আলীমের মামলার আনুষ্ঠানিক ইতি

মৃত্যু হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধকালীন শতাধিক হত্যাকাণ্ডের হোতা আব্দুল আলীমের আমৃত্যু কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল অকার্যকর বলে ঘোষণা করেছে আপিল বিভাগ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Sept 2014, 06:34 AM
Updated : 16 Sept 2014, 06:34 AM

মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এই সিদ্ধান্ত দেয়। এদিন মামলাটি কার্যতালিকায় এসেছিল।

আদালত থেকে বের হয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, “মৃত্যুর পর ফৌজদারি মামলার বিচার চলে না। এ কারণে আদালত আপিলটি অকার্যকর ঘোষণা করেছেন।”

গত বছরের ৯ অক্টোবর তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। এরপর ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন এই যুদ্ধাপরাধী। এই মামলায় প্রসিকিউশনের কোনো আপিল ছিল না।

যুদ্ধাপরাধের দণ্ড ভোগের মধ্যে ৮৩ বছর বয়সে গত ৩০ অগাস্ট মারা যান আলীম। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর ১১ মাস কারাবন্দি অবস্থায় হাসপাতালের প্রিজন সেলে ছিলেন তিনি।

হত্যা ও গণহত্যার চার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর রাজাকার নেতা আলীমকে আমৃত্য কারাবাসের রায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

‘জঘন্য অপরাধ’ হলেও শারীরিক ও মানসিকভাবে অক্ষম হওয়ার কারণে আলীমকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হল না উল্লেখ করে সেই রায়ে বলা হয়, তার অপরাধ এতটাই ঘৃণ্য, তাকে মুক্ত রাখলে মানবতার অবমাননা হবে।

“এ কারণে তাকে কারাগারের চার দেয়ালের মধ্যে বাকি জীবন কাটাতে হবে। তাহলে হয়তো কৃতকর্মের জন্য তার ভেতরে অনুশোচনার সৃষ্টি হবে।”

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতার সংগ্রাম যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, আলীম তখন কনভেনশন মুসলিম লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা এবং বগুড়া জেলা কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে।

সে সময় তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেন এবং পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য মহুকুমা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে রাজাকার বাহিনী গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দালাল আইনে একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছিল আলীমের বিরুদ্ধে।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর এবং ১৯৭৭ সালে দুই দফা জয়পুরহাট পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আলীম। ১৯৭৯, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে তিনি বিএনপির টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

জিয়াউর রহমানের সরকারে প্রথমে বস্ত্রমন্ত্রী এবং পরে রেলমন্ত্রী ছিলেন আলীম।

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১১ সালের ২৭ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর ওই দিনই জয়পুরহাটের বাড়ি থেকে আলীমকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে আলীম জামিন চান।

ওই আবেদন খারিজ করে ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাগারে পাঠায়। স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে পরে তারা আবার জামিন চাইলে ৩১ মার্চ শর্তসাপেক্ষে তা মঞ্জুর করে আদালত।

ওইদিন ট্রাইব্যুনাল ১ লাখ টাকায় মুচলেকায় ছেলে টেলিকম খাতের ব্যবসায়ী ছেলে ফয়সাল আলীম ও আইনজীবী তাজুল ইসলামের জিম্মায় তাকে জামিন দেয় ট্রাইব্যুনাল।

বার্ধক্য ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা বিবেচনায় ট্রাইব্যুনালের আদেশ অনুসারে সেইফহোমে না নিয়ে বাড়িতে গিয়েই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত সংস্থা।

২০১২ সালের ১৫ মার্চ স্থানীয় এই রাজাকার কমান্ডার ও শান্তি কমিটির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করেন প্রসিকিউশন, যাতে হত্যা, লুণ্ঠনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ২৮টি অভিযোগ আনা হয়। ২৭ মার্চ তার বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল-১।

এরই মধ্যে ১৬ এপ্রিল মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থানান্তর করা হয়। সেখানেও অভিযোগ গঠনের শুনানির এক পর্যায়ে ৩ মে তার শর্ত সাপেক্ষের জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

২০১২ সালের ১১ জুন মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট ১৭টি অভিযোগে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই বিএনপি নেতার বিচার শুরু হয়।