বুধবার জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সম্প্রচার নীতিমালার আলোকে সম্প্রচার কমিশনও গঠন করা হবে।
“আমি জানি এটা নিয়ে এখন তোলপাড় চলছে। অনেকে এর বিরোধিতা করছে। সাংবাদিকরাই একটা নীতিমালার কথা বলেছিল। এখন একদল এর বিরোধিতা করছে।”
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট এবং এর প্রথম কোর্সের উদ্বোধন উপলক্ষে তথ্য মন্ত্রণালয় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শেখ হাসিনা বলেন, “সব কিছুরই নীতিমালা দরকার। সবাইকে সমাজের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে। অধিকার যেমন ভোগ করবেন, অন্যের অধিকারও সংরক্ষণ করতে হবে।”
চলচ্চিত্র শিল্প বিকাশের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি টেলিভিশন ও দেশের সব প্রচার মাধ্যমের দ্রুত বিকাশের লক্ষ্যে সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেয়ার কথাও শেখ হাসিনা বলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প যেন বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে পারে; সে মান রক্ষার লক্ষ্যেই চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হয়েছে।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের (বিএফটিআই) কার্যক্রম শুরুর ঘটনাকে ‘একটি মাইলফলক’ হিসাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে এ দুটি গণমাধ্যমের ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ অবদান রয়েছে।
“আমরা রাজনীতিবিদ। আমরা বক্তৃতা দেই। কিন্তু যে কোনো বক্তব্য চলচিত্র ও টেলিভিশনের মাধ্যমে দ্রুত ছড়ায়। তাই যুগ যুগ ধরে চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন মাধ্যম শিক্ষাবিস্তার, জাতিগঠন ও সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে নিয়ামক ভূমিকা পালন করে আসছে”, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
গণমাধ্যমের উন্নয়নে ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল তৎকালীণ প্রাদেশিক আইন পরিষদে ‘পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা বিল’ উত্থাপন, চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা (এফডিসি) সৃষ্টি, সাংবাদিকতার বিকাশ ও সুষ্ঠু প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে জাতীয় প্রেস ইনস্টিটিউট প্রকল্প অনুমোদনসহ গণমাধ্যমের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন তার কন্যা শেখ হাসিনা।
সরকারের অনুমোদন দেয়া সব টেলিভিশন চ্যানেল কাজ শুরু করলে দেশে মোট চ্যানেলের সংখ্যা ৪১টি হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী হাসতে হাসেত বলেন, “আমরাই অনুমতি দিলাম। আর সুযোগ পেলেই এই টেলিভিশন আমাদের বিরুদ্ধে যা খুশি বলে যায়।”
সিনেমাকে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হিসাবে উল্লেখ করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রেক্ষাগৃহগুলোর আধুনিকায়নে গুরুত্ব দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকার বাইরে সিনেপ্লেক্স নির্মাণের ক্ষেত্রে আরো বেশি কর অব্যাহতি দেয়া হবে।
চলচ্চিত্রের উন্নয়নে এফডিসির বিদ্যমান যন্ত্রপাতির সংস্কার, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন, চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য কারিগরি সুবিধা এবং ডিজিটাল প্রদর্শন ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আগামী ডিসেম্বরের মধে ক্যামেরাসহ নতুন যন্ত্রপাতি চলে আসবে।”
শেখ হাসিনা জানান, কাজের ব্যস্ততায় দেশীয় চলচ্চিত্র দেখার সময় তার সবসময় হয় না। তবে ভ্রমণের সময়ে বিমানে তিনি দেশের ছবিই দেখেন।
“আমি মুগ্ধ হয়ে যাই- আমাদের চলচ্চিত্রের এতো সুন্দর মান।”
অনুষ্ঠানে অতিথিদের মধ্যে প্রথম সারিতে ছিলেন মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সাংসদ সুকুমার রঞ্জন ঘোষ, যিনি একজন প্রযোজকও।
তার দিকে তাকিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “অনেক প্রযোজক এখন এমপি হয়ে হাত গুটিয়ে বসে আছে। এতো টাকা কামিয়ে করবেন কি? খরচ করেন।”
শিক্ষনীয় এবং পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেখার মতো চলচ্চিত্র নির্মাণের ওপরও গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী।
“আমার প্রত্যাশা সৃজনশীল, মেধাবী, দেশপ্রেমিক ও মানবিক মূল্যবোধে উদ্দীপ্ত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট একটি সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবে... দেশে সুস্থধারার চলচ্চিত্র নির্মাণকে উৎসাহিত করবে, বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন মাধ্যমকে সুপ্রতিষ্ঠিত করবে।”
তথ্য সচিব মর্তুজা আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।