ছিটমহলে দুদেশের পতাকায় অগ্নিসংযোগ

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অভ্যন্তরে ভারতীয় দাসিয়ারছড়া ছিটমহলে ‘বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি’র কার্যালয় ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা।

আহসান হাবীব নীলু কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি, বিডিনিউজ টোয়েন্টফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Sept 2014, 03:34 PM
Updated : 15 Sept 2014, 03:34 PM

১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি বাস্তবায়ন বিরোধীরা সোমবার এ ঘটনা ঘটায় বলে বাস্তবায়নপক্ষের লোকজন দাবি করছেন।

হামলাকারীরা এ সময় কার্যালয়ের আসবাবপত্র ভাংচুরের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় পতাকায় অগ্নিসংযোগও করে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে দুপুরে ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের পক্ষ থেকে লাঠি মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়।

বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা জানান, গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) মাদক ও চোরাকারবারীদের হাত থেকে ছিটমহলবাসীদের মুক্ত রাখতে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় দাসিয়ারছড়ার কালীরহাট হাফেজিয়া মাদরাসা মাঠে।

সেখানে ছিটমহলের চিহ্নিত মাদক চোরাকারবারীদের প্রতিরোধের ঘোষণা দেন ভারত থেকে আসা ‘বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সম্বনয় কমিটি’র ভারত ইউনিটের সহ-সাধারণ সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত।

গোলাম মোস্তফা জানান, আগামী ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে ভারত সরকার ১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি বাস্তবায়ন করবে। এটি নস্যাত করতে একটি কুচক্রিমহল চেষ্টা করছে।

সমাবেশে বাংলাদেশ ইউনিটের সভাপতি মইনুল হক, ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী সরকার প্রমুখ বক্তব্য দেন।

তারা ৭৪ এর চুক্তি বাস্তবায়ন বিরোধীদের মাদক ও চোরাচালানের হোতা বলে উল্লেখ করেন এবং তাদের তালিকা বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলে দেয়ার হুমকি দেন।

গোলাম মোস্তফার অভিযোগ, সমাবেশের এ ঘোষণার পর মাদক ব্যবসায়ী ও চুক্তির বিরোধীরা সোমবার ভোর রাতে ‘বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি’র অফিস ভাংচুর শেষে বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় পতাকা জ্বালায়।

তিনি বলেন, “হামলা ও অগ্নিসংযোগে নেতৃত্ব দেন ছিটমহলের মৃত মকবুলের ছেলে মিজানুর (৩৪), আজিজের ছেলে বাচ্চু (৩২), খলিলের ছেলে আলতাফ (২৮), আফজালের ছেলে শফিকুল (২২), আব্দুল জলিলের ছেলে আব্দুর রশিদ (৩৩), মৃত মাহমুদের ছেলে মহির (৩০), জহির (২৭) এবং টকনার মোড়ের টনকা আজিজ (৫৫)।

প্রতিবাদে ছিটমহালবাসীর মিছিল

জ্বালাও পোড়াও ও অফিস ভাঙচুরের প্রতিবাদে সোমবার বেলা সাড়ে ১২টায় লাঠি মিছিল শেষে ছিটমহলের কয়েকশ মানুষ দাসিয়ারছড়া কালীরহাটে সমাবেশ করে।

এ সমাবেশ থেকে সংগঠনের সভাপতি মইনুল হক জনগণের যানমালের নিরাপত্তাসহ দাসিয়ার ছড়া ছিটমহলকে মাদকমুক্ত ঘোষণা করেন।

এ সময় ‘বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহাল বিনিময় সম্বনয় কমিটি’র বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা ও দাসিয়ারছড়া ইউনিটের সভাপতি আলতাফ হোসেনসহ নুর আলম, আলমগীর হোসেন, মিজানুর রহমান, নজরুল ইসলাম, প্রতাপ চন্দ্র রায় প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এ ঘটনার বিচার চেয়ে মঙ্গলবার কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকে স্মারকলিপি দেয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

এ ব্যাপারে ‘বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি’র ভারত ইউনিটের সহ-সাধারণ সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত ফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বন্দি জীবন থেকে মুক্তি চাওয়া হলো মানুষের মানবাধিকার ও চাহিদা। যারা এর বিরোধিতা করছে, হামলা-ভাংচুর করছে তাদের ভবিষ্যৎ পরিণতি হবে ভয়াবহ।

কয়েকজন চিহ্নিত চোরাকারবারী ১৬২টি ছিটমহলের হাজার হাজার মানুষের স্বপ্ন রুখতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশের ভেতরে ১১১টি ভারতীয় ছিটমহল এবং ভারতের ভেতরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল রয়েছে।

২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের উপস্থিতিতে ঢাকায় স্থলসীমা নিয়ে একটি প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়। এর মাধ্যমে ১৯৭৪ সালের চুক্তির আওতায় ছিটমহল বিনিময় করবে দুই দেশ। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে সাড়ে ৬ কিলোমিটার অচিহ্নিত সীমানা এবং অপদখলীয় ভূমি সমস্যারও সমাধান করা হবে এ প্রটোকলের আওতায়।