দফায় দফায় লোডশেডিং, ভোগান্তি

গ্যাস সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় দফায় দফায় লোডশেডিংয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের অভাবে রাজধানীর কোথাও কোথাও পানি সংকটেরও খবর পাওয়া গেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Sept 2014, 02:41 PM
Updated : 14 Sept 2014, 02:41 PM

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) হিসাবে রোববার ছয় হাজার ৪৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ার কথা, যাতে ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে ৫৪৫ মেগাওয়াট।

অর্থাৎ, বিদ্যুৎ বিভাগকে লোডশেডিং করে ওই ঘাটতি সামাল দিতে হচ্ছে। এতে আর্দ্র আবহাওয়ায় কষ্টে পড়েছেন বাসাবাড়ি ও কর্মস্থলের মানুষ।

রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসিন্দা লুৎফুন্নেছা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চারবার বিদ্যুৎ গেছে। গরমে কষ্ট তো আছেই; ঘন ঘন বিদ্যুত চলে যাওয়ায় ঠিকমতো পানিও পাচ্ছি না।”  

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলছেন, সার কারখানা ও পোশাক শিল্পে গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে গিয়েই এ সংকট তৈরি হয়েছে। তবে এক মাসের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা দিয়েছেন তিনি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বিদ্যুৎ সরবরাহ কমার কারণ গ্যাস নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরো মাসখানেক লাগবে।”

এদিকে ভারত থেকে প্রতিদিন ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসার কথা থাকলেও নিজেদের ঘাটতির কারণে তারা অর্ধেকও ঠিকমতো দিতে পারছে না।  রোববার এসেছে  ২৫৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

গত ১৮ জুলাই দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সাত হাজার ৪১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। ওইদিন লোডশেডিংয়ের প্রয়োজন হয়নি বলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) পক্ষ থেকে বলা হয়।

এই হিসাবে দুই মাসের ব্যবধানে বিদ্যুতের উৎপাদন কমেছে প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট।

নসরুল হামিদ বলেন, “উৎপাদিত গ্যাস কখনো বিদ্যুতে, কখনো সার কারখানায় দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা হচ্ছে। এখন সার কারখানাগুলো পুরোদমে চলছে। সেখানে গ্যাস দিতে গিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সরবরাহ কমেছে।”

গত মার্চ থেকে পাঁচটি সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হলেও সারের চাহিদা মেটাতে অগাস্ট থেকে আবার সেগুলো চালু হয়। বর্তমানে আমনের আবাদ চলায় দেশে সাতটি কারখানায় প্রতিদিন প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন হচ্ছে।

দেশের ৭০ শতাংশ বিদ্যুত গ্যাসভিত্তিক হওয়ায় অন্যখাতে গ্যাসের চাহিদা বাড়লে বিদ্যুত উৎপাদনে সরবরাহ কমতে শুরু করে। গত বছরও এ মৌসুমে গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎ বিভাগকে লোডশেডিং বাড়াতে হয়েছিল। 

পেট্রোবাংলা বলছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিনি ১ হাজার ৩৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকলেও রোববার ৭৯৪ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করা হচ্ছে। এদিন জাতীয় সরবরাহ লাইনে গেছে মোট ২ হাজার ৩৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।

পিডিবির হিসাবে দেখা গেছে, ক্ষমতা থাকলেও দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো গ্যাসের অভাবে প্রায় ১৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারছে না।

নসরুল হামিদ বলেন, “শুধু সার কারখানা নয়, পোশাক শিল্প মালিকরা কোরবানির ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন পরিশেধের জন্য উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে গ্যাসের চাপ বাড়াতে বলেছেন। এজন্যও বিদ্যুতে গ্যাস সরবরাহ কমেছে।”

পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড মাইনস ) মো. কামরুজ্জামন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাস বিভিন্ন খাতের মধ্যে সমন্বয় করে সরবরাহ করতে হচ্ছে। আগামী মাস থেকে ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন বাড়লে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হবে।”