আঞ্চলিক সংযোগ বিদেশি বিনিয়োগে সুফল আনবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রতিবেশী বড় অর্থনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের ‘কৌশলগত সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক মূল্য সংযোগ চেইনে’ সংযুক্তি এখানে বিদেশি বিনিয়োগকে ফলপ্রসূ করবে বলে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Sept 2014, 06:56 AM
Updated : 17 Sept 2014, 07:00 AM

সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে রাজধানীতে বিনিয়োগ বোর্ড আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এই মন্তব্য করে বলেন, “সুনীল অর্থনীতি সমুদ্র সম্পদ ব্যবহারের অসীম সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করেছে। আমরা কৌশলগত সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক মূল্য সংযোগ চেইনে কয়েকটি বড় অর্থনীতির সাথে কাজ শুরু করেছি। এটাই আগামী দিনের উন্নয়নের সোপান বলে আমি মনে করি।

“সমন্বিত উৎপাদন পদ্ধতি এবং পারস্পরিক প্রবৃদ্ধি মডেল বাস্তবায়নের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সব দেশই লাভবান হবে।”

রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টরস ফোরাম বাংলাদেশের’ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছিলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমি বঙ্গোপসাগর প্রবৃদ্ধি ত্রিভুজের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেই। এই প্রবৃদ্ধি ত্রিভুজ চীন ও জাপানসহ আমাদের দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশীদের সাথে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে অনুঘটকের কাজ করতে পারে।

“আমাদের বাণিজ্য প্রত্যাশাগুলো সরাসরি সমুদ্রের সাথে সম্পৃক্ত। ভারত ও মিয়ানমারের সাথে অচিহ্নিত সমুদ্রসীমা ছিল আমাদের বড় ধরনের উন্নয়ন বাধা। বর্তমান সরকারের উদ্যোগে আমাদের প্রতিবেশীদের সাথে এ বিষয়ে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সমাধান হয়েছে এবং সবাই তাদের প্রযোজ্য অংশ পেয়েছে।”

এসময় বিদেশিদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

“আমাদের সরকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিনিয়োগ আকর্ষণকে আরও বিনিয়োগ বান্ধব ও সহজতর করতে বদ্ধপরিকর। আমি আহ্বান জানাচ্ছি, বাংলাদেশকে বিনিয়োগের জন্য আপনারা বেছে নেবেন।

“আমরা বিনিয়োগ আকর্ষণে কি কি সুযোগ সুবিধা দিচ্ছি তা প্রত্যক্ষভাবে যাচাই করার জন্য আমি আপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।”

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মত দক্ষিণ এশীয় দেশগুলো বৈশ্বিক উন্নয়নের ধারণাগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে অর্থনৈতিক সংস্কার করছে। প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

“বাংলাদেশে বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্বখ্যাত সংস্থা গোল্ডম্যান স্যাকস একবিংশ শতাব্দীতে যে ১১টি দেশ বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।”

এসময় বাংলাদেশের অগ্রগতিও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “গত পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশের সার্বভৌম ঋণমান স্থিতিশীল রয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি গত পাঁচ বছর ধরে গড়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। আমরা ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি। প্রণোদনামূলক বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছি।”

এসময় বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা, বড় বিনিয়োগের মাধ্যমে ভৌত অবকাঠামোর কথা উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা ইতোমধ্যেই পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়টি চূড়ান্ত করেছি। আরও ১৩টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশের আটটি ইপিজেডে প্রায় ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে।”

দেশের ব্যক্তিখাতের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা ও সেগুলো সমাধান করা হচ্ছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান এস এ সামাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ী ও অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠানের কর্তারা।

প্রায় ২০টি দেশের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বিনিয়োগ বোর্ড।