ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি

ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি।

আহসান হাবীব নীলু কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Sept 2014, 03:32 PM
Updated : 16 Sept 2014, 03:32 PM

এ দাবিতে কমিটির বাংলাদেশ ইউনিট মঙ্গলবার দুপরে কুড়িগ্রাম শহরে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ করে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়।

এছাড়া দাসিয়ার ছড়া ছিটমহলে অবস্থিত ‘বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি’র প্রধান কার্যালয় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগকারীদের শাস্তিরও দাবি জানানো হয়।

দুপুরে কুড়িগ্রাম শহরের মজিদা আদর্শ কলেজ মাঠে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত দাসিয়ার ছড়াসহ ভারতীয় ১১১টি ছিটমহলের অন্তত এক হাজার বাসিন্দা সমবেত হন। তারা সবাই বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন।

বিক্ষোভ মিছিল শেষে জেলা প্রশাসক চত্বরে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি বাংলাদেশ ইউনিটের সভাপতি মইনুল হক, সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা খান, দাসিয়ার ছড়া ছিটমহল সমন্বয় কমিটির সভাপতি আলতাফ হোসেন প্রমুখ।

মইনুল হক বক্তব্যে বলেন, সম্প্রতি দাসিয়ার ছড়া ছিটমহল মাদক ও চোরাকারবারি মুক্ত ঘোষণা করা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চিহ্নিত চোরাকারবারি ও মাদক ব্যবসায়ী মিজানুর, হাবিবুর, ফারুক, খলিল, মোন্নাফ, কমির উল্যাহর নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত সোমবার ভোররাতে সমন্বয় কমিটির কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়।

এ সময় তারা বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় পতাকায় অগ্নিসংযোগ করে বলেও তিনি দাবি করেন।

সমাবেশে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।

গোলাম মোস্তফা খান বলেন, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের উপস্থিতিতে ঢাকায় স্থল সীমা নিয়ে একটি প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়। এর মাধ্যমে ১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির আওতায় ছিটমহল বিনিময় করবে দুদেশ।

এছাড়া দুই দেশের মধ্যে সাড়ে ৬ কিলোমিটার অচিহ্নিত সীমানা এবং অপদখলীয় ভুমি সমস্যারও সমাধান করা হবে এই প্রটোকলের আওতায়।

এরপরও নানা অজুহাতে ছিটমহল বিনিময় বিলম্বিত হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার জাতীয় সংসদে এ সংক্রান্ত বিল পাশ করলেও ভারত সরকার তা করতে পারেনি।

আগামী নভেম্বরে ভারত সরকার সংসদে বিলটি উত্থাপন করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, “আমাদের দাবি নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শেষে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নির্ধারিত বৈঠকে ছিটমহল বিনিময় বিষয়টি আলোচনায় স্থান পাবে। তাহলে আমরা দুদেশের ১৬২ ছিটমহলতাবাসী ৬৭ বছরের খাঁচায় বন্দি জীবন থেকে মুক্তি পাব।”

দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে সভায় জানানো হয়।

সভা শেষে ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়ন ও ছিটমহলের সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইমতিয়াজ হোসেনের হাতে হস্তান্তর করা হয়।

ছিটমহলের অবস্থান

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলার অভ্যন্তরে বাংলাদেশের কুড়িগ্রামের ১৮টি এবং লালমনিরহাটের ৩৩টি ছিটমহল রয়েছে। এগুলোর আয়তন প্রায় ১১০ দশমিক ২ একর।

অপরদিকে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে ভারতের কোচবিহার জেলার অধীনে ১১১টি ছিটমহল রয়েছে, যার আয়তন প্রায় ১৭ হাজার ১৫৮ দশমিক ৫ একর। এগুলোর মধ্যে রয়েছে কুড়িগ্রামে ১২টি, লালমনিরহাটে ৫৯টি, পঞ্চগড়ে ৩৬টি এবং নীলফামারী জেলায় ৪টি।

১৯৭৪ সালের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে যে ভারত-বাংলাদেশ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল তাতে এসব ছিটমহল বিনিময়ের বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল।

এই চুক্তির আলোকে এ বিষয়টি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে পাশ হলেও ভারতীয় পার্লামেন্টে তা এখনো পাশ না হওয়ায় এ বিরোধ রয়ে গেছে।

চুক্তি কার্যকর হলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশে এবং ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ভারতে একীভূত হবে।