উপমন্ত্রী জয়ের ‘বিবৃতি’ নিয়ে সংসদে হাস্যরস

মন্ত্রণালয় নিয়ে মন্ত্রীদের নির্ধারিত বিধিতে বিবৃতি দিতে দাঁড়িয়ে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে সংসদে হাস্যরসের সৃষ্টি করলেন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Sept 2014, 04:32 PM
Updated : 17 Sept 2014, 06:16 AM

মঙ্গলবার দিনের কার্যসূচির শেষভাগে আইন প্রণয়ন শেষ করে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া উপমন্ত্রী ও জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক জয়কে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দেয়ার সুযোগ দেন।

তরুণ এ উপমন্ত্রী বিবৃতি শুরু করেন বঙ্গবন্ধু ও দেশ মাতৃকার জন্যে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনায়।

ডেপুটি স্পিকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলতে থাকেন, “গত বাজেট অধিবেশনে বক্তৃতা দেয়ার সময় আপনি আমাকে সময় বাড়িয়ে দিয়েছিলেন- এজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আজও আপনিই অধিবেশনে রয়েছেন। ...সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল আগামীকাল সংসদে উঠবে। বিলটি বাহাত্তরের চেতনায় ফিরে যাওয়ার জন্যে...।”

কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী ৩০০ বিধিতে শুধু মন্ত্রীরা তাদের মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে বিবৃতি তুলে ধরতে পারেন। বিবৃতি দেয়ার আগে এর বিষয় সম্পর্কে স্পিকারকে অবহিতও করতে হয়।

ফাইল ছবি

কিন্তু জয়ের অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য শুনে অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত সাংসদের অনেকেই অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন। কয়েকজনকে দেখা যায় মুখে প্রশ্ন নিয়ে একে অন্যের দিকে তাকাতে।

হুইপ শহীদুজ্জামান সরকারকে উপমন্ত্রীর দিকে কিছুটা বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায়। অবশ্য সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় অধিবেশন কক্ষে ছিলেন না।

ডেপুটি স্পিকার এক পর্যায়ে উপমন্ত্রী জয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “আগামীকাল [ষোড়শ সংশোধন] বিলটি সংসদে পাস হবে। এ বিষয়ে আজকে কথা না বলাই সমীচীন। আপনাকে নিবৃত্ত থাকার অনুরোধ করছি। আপনি আপনার মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে বিবৃতি দিতে পারেন।”

জয় তখন বলতে থাকেন, “আমার বিবৃতিটি লেখা নয়। সংসদের শিষ্টাচার ও কার্যপ্রণালী বিধি মেনে আজ নিজের ভাবনা নিয়ে বিবৃতি দিচ্ছি। আমার ভাবনায় রয়েছে তা... ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে।”

তার এ বক্তব্য শুনে অধিবেশন কক্ষে হাসির রোল পড়ে যায়। তবে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিত, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, হুইপ আতিউর রহমান আতিকসহ অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা বিরক্তি নিয়ে তার দিকে তাকান।

জ্যেষ্ঠ একজন নেতা জয়কে উদ্দেশ্য করে বলেন, “কিছু লেখা রয়েছে? বিবৃতি দেয়ার কিছু না থাকলে বসে পড়।”

কিন্তু বিবৃতির জন্য প্রস্তুত না থাকায় পরিস্থিতি সামাল দিতে নিজের এলাকার জন্য কিছু বলার ফ্লোর খোঁজেন সাবেক এই ফুটবলার।

বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী অপর প্রান্ত থেকে বলেন, “আপনাদের হুইপরা কী করে? হুইপিং নেই?”

নৌ মন্ত্রী শাজাহান খান এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানও ইশারায় জয়কে বসতে বলেন।

এই পরিস্থিতির মধ্যেও উপমন্ত্রী বলতে থাকেন, “আমি আমার এলাকার জনগণের জন্য কিছু বলতে চাই। আমি একটা সুখবর দিতে চাই... আমি নতুন সাংসদ।”

এবার ডেপুটি স্পিকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে জয়কে উদ্দেশ্য করে বলেন, “মাননীয় উপমন্ত্রী, আপনি বসেন। আপনি মনে হয় প্রস্তুত নন। আপনি চাইলে পরে প্রস্তুতি নিয়ে ৩০০ বিধিতে আগামীকাল বা পরশু বিবৃতি দিতে পারেন।”

এরপর তিনি জয়ের মাইক বন্ধ করে দেন। ফ্লোর জুড়ে তখনো হাসির রেশ।

জয় আসন থেকে নেমে এলে কয়েকজন তাকে ঘিরে ধরেন। দৃশ্যত ‘বিব্রত’ জয় এ সময় সহকর্মীদের কিছু বোঝানোর চেষ্টা করেন।

সন্ধ্যা ৭টায় অধিবেশন মুলতবি করেন ডেপুটি স্পিকার।