প্রসিকিউশনে বদল চান ‘মর্মাহত’ আইনমন্ত্রী

যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলের রায়ে সাজা কমায় ‘মর্মাহত’ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে পরিবর্তন চেয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Sept 2014, 08:47 AM
Updated : 17 Sept 2014, 02:43 PM

বুধবার রায়ের পর নিজের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমি একজন ব্যক্তি, সরকারের সদস্য ও নাগরিক হিসাবে সর্বোচ্চ আদালতের যে কোনো আদেশ ও রায়ের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে মানবতাবিরোধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি আমরা আশা করি, সেটা না হওয়ায় আমি মর্মাহত।”

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড হলেও আপিলের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বুধবার জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়।

আইনমন্ত্রী বলেন, “যেটা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে.. আমি শুনেছি তিনি পিস কমিটির মেম্বার ছিলেন এবং এ বিষয়ে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে। স্বেচ্ছায় যারা পিস কমিটির মেম্বার হয়েছিলেন তারাতো সচেতনভাবেই স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন।”

এ মামলার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের কোনো দুর্বলতা ছিল কি না জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, “আমি রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি না দেখে কাউকে দোষারোপ করতে চাই না। তবে প্রসিকিউশন টিমের যা অবস্থা, সেখানে পরিবর্তন আসা উচিৎ।”

ফাইল ছবি

মন্ত্রী বলেন, “ট্রাইব্যুনালে কিছু কিছু মামলা চলছে, কিছু রায় অপেক্ষমাণ আছে। প্রসিকিউশন টিমের যেন কোনো অসুবিধা না হয় এজন্য আমি কোনো পরিবর্তন আনিনি। তবে দ্রুত এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।”

এই মামলায় সাঈদী ও রাষ্ট্রপক্ষের দুটি আপিল ছিল। আদালত উভয়টির আংশিক মঞ্জুর করে।

রায়ে ১০, ১৬, ১৯ নম্বর অভিযোগে জামায়াতের এই নায়েবে আমিরকে আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। আর ৮ নম্বর অভিযোগের একাংশের জন্য সাঈদীকে ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৭ নম্বরের জন্য ১০ বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেয় আপিল বিভাগ।

৮ নম্বর অভিযোগের অপর অংশসহ ৬, ১১ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে।

এর মধ্যে ৮ ও ১০ নম্বর অভিযোগে ইব্রাহিম কুট্টি ও বিসাবালীকে হত্যা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে আগুন দেয়ার দুটি অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একাত্তরের রাজাকার সাঈদীর ফাঁসির রায় দিয়েছিল।

আপিল বিভাগের এই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হবে কি না জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, “আগামীতে রিভিউ করতে পারা যাবে কি না তা রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার আগ পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না। কারণ আব্দুল কাদের মোল্লার রায় রিভিউ করার জন্য আসামিপক্ষ আবেদন করেছিল। তার পুরো রায় এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।”

সকালে রায় ঘোষণার পরপরই তা প্রত্যাখ্যান করে শাহবাগে বিক্ষোভ শুরু করে গণজাগরণ মঞ্চ। তাদের অভিযোগ, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আঁতাত করে সরকার এই রায় দিয়েছে।

এ অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, “প্রশ্নই আসে না। সমঝোতার ‘স’ ও হয়নি। মানবতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী, জামায়াত শিবিরের টেরোরিস্টদের সঙ্গে সমঝোতার কোনো অবকাশ নেই।

‘রায় গ্রহণ করতে হয়’

ট্রাইব্যুনালে এই রায় ঘোষণার সময় সরকারের আইনমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগের ব্যারিস্টার শফিক আহমদ।

সাঈদীর আপিলের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “সর্বোচ্চ আদালত সব কিছু বিচার বিশ্লেষণ করে রায় দেয়। আদালত সেই চূড়ান্ত রায় দিয়েছে। রায় পছন্দ হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। কিন্তু সব রায়ই আমাদের গ্রহণ করতে হয়, গ্রহণ করতে হবে।”