বাঘ বাঁচান, প্রকৃতি বাঁচান: প্রধানমন্ত্রী

সুন্দরবন রক্ষায় অংশ নিয়ে ‘বাঘ ও প্রকৃতি বাঁচাতে’ এগিয়ে আসার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Sept 2014, 05:58 AM
Updated : 14 Sept 2014, 09:56 AM

রোববার দ্বিতীয় ‘বিশ্ব বাঘ স্টকটেকিং সম্মেলন’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বাঘ সংরক্ষণের লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে বিশ্ব ‘একটি পর্যায়ে’ পৌঁছেছে। এ পর্যন্ত নেয়া কর্মসূচির মূল্যায়ন ও ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করে এখন পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে।

বাঘ হত্যা ও বাঘের আবাসস্থল সঙ্কোচনের ফলে এই প্রাণীটি এখন বিলুপ্তির পথে বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, গত একশ বছরে বাঘের সংখ্যা এক লাখ থেকে কমে তিন হাজার সাতশতে দাঁড়িয়েছে।

বাঘ আছে এমন সব দেশের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আসুন সকলে মিলে আমরা বাঘ বাঁচাই, প্রকৃতি বাঁচাই।”               

বাংলাদেশের জাতীয় প্রাণী রয়েল বেঙ্গল টাইগার রক্ষার পাশাপাশি এর আবাসস্থল সুন্দরবন রক্ষার জন্যও সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

“শুধু বাঘ রক্ষাই নয়, প্রাণী বৈচিত্র্যের বিপুল আধার হিসেবে সুন্দরবনকে রক্ষা করা জরুরি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীব-পরিবেশের এক অনন্য নিদর্শন এই সুন্দরবন। আমি বিশ্ব সম্প্রদায়কে সুন্দরবন রক্ষায় অংশ নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।”

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সমুদ্র উপকূলবর্তী প্রায় ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ঘোষণা করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, সমুদ্রউচ্চতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, সাইক্লোন, লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশের কারণে সুন্দরবনের অস্তিত্ব হুমকির মুখে।

“এই বনভূমির উপর প্রায় ১২ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। এসব কর্মকাণ্ড বাঘ-মানুষের দ্বন্দ্ব বাড়িয়ে দিয়েছে।”

বাঘ না থাকলে সুন্দরবনের অস্তিত্ব অনেক আগেই বিলীন হয়ে যেত মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, বাঘ রক্ষা করে সুন্দরবনকে। আর, সুন্দরবন রক্ষা করে বাংলাদেশকে।

“আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে বিগত দুই বছরে বাংলাদেশে কোনো বাঘ হত্যা হয়নি। পূর্বে বছরে মানুষের হাতে গড়ে ৩-৪টি বাঘের মৃত্যু হতো। বাঘের আক্রমণে মানুষ মৃত্যুর সংখ্যাও ২৫-৩০ জন থেকে কমে মাত্র চার জনে এসে দাঁড়িয়েছে।”

বন বিভাগের আয়োজনে বাংলাদেশসহ ১৩টি দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে বাঘ সংরক্ষণে এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ২০০০ সালে গ্লোবাল টাইগার ফোরামের প্রথম সাধারণ সম্মেলনও ঢাকাতেই হয়েছিল।

হোটেল সোনারগাঁওয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি আপনাদের সকলকে আশ্বস্ত করতে চাই, বাঘ রক্ষায় আমাদের সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।”

জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, বনভূমি ধ্বংস এবং সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাপে বাঘের প্রাকৃতিক আবাসস্থল দিন দিন কমে আসছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আশাপ্রকাশ করেন, বাঘের বৃদ্ধি, সংরক্ষণ ও নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করতে ‘দ্বিতীয় বিশ্ব বাঘ স্টকটেকিং সম্মেলন’ তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে।

এশিয়ার প্রকৃতি ও সংস্কৃতিতে বাঘ একটি ‘বিশেষ স্থান’ দখল করে আছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, বাঘ-অধ্যুষিত অনেক দেশেই এটি ‘জাতীয় প্রাণী’ হিসাবে ঘোষিত এবং ‘শৌর্য ও বীর্যের প্রতীক’।

বাঘ সংরক্ষণে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে ২০১০ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক শীর্ষ সম্মেলনের কথাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

ওই সম্মেলনে ২০২২ সালের মধ্যে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার ঘোষণা ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে বিশ্বনেতারা ঐকমত্যে পৌছান।

এরপর ২০১২ সালের অক্টোবরে ভুটানের থিম্পুতে বাঘ-অধ্যুষিত দেশগুলোর মন্ত্রীপর্যায়ের সম্মেলনে বাঘ সংরক্ষণে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, আবাসস্থল সংরক্ষণ, বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নয় দফা কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়।

থিম্পু সম্মেলনের ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে চীনের কুনমিংয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়, যেখানে বাঘের আন্তঃসীমান্ত আবাসস্থল রক্ষা ও বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা বন্ধে একটি কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। 

থিম্পুতে নেয়া নয় দফা কর্মপরিকল্পনার আলোকে ২০২২ সালের মধ্যে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্য অর্জনে গৃহীত পদক্ষেপগুলো পর্যালোচনা করে ঢাকায় একটি নতুন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা সম্ভব হবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন প্রণয়নসহ বাঘ রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি জানান, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে সুন্দরবনসহ সারাদেশে বাঘসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। অসুস্থ বাঘের সেবা দিতে খুলনায় একটি ‘ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার’ স্থাপন করা হচ্ছে।

সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল স্থানীয় জনসাধারণের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা বন্যপ্রাণীর আক্রমণে নিহত বা আহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে নীতিমালা প্রণয়ন করেছি।”

পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, সচিব মো. নজিবুর রহমান, বিশ্ব ব্যাংকের স্থায়ী প্রতিনিধি জোহানের জুট, গ্লোবাল টাইগার ফোরামের মহাসচিব রাজেশ গোপাল, গ্লোবাল টাইগার ইনিশিয়েটিভের গ্রোগ্রাম ম্যানেজার আন্দ্রে ভি কুশলিন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক মো. ইউনুস আলী।