‘ওদের ক্ষমতা নেই, লোভ আছে’

টেলিভিশন টকশোতে সরকারের সমালোচনাকারীদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাদের কোনো ক্ষমতা না থাকলেও ক্ষমতায় যাওয়ার ‘লোভ’ আছে।

রিয়াজুল বাশারটুঙ্গীপাড়া থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Sept 2014, 08:44 AM
Updated : 19 Sept 2014, 01:00 PM

শুক্রবার টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি কমপ্লেক্সে এক সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, “কিছু লোক আছে তাদের কোনো কিছুই ভাল লাগে না। সব কিছুতে ‘কিন্তু’ খোঁজে। তারা এসি রুমে বসে শুধু সমালোচনা করে। তাদের কোনো যোগ্যতা নেই দেশ পরিচালনা করার ও জনগণের পাশে দাঁড়ানোর।

“তবে এদের ক্ষমতায় যাওয়ার লোভ আছে। তারা পরাজিত শক্তি ইয়াহিয়ার প্রেতাত্মা এবং পা লেহনকারী।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সবার আগে আমরাই দিয়েছিলাম এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ আমরাই দিয়েছি। তারা আমাদেরই বেশি সমালোচনা করে।”

সকাল সোয়া ১০টার দিকে হেলিকপ্টারে টুঙ্গীপাড়া পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাতটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তিনি।

এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- টুঙ্গীপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলার ১২ হাজার পরিবারের বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান, টুঙ্গীপাড়া পাঁচ এমভিএ বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র, টুঙ্গীপাড়া উপজেলা পরিষদ ভবনে স্থাপিত ৩০ কিলোওয়াট সোলার প্যানেল, কোটালীপাড়া উপজেলাধীন রাজাপুর খেয়াঘাট-জহরেরকান্দি সড়কে ৩৯ মিটার গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ।

এছাড়া কোটালীপাড়া উপজেলাধীন পূর্ব লাটেঙ্গা-পশ্চিম লাটেঙ্গা সড়কে ভাঙ্গারহাট খালের উপর ১৭ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, কোটালীপাড়া উপজেলাধীন বান্ধাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ-ভাই ভাই বাজার সড়কের ৩০ মিটারের বেশি আরসিসি গার্ডার ব্রিজ এবং টুঙ্গিপাড়া উপজেলা সোনালী ব্যাংকের নিজস্ব ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

পরে সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি পদ্মা সেতু নিয়েও কথা বলেন।

বিশ্বব্যাংকের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, “পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের অপবাদ দেয়া হয়েছিল, আমরা প্রতিবাদ দিয়েছি, চ্যালেঞ্জ করেছি। প্রমাণ হয়েছে সেখানে কোনো দুর্নীতি হয় নাই।”

এর পেছনে ‘অন্য ষড়যন্ত্র ছিল’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা অপবাদ দেবে তাদের টাকা দেয়ার দরকার নেই, নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করছি।”

শেখ হাসিনা জানান, পদ্মায় নদী শাসন ও মূল সেতু নির্মাণের কাজ একসঙ্গে শুরু হবে; শেষ হবে ২০১৮ সালের মধ্যে।

খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষি উপকরণ সরবরাহে উন্নতি, মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনামূল্যে বই সরবরাহ, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন খাতে শিক্ষার্থীদের বৃত্তিসহ শিক্ষাখাতের নানা উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্যসহ দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথাও এ সময় তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, “মানুষকে নিজের পায়ে দাঁড় করার জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, প্রতিটি উপজেলায় প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট করে দিচ্ছি।”

দেশে দারিদ্র্যের হার ২৫ শতাংশে নেমে আসার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দারিদ্র্যের হার আরও কমাব। বাংলাদেশ একটা জায়গায় দাঁড়িয়েছে, এখান থেকে কেউ সরাতে পারবে না।”

প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা আবারো তুলে ধরেন তিনি।

“সারা বাংলাদেশে প্রত্যেকটা ঘরে ঘরে আমরা আলো জ্বালাব।”

দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কথাও প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, পায়রা বন্দর, নৌ ঘাঁটি এবং বিদ্যুতকেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে; নদী খনন করা হচ্ছে।

“আগে পদ্মার এ পাড়ে আসলে হাহাকার দেখা যেত। সেটা এখন দূর হয়েছে। উত্তরবঙ্গ থেকে মঙ্গা দূর হয়েছে।”

দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াব।”

গ্রামের মানুষের আবাসনের জন্য সরকারের উদ্যোগের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শহরের মানুষ যদি ফ্ল্যাটে থাকে তাহলে গ্রামের মানুষের দোষ কী? সেখানেও ফ্ল্যাট হবে।”

এসব ফ্ল্যাটে মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা ছাড়াও গবাদিপশু, হাঁসমুরগি পালন ও ফসল রাখার ব্যবস্থা থাকবে বলে জানান তিনি।

বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তখন বিদ্যুত-গ্যাসের উৎপাদন কমিয়ে দেয়া হয়, কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ ছিল। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর সাক্ষরতার হার আমরা যেখানে নিয়ে গিয়েছিলাম, ২০০১ এর পর সেখান থেকে নিচে নেমে আসে।

“তথন শুধু জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটিয়েছে। লুটপাট সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ ছাড়া কিছুই জানে না”, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ফারুক খান, নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকিসহ নেতাকর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

টুঙ্গীপাড়ার কর্মসূচি শেষে বিকালে হেলিকপ্টারে ঢাকা পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী।