‘অপরাধী প্রমাণের ভার বিচারকদের নয়’

রায় নিয়ে সমালোচনায় স্পষ্টত উষ্মা প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মনে করিয়ে দিয়েছে, আদালতে উত্থাপিত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই তাদের বিচার করতে হয় এবং তা জোগাড়ের দায়িত্ব তদন্ত কর্মকর্তা ও আইনজীবীদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Sept 2014, 01:35 PM
Updated : 18 Sept 2014, 01:36 PM

যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলের রায়ে মৃত্যুদণ্ডের সাজা আমৃত্যু কারাদণ্ডে নেমে আসার পর তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার আরেকটি মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের এক পর্যায়ে তিনি বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ না করার আহ্বানও জানান।

উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বৃহস্পতিবার আজহারের মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রেখেছে ট্রাইব্যুনাল। আজহারের দলের নায়েবে আমির সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। একদিন আগেই আপিলের রায়ে সাঈদীর সাজা কমে আসে। 

ট্রাইব্যুনালে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের এক পর্যায়ে প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেন, “৭১ সালে রংপুরে যেসব অপরাধ সংগঠিত হয়েছে, তার নেতৃত্বে থাকায় সুপিরিয়র রিসপনসিবিলিটি আজহারের উপর বর্তায়। এসব অপরাধে তার দায় (লায়াবিলিটি) প্রমাণসাপেক্ষে তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি দিবেন, এ আশা করছি।”

তখন বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, “আপনারা মামলার তদন্ত ঠিকমতো করবেন না; সাক্ষ্যগ্রহণ, প্রমাণাদি ঠিকমতো না দিয়ে প্রমাণ করার ভার আমাদের উপর চাপিয়ে দিবেন। ফৌজদারি মামলায় আসামিকে অপরাধী প্রমাণের ভার তো বিচারকদের না, এটা প্রসিকিউশন ও তদন্তকারীর দায়িত্ব।”

সাঈদীর সাজা কমে যাওয়ার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সরাসরি তদন্ত সংস্থার গাফিলতিকে দায়ী করেছেন। সেইসঙ্গে প্রসিকিউটরদের দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। প্রসিকিউশন তথ্য প্রমাণ ঠিকমতো উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটিরও মত। 

রায় নিয়ে সমালোচনার বিষয়ে বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, “যে কোনো রায়ের পর বিচারপতিদের সমালোচনা করা হয়। বাংলাদেশের মতো এমন ফ্রি স্টাইলে বিচারপতিদেরকে নিয়ে সমালোচনা পৃথিবীর অন্য কোথাও হয় না। বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করা কারো জন্যই মঙ্গল নয়।

“আমাদের ভুল থাকতে পারে। এজন্য আপিল বিভাগ আছে, রিভিউ আছে। কিন্তু এভাবে সমালোচনা করে আদালতকে প্রশ্নবিদ্ধ করলে আমরা যাব কোথায়? এভাবে তো জুডিশিয়ারি টিকবে না।”

ট্রাইব্যুনাল এই সমালোচনার বিষয়ে প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজের বক্তব্য শুনতে চাইলে তিনি বলেন, “বিচারপতিদেরকে নিয়ে সমালোচনা কখনোই কাম্য নয়। বিচারের পর আমাদেরকে নিয়েও সমালোচনা করা হয়। আমাদেরও বিচার করার কথা বলা হয়। আমরা কোথায় যাব?

“আমরা আজহারের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। তাই আদালতের কাছে তার সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করছি।”

এসময় ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “ফৌজদারি মামলায় এক সঙ্গে দুই পক্ষকে সন্তুষ্ট করে রায় দেওয়া সম্ভব নয়। দেওয়ানি মামলা হলে না হয়, উভয়কে সমঝোতা করে রায় দেওয়া যায়।

“ফৌজদারি মামলায় একপক্ষকে খালাস অথবা শাস্তি দিতে হবে। খালাস দিলে প্রসিকিউশন কষ্ট পায়, আবার শাস্তি দিলে আসামিপক্ষ কষ্ট পায়।”

এই পর্যায়ে সাঈদীর মামলায় আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের দিকে ইঙ্গিত করে আজহারের আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার বলেন, “মাঝামাঝি দেওয়ার তো সুযোগ আছে।”

এর জবাবে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, “যেটা দেওয়া হয়েছে, সেটাও শাস্তি। মাঝামাঝি রায় বলে কিছু নেই।”