহেবের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছে ফোরাম। পাশাপাশি তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।

“শুক্রবারের সভায় সর্বসম্মতভাবে কে এম সফিউল্লাহকে চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়েছে।”

১৯৭১ সালে সফিউল্লাহ ছিলেন জয়দেবপুরে দ্বিতীয় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের দ্বিতীয় প্রধান। তার নেতৃত্বেই ওই রেজিমেন্টের বাঙালি সৈন্যরা বিদ্রোহ করে।

মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে সফিউল্লাহ ছিলেন ৩ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার। পরে তিনটি নিয়মিত আর্মি ব্রিগেড (ফোর্স নামে পরিচিত) গঠিত হলে ‘এস’ ফোর্সের নেতৃত্বে আসেন সফিউল্লাহ। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ‘বীর উত্তম’ খেতাব পান।

১৯৩৪ সালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জন্ম নেয়া কে এম সফিউল্লাহ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। পরে মালয়েশিয়া, কানাডা, সুইডেন, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগে মনোনয়নে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলনকে বেগবান করতে মুক্তিযুদ্ধের জীবিত সেক্টর কমান্ডাদের নিয়ে ২০০৭ সালে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম গঠিত হলে অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল একে খন্দকারকে এর প্রধান করা হয়। আর সফিউল্লাহ ছিলেন সংগঠনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য।

নিজের সদ্য প্রকাশিত বই ‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’ নিয়ে তুমুল বিতর্কের মধ্যে গত ১৭ সেপ্টেম্বর ফোরামের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন এ কে খন্দকার।

পদত্যাগের পরও খন্দকারকে বহিষ্কার এবং নোটিস দেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তুষার আমিন বলেন, “উনি দেশের সংবিধান পরিপন্থী কথা বলেছেন, প্রক্লেমেশন অব ইন্ডিপেন্ডেন্স না মেনে সংবিধান লঙ্ঘন করে ২৬ মার্চকে অস্বীকার করেছেন। এ কারণে তিন বিষয়ে জবাব দিতে কারণ দর্শাও নোটিস দেয়া হয়েছে।”

ফোরামের এই নির্বাহী সদস্য বলেন, “উনার (খন্দকার) পদত্যাগপত্র শো-কজসহ গৃহীত হয়েছে, যা বহিষ্কারের শামিল। ইতোমধ্যে ফ্যাক্সে কারণ দর্শানোর নোটিস তার কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।”

ফোরামের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হারুন হাবীব স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “ওই বইয়ের মাধ্যমে এ কে খন্দকার বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধান ও স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্রসহ মুক্তিযুদ্ধের সুপ্রতিষ্ঠিত মৌল ঘটনাবলীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন; ফোরামের গঠনতন্ত্রের বিভিন্ন ধারা ও নীতি-আদর্শের বিরুদ্ধাচারণ করেছেন এবং  বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী দেশিবিদেশি চক্রকে ইন্ধন জুগিয়েছেন।”

এ তিন বিষয়েই তার কাছে জবাব চাওয়া হয়েছে বলে তুষার আমিন জানান। 

এ কে খন্দকারকে বহিষ্কারের কারণ ব্যাখ্যা করে ফোরামের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করে এ কে খন্দকার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনানির্ভর সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের মতো একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দেওয়ার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি ফোরামে তার পদত্যাগপত্র পেশ করলেও তাতে বইটি সম্পর্কে একটি শব্দও লেখেননি।

“তার এসব কার্যাবলী সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি এবং গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অপসারণ ও বহিস্কারযোগ্য অপরাধ বলে মত দিয়েছে ফোরাম।”

পদত্যাপত্র বিবেচনায় এনে এ কে খন্দকারকে ফোরামের সদস্যপদসহ সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

প্রথমা থেকে প্রকাশিত ওই বইয়ে এ কে খন্দকার লিখেছেন, ৭ মার্চের ভাষণ ‘জয় পাকিস্তান’ বলে শেষ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধের জন্য আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি ছিল না বলেও লেখেন তিনি।

সভায় এ নিয়ে আলোচনার উদ্ধৃতি দিয়ে তুষার বলেন, “সভায় বলা হয়েছে- বইয়ের একটা কথাও উনার নিজের না। উনি সমর যোদ্ধা ছিলেন না। ডেপুটি চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আর উনি ২১ বছর ছিলেন পাকিস্তানে, দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে উনার ধারণা নেই।

“বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ ভাষণ সম্পর্কে উনি লিখেছেন- কিন্তু উনাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ওই দিন কোথায় ছিলেন। উনি জানিয়েছেন-৭ মার্চ ভাষণ শোনেননি, ৮ মার্চ শুনেছিলেন পাকিস্তান রেডিওতে। অথচ পাকিস্তান রেডিও ভাষণটি পুরো প্রচারও করেনি।”

ফোরামের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “যে প্রকাশনা সংস্থা এবং যাদের হাতে সম্পাদিত হয়ে বহুল বিতর্কিত বইটি বাজারজাত করা হয়েছে তারাও পরিকল্পিত ইতিহাস বিকৃতির দায়ভার এড়াতে পারেন না।”

ফোরামের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান আবু ওসমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুক্রবার কার্যনির্বাহী পরিষদের এ সভা হয়।

অন্যদের মধ্যে মেজর জেনারেল (অব.) কে এম সফিউল্লাহ বীর উত্তম, কর্নেল (অব.) সামসুল আলম, ডা. সারওয়ার আলী, হারুন হাবীব, ম. হামিদ, মো. নুরুল আলম, মেজর জেনারেল (অব.) শাহজাহান, আনোয়ারুল আলম শহীদ, মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন আহমেদ, ফারজানা শাহনাজ মজিদ, মোহা. আব্দুল হাই, অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ পাটোয়ারী, অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান শওকত, সৈয়দ দিদারুল আলম, ড. মমতাজউদ্দিন পাটোয়ারী, শাহজাহান মৃধা বেনু, নুরুল আনোয়ার, সদরুজ্জামান হেলাল বীর প্রতীক, সাঈদুজ্জামান তারা, মোশাররফ হোসেন, ডা. এম এস এ মনসুর আহমেদ ও তুষার আমীন সভায় বক্তব্য দেন।