সংবিধান সংশোধন বিল পাস হচ্ছে বুধবার

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা আইন প্রণেতাদের হাতে ফিরিয়ে দিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন বিল বুধবার পাস হচ্ছে।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Sept 2014, 06:48 AM
Updated : 16 Sept 2014, 11:19 AM

এ সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশসহ বিলটি পাসের জন্য এদিন সংসদে ভোটাভুটির আয়োজন করা হয়েছে।

জাতীয় সংসদের হুইপ আতিউর রহমান আতিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সংবিধান সংশোধনের বিল কণ্ঠভোটের সঙ্গে সঙ্গে বিভক্তি ভোটের মাধ্যমে পাস করানোর বিধান রয়েছে। এ লক্ষ্যে ভোটের ব্যালটও তৈরি করা হয়েছে। সংসদ সদস্যরা কণ্ঠভোটে বিলটি পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দেয়ার পর লবিতে রাখা ব্যালটে স্বাক্ষরের মাধ্যমেও ভোট দিবেন।

বিএনপিবিহীন দশম সংসদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার পাশাপাশি বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও সমর্থন জানানোয় বিলটি পাস হওয়া নিয়ে সংশয় থাকছে না।

গত ৭ সেপ্টেম্বর ‘সংবিধান (ষোড়শ সংশোধন) বিল-২০১৪’ সংসদে উত্থাপনের পর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য এক সপ্তাহ সময় দিয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

দুটি বৈঠক করে সংসদীয় কমিটি বিলটি পরীক্ষা করে রোববার এ সম্পর্কে সুপারিশসহ প্রতিবেদন সংসদে উপস্থাপন করে।

সংসদীয় কমিটি বিলের ‘দীর্ঘ’ প্রস্তাবনা বাদ দেয়ার পাশাপাশি উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে কিছু পরিবর্তন এনেছে।

সংসদে উত্থাপিত প্রস্তাবে, কোনো বিচারপতির অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে ‘তদন্ত ও প্রমাণ’ আইন করে সংসদ নিয়ন্ত্রণ করার শর্ত রাখা হয়েছিল।

সংসদে উত্থাপিত বিলে বলা ছিল, “... এই অনুচ্ছেদের (২) দফার অধীন প্রস্তাব সম্পর্কিত পদ্ধতি এবং কোন বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করিবেন।”

সংসদীয় কমিটি এই দফা পরিবর্তন করে বলেছে, “... সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিবেন।”

এছাড়া উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে পরবির্তন এনে বলা হয়েছে, “... বিলের ৩ দফার বিধান অনুযায়ী কোন বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিবেন। সুতরাং উক্ত আইনে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের কোন বিচারককে অপসারণের সুযোগ থাকিবে না।”

সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব পাস হওয়ার তিন মাসের মধ্যে এ সংক্রান্ত আইন করা হবে বলে আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন।

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানিয়েছে, এরইমধ্যে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, নুরুল ইসলাম মিলন, ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদের মইন উদ্দিন খান বাদল, শিরীন আকতার, স্বতন্ত্র সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী, হাজী মো. সেলিম, তাহজীব আলম সিদ্দিকী বিলের ওপর কয়েকটি সংশোধনী দিয়েছেন।

এদের বেশিরভাগই বিচারপতি অপসারণের সঙ্গে নিয়োগের বিধিমালার প্রস্তাবিত আইনে যোগ করার প্রস্তাব দিয়েছেন।

ফিরোজ রশীদ তার সংশোধনীতে, বিচারপতিদের ‘অসামর্থ্য’ ও ‘অসদাচরণ’ প্রমাণের জন্য ‘জুডিশিয়াল ইনভেস্টিগেশন কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন।

সংসদে উত্থাপিত বিলের প্রস্তাবনাতে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাত থেকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে যাওয়ার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা ছিল।

সংসদীয় কমিটি তা বাদ দিয়ে প্রস্তাবনাতে বলেছে, “যেহেতু নিম্নবর্ণিত উদ্দেশ্যসমূহ পূরণকল্পে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের অধিকতর সংশোধন সমীচীন ও প্রয়োজনীয়; সেহেতু এতদদ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইলো।”

সংসদে উত্থাপিত বিলের প্রস্তাবনাতে ‘ভুল’ থাকায় সেটি সংশোধনও করেন আইনমন্ত্রী।

উত্থাপিত বিলের প্রস্তাবনাতে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছ থেকে রাষ্ট্রপতি এবং পরে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছ যাওয়ার ক্রম থেকে রাষ্ট্রপতির হাতে যাওয়ার বিষয়টি বাদ যায়।

১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের সময় উচ্চ আদালতের বিচারকদের পদের মেয়াদ নির্ধারণ ও তাদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ছিল। ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত হয়।

চতুর্থ সংশোধনী বাতিল হলে জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকারের আমলে এক সামরিক আদেশে বিচারপতিদের অভিশংসনের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হয়।

সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি বলে আসছে, আওয়ামী লীগ বিচার বিভাগের ওপর নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধান সংশোধনের এই উদ্যোগ নিয়েছে।