অভিন্ন শত্রু মোকাবেলায় এক মঞ্চে ৩২ দেশের আর্মি

সন্ত্রাসবাদ থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা পর্যন্ত অভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করার জন্য এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের স্থলবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Sept 2014, 11:36 AM
Updated : 14 Sept 2014, 11:36 AM

রোববার ঢাকায় ৩৮তম প্যাসিফিক আর্মি ম্যানেজমেন্ট সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর প্যাসিফিক (ইউএসএআরপিএসি) জোনের কমান্ডিং জেনারেল ভিনসেন্ট ব্রুকস এ আহ্বান জানান।

যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, ভারত ও ইন্দোনেশিয়াসহ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলের ৩২টি দেশের সেনা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এই সভায় যোগ দিয়েছেন।

২২ বছর পর ইউএসএআরপিএসির সঙ্গে যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

জেনারেল ইকবাল করিম বলেন, “আমরা এখন এমন ধরনের হুমকির মুখোমুখি হচ্ছি, যা ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে আটকে থাকছে না। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নতুন নতুন হুমকি আসছে।

জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়া

“কোনো দেশেরই এককভাবে এসব হুমকি মোকাবেলার সামর্থ্য নেই। বৈশ্বিক পর্যায়ে কোনো সংকট দেখা দিলে তা এককভাবে মোকাবেলার বাইরে চলে যায়। তখনই দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার প্রয়োজন পড়ে।”

নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে ভিনসেন্ট ব্রুকস বলেন, “অভিন্ন যেসব সমস্যা আমাদের সবার মোকাবেলা করতে হয় সেগুলোর ব্যাপারে আমাদের একসঙ্গে কাজ করা উচিত।”

তার মতে, এ অঞ্চলের সব দেশের চারটি অভিন্ন হুমকি মোকাবেলা করতে হয়। এগুলো হলো- আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রপন্থা, সাইবার অপরাধ, সংক্রামক ব্যাধি এবং পরিবেশগত পরিবর্তন।

‘এশিয়া-প্রশান্ত অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আয়োজিত এই সেমিনারের মূলত যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর প্যাসিফিক জোনের ভাবনাপ্রসূত।

চার দিনের এই সেমিনারে এই অঞ্চলের পররাষ্ট্র নীতি বিশ্লেষক,সামরিক বিশেষজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকরা আলোচনায় অংশ নেবেন এবং বিভিন্ন উপস্থাপনা তুলে ধরবেন। থাকবে ক্ষুদ্র গ্রুপভিত্তিক আলোচনার পাশাপাশি  সাংস্কৃতিক পরিবেশনাও। 

১৯৭৮ সালে হাওয়াই দ্বীপের হনুলুলুতে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নয় দেশের সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রথম এই সেমিনার করে ইউএস আর্মি প্যাসিফিক। এরপর থেকে বিভিন্ন দেশে এই সেমিনার আয়োজন করা হচ্ছে।

সামরিক কর্মকর্তাদের আলাপচারিতায় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা

বহুজাতিক এই সামরিক সেমিনারে লেফটেন্যান্ট কর্নেল থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদ মর্যাদার কর্মকর্তারা অংশ নিচ্ছেন।

সেমিনারে সহযোগিতার চর্চা, অপ্রচলিত নিরাপত্তাজনিত অভ্যন্তরীণ কর্মসূচি উন্নয়ন,প্রচলিত ও অপ্রচলিত হুমকি মোকাবেলায় ভারসাম্য রক্ষায় করণীয় এবং পরিবেশজনিত নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনীর সাড়া দেওয়ার দক্ষতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞতা ও ভাবনা বিনিময় করবেন তারা।

ভারত মহাসাগর থেকে আমেরিকার পশ্চিম ঊপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল বর্তমানে বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম রাজনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

এ অঞ্চলের প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগর নৌপরিবহন ও কৌশলের দিক থেকে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যার এই অঞ্চলে চীন ও ভারতের মতো উদীয়মান অর্থনীতির দেশও রয়েছে।

বর্তমানে এশিয়া নিয়ে তাদের কৌশল (এশিয়া স্ট্রাটেজি) নতুন করে সাজাতে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র।

সম্প্রতি দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেন, “আমেরিকার নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি ব্যাপকভাবে এশিয়া প্যাসিফিকের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং তা ক্রমশ বাড়ছে।”

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম অংশীদার জাপান নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগর নিয়ে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

উদীয়মান শক্তি চীন পুরো অঞ্চলকে একই যোগাযোগের আওতায় আনতে তার সিল্ক রুট ও মেরিটাইম সিল্ক রোড বাস্তবায়নের স্বপ্ন নিয়ে এগোচ্ছে।

জেনারেল ভিনসেন্ট ব্রুকস

উদ্বোধনী বক্তব্যে ব্রুকস বলেন, “এশিয়া-প্যাসিফিকে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিটি দেশের দায়িত্ব রয়েছে এবং আমাদের মধ্যে অংশীদারিত্ব দরকার, যাতে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করা যায়।”

সেমিনারে আনুষ্ঠানিক বিভিন্ন আয়োজনের বাইরে ব্যক্তিগত যোগাযোগ ‘ভাবনা বিনিময়ের এক অনন্য’ সুযোগ করে দেবে।

একে অপরকে ‘পেশাগত ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে ভালোভাবে চেনা-জানার’ সুযোগ নিতে অংশগ্রহণকারী সেনা কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোনো দেশের সঙ্গে অন্য কোনো বিরোধ থাকলে এই প্লাটফর্ম তা প্রশমনে সহায়তা করবে।

“এই ধরনের সেমিনার একে অপরকে জানার সুযোগ এবং আস্থা তৈরি করে।”

হনুলুলুর এশিয়া প্যাসিফিক সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্টাডিজের অধ্যাপক ক্রিস্টোফার জে স্নেডেনও মনে করেন, ‘একসঙ্গে কাজ করার’ একটি বড় প্লাটফর্ম এই সেমিনার।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিভিন্ন বিষয় বুঝতে এটা তাদের সহায়তা করবে এবং বৈশ্বিক পর্যায়ে তারা বিভিন্ন বিষয়ের মীমাংসার পথ পাবে।”

</div>  </p>