রাজধানীসহ সারা দেশে আদালত, সরকারি দপ্তর, পেট্রোল পাম্পসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
রাজশাহী, ঝিনাইদহ, গাইবান্ধা, বগুড়া, ফেনী ও রংপুরে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে মঙ্গলবার রাত থেকেই। চট্টগ্রাম ও সিলেটেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিজিবি চাওয়া হয়েছে।
জামালপুর, পটুয়াখালী, বগুড়া, ফেনী, ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে জামায়াত-শিবিরের কয়েক ডজন নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর দেশজুড়ে জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীদের সহিংস তাণ্ডবের বিষয়টি মাথায় রেখেই এবার নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে।
গতবছরের ওই সহিংসতায় প্রাণ হারায় পুলিশসহ অর্ধশতাধিক। এছাড়া দুই শতাধিক আহত, বহু গাড়ি-দোকানপাট ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, হিন্দুদের মন্দির- ঘরবাড়ি ভাংচুর করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বুধবার সাঈদীর আপিলের রায় ঘোষণা করবে। আপিল বিভাগে দিনের কার্যতালিকার ১ নম্বরে রয়েছে এই রায়ের বিষয়টি।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রায়কে কেন্দ্র করে দেশের কোথাও যেন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড না ঘটে সে ব্যাপারে র্যাবকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
“আমরা প্রস্তুত আছি, সব ধরনের বিশৃঙ্খলারোধে, যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায়।”
কোন এলাকায় কতজন র্যাব সদস্য কাজ করছেন- নিরাপত্তার স্বার্থে তা বলতে রাজি হননি জিয়াউল আহসান। তবে ‘যথেষ্ট নিরাপত্তা’ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপ কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বলেন, “সাঈদীর রায়কে কন্দ্রে করে কেউ আইন ভাঙার চেষ্টা করলে কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না।”
এ ব্যাপারে পুলিশের সব ইউনিটকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সাঈদীর চূড়ান্ত রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নাশকতা রোধে চট্টগ্রামেও নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (সদর) মাসুদ উল হাসান জানান, নগরীর ১৬ থানার নিয়মিত ফোর্সের পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ এবং এবিপিএন মোতায়েন থাকবে।
এছাড়া ছয় প্লাটুন বিজিবি সদস্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
উপ-কমিশনার মাসুদ বলেন, “বুধবার ভোর থেকেই শহরের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশিচৌকি বসবে।”
গতবছর ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণার পর লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডে জামায়াতের সহিংসতায় পুলিশসহ সাতজন নিহত হন। আপিলের রায় ঘিরে এসব এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের সহকারী পুলিশ সুপার (সাতকানিয়া সার্কেল) একেএম এমরান ভূঁইয়া জানান, এসব এলাকায় নিয়মিত টহলের বাইরে অতিরিক্ত পুলিশ এবং বিজিবি মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে।
“সহিংসতাপ্রবণ এলাকাগুলোয় মঙ্গলবার রাত থেকে অভিযান ও তল্লাশি চালানো হবে।”
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার (গোয়েন্দা) নাইমুল হাসান জানিয়েছেন, সম্ভাব্য নাশকতা মোকাবেলায় জেলার প্রতিটি থানায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে রাজশাহী মহানগরীতে রাতেই ছয় প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
রাজশাহী বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল কেএম ফেরদাউসুল সাহাব বলেন, “বিজিবি সদস্যরা নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় টহল দিচ্ছেন। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত টহল চলবে।”
নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার সরদার তমিজ উদ্দিন বলেন, “নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতয়েন করা হয়েছে। স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।”