জেনেশুনে চোরদের পক্ষ নিয়েছি: নাহিদ

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের লোকজনকে ‘চোর-বাটপার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Sept 2014, 03:32 PM
Updated : 10 Sept 2014, 07:33 PM

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারনাশন্যাল বাংলাদেশের (টিআইবি) একটি প্রতিবেদনের ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “আমি জেনেশুনে চোরদের পক্ষ নিয়েছি।

“মহাচোরদের সনাক্ত করে উৎখাত আর ছোট চোরদের সংশোধন করতে এইসব চোরদের পক্ষ নেওয়া ছাড়া কোনো পথ খোলা ছিল না।”

বুধবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃতি শিক্ষার্থীদের স্বর্ণপদক ও পুরস্কার এবং গুণীজনদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সম্প্রতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান টিআইবির এক প্রতিবেদনে শিক্ষামন্ত্রী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে কথা বলছেন বলে অভিযোগ করা হয়।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, গরিবের টাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনভাতা দেয়া হচ্ছে। দেশকে এগিয়ে নিতে চাইলে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের এক হয়ে কাজ করতে হবে।

শুধু জ্ঞান দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায় না। এজন্য সবাইকে নীতিবান হতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

শুধু সার্টিফিকেট দেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়নি উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছে জ্ঞান চর্চা, গবেষণা এবং নতুন জ্ঞান সৃজনের জন্য। এই কাজ করতে না পারলে বিশ্ববিদ্যালয় দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জনে কোনো কাজে আসবে না।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল শোষণ ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের চার দশক পরেও সে লক্ষ্য অর্জিত হয়নি।

এজন্য তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে সততা ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়ারও আহ্বান জানান।

নারী শিক্ষার অগ্রগতিতে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ উদাহরণ সৃষ্টি করেছে বলে দাবি করেন শিক্ষামন্ত্রী।

শত প্রতিকূলতার মধ্যেও বছরের শুরুতেই সারাদেশে বিনামূল্যে বই পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায় থেকে উচ্চশিক্ষা আধুনিক ও যুগপোযোগী শিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে, বলেন মন্ত্রী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান, রুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল আলম বেগ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সায়েন উদ্দিন আহমদ, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এন্তাজুল হক, নয়টি অনুষদের ডিন, অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবদুল হামিদ প্রমুখ।

উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, পদক ও পুরস্কারপ্রাপ্ত মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের অর্জিত জ্ঞান দেশের কল্যাণে ব্যয়িত হলেই সামগ্রিকভাবে জাতি উপকৃত হবে।

পরে ২০০৫ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিপ্রাপ্তদের মধ্যে ৮৪ কৃতি শিক্ষার্থীকে ‘অগ্রণী ব্যাংক স্বর্ণপদক’, আট জনকে ‘এ কে খান স্বর্ণপদক’ এবং পাঁচ জনকে ‘ড. মমতাজউদ্দিন আহমদ স্বর্ণপদক’ প্রদান করা হয়।

এছাড়া গুণীজনদের মধ্যে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হককে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ‘সারোয়ার জাহান স্মৃতি পুরস্কার’, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমানকে উচ্চমানের গবেষণার জন্য ‘সারোয়ার জাহান গবেষণা স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হয়।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় শিক্ষামন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন ফোকলোর চত্বরে শেখ রাসেল মডেল স্কুলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

অনার্স, মাস্টার্স বা এমবিবিএস পরীক্ষায় অনুষদে প্রথম শ্রেণিসহ প্রথম স্থান অধিকারীকে অগ্রণী ব্যাংক স্বর্ণপদক, দর্শন বিষয়ে মাস্টার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকারীকে ড. মমতাজ উদ্দিন আহমদ স্বর্ণপদক এবং এমবিবিএস (শেষ বৃত্তিমূলক, নিয়মিত) পরীক্ষায় কমপক্ষে শতকরা ৬০ ভাগ নম্বরসহ চিকিৎসা অনুষদে প্রথম স্থান অধিকারীকে ডা. এ কে খান স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়।