সহযোগিতার নতুন যাত্রা শুরু: হাসিনা

ঢাকায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাত দেশের জোট বিমসটেকের সচিবালয় উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এর মাধ্যমে এ অঞ্চলে সহযোগিতার ক্ষেত্রে এক নতুন যাত্রা শুরু হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Sept 2014, 07:41 AM
Updated : 13 Sept 2014, 11:23 AM

বাংলাদেশে প্রথম কোনো আঞ্চলিক জোটের প্রধান কার্যালয় হিসেবে শনিবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর গুলশানে বিমসটেকের সচিবালয়ের উদ্বোধন করেন তিনি।

এই সচিবালয় বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের সাত দেশের অংশীদারিত্বের এক অনবদ্য প্রতিষ্ঠানে রূপ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। 

উদ্বোধনী বক্তব্যে বিমসটেকের কার্যক্রম পরিচালনায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন শেখ হাসিনা।

ঢাকায় বিমসটেকের সচিবালয় প্রতিষ্ঠা এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “বিমসটেক প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে গভীর বোঝাপড়া ও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির অন্যতম ক্ষেত্র। সংস্থাটি এ অঞ্চলের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি  অর্জনে এক অনন্য প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”

১৯৯৭ সালের ৬ জুন থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড ইকোনোমিক কোঅপারেশন (বিআইএসটি-ইসি) গড়ে তোলা হয়। সে বছরই মিয়ানমার সদস্য হিসাবে যোগ দেয়ার পর এর নতুন নাম হয় বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড ইকোনোমিক কোঅপারেশন (বিআইএমএসটি-ইসি)।

২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে নেপাল ও ভুটান সদস্য হিসাবে যোগ দেয়ার পর চূড়ান্তভাবে এই জোটের নাম হয় ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনোমিক কো-অপারেশন’ (বিমসটেক)। 

১৯৯৭ সালে সহযোগিতার ছয়টি ক্ষেত্র নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও পরবর্তীতে আরো আটটি নতুন ক্ষেত্র যোগ হওয়ায় বিমসটেক এখন উন্নয়ন এবং অভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ১৪টি খাতের ওপর জোর দিচ্ছে।

এই খাতগুলো হলো- বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, প্রযুক্তি, জ্বালানি, পরিবহন ও যোগাযোগ, পর্যটন, মৎস্য, কৃষি, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জনস্বাস্থ্য, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ, দারিদ্র্য দূরীকরণ, সন্ত্রাসবাদ ও আঞ্চলিক অপরাধ দমন এবং জলবায়ু পরিবর্তন।

শেখ হাসিনা বলেন, “বিমসটেক অঞ্চলে সহযোগিতার লক্ষ্যে চিহ্নিত ১৪টি ক্ষেত্র এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব ক্ষেত্রে কাক্ষিত অগ্রগতি অর্জনের জন্য আমাদের সময়োপযোগী ও বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।”

বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের সাত দেশের এই জোটের লক্ষ্য অর্জনে নিজের চিন্তাধারা তুলে ধরেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

দারিদ্র্য বিমোচনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এ চ্যালেঞ্জকে সমন্বিতভাবে মোকাবেলা করার মাধ্যমেই আমাদের সকল অর্থনৈতিক অর্জন অর্থবহ করা সম্ভব।”

কৃষি ক্ষেত্রে সহযোগিতার ওপর প্রাধান্য দেয়ার তাগাদা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের জনসংখ্যার সিংহভাগই কৃষির ওপর নির্ভরশীল। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়াও কর্মসংস্থানের অন্যতম প্রধান উৎস হল কৃষি খাত।”

বিমসটেক মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গঠন বিষয়ক কাঠামো চুক্তি কার্যকরের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, “প্রয়োজনীয় যোগাযোগ ব্যবস্থার ঘাটতি এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

জ্বালানি বিমসটেকের সহযোগিতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র-মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “এ অঞ্চলের টেকসই উন্নয়নের জন্য তা অত্যন্ত অপরিহার্য। বিমসটেকের আওতাধীন হিমালয় বেসিন অঞ্চলে জলবিদ্যুৎ এবং বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে হাইড্রো-কার্বন প্রাপ্তির অপার সম্ভাবনা রয়েছে।

“এসব সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এ অঞ্চলের জ্বালানি নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।” 

জলবায়ু পরিবর্তনসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

এছাড়া নিরাপত্তা, পর্যটন ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও সহযোগিতার সম্পর্ক আরো বাড়ানোর কথা বলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

বিমসটেক সচিবালয় স্থাপনের জন্য বাংলাদেশকে নির্বাচিত করায় সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

১৯৯৭ সালে বিমসটেকের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর সময়ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকায় গর্ববোধ করেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আবার আমাদের সরকারের তৃতীয় মেয়াদে ঢাকায় স্থাপিত হল বিমসটেক সচিবালয়।

“আমি মনে হয় একজনই আছি। আমার সাথীরা সবই নতুন।”

বিমসটেক সচিবালয় স্থাপনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে বলে আশা করছে সরকার।

গত ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত জোটের সবশেষ সম্মেলনে ঢাকায় স্থায়ী এই সচিবালয় স্থাপনের বিষয়ে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সমঝোতা স্মারক সাক্ষরিত হয়। 

শ্রীলঙ্কাও এ সচিবালয় স্থাপনে আগ্রহী ছিল। কিন্তু জোটের প্রথম মহাসচিব শ্রীলঙ্কা থেকে করার ব্যাপারে সদস্য দেশগুলো একমত হয়।

শ্রীলঙ্কার কূটনীতিক সুমিত নাকান্দালা এরইমধ্যে জোটের প্রথম মহাসচিব হিসেবে যোগ দিয়েছেন।

বাংলাদেশে বিমসটেকের স্থায়ী সচিবালয় গড়তে বড় ধরনের সহযোগিতা দিয়েছে ভারত। মিয়ানমার সম্মেলনের আগেই মোট ব্যয়ের ৩২ শতাংশ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল দেশটি।

জোটের সদস্য দেশগুলো পারস্পরিক যোগাযোগ এবং বাণিজ্য বাড়ানোর ওপর জোর দিলেও এখনও লক্ষ্য অর্জন থেকে পিছিয়ে রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। 

দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের উদ্দেশে ২০০৪ সালে জোটের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গড়ে তোলার ব্যাপারে সম্মত হলেও সেই পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখেনি।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, জোটের নীতিকাঠামো এখনও চূড়ান্ত না হওয়ায় একে কার্যকর করা যাচ্ছে না।

সকালে বিমসটেকের সচিবালয়ে পৌঁছেই ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে এই উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকেট ও খাম অবমুক্ত করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিমসটেকের মহাসচিব সুমিত নাকান্দালা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বক্তব্য দেন।