সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনের প্রস্তাব সংসদে

উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা আইনসভার কাছে ফিরিয়ে আনতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনের প্রস্তাব সংসদে উঠেছে।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Sept 2014, 01:17 PM
Updated : 7 Sept 2014, 07:30 PM

সংসদের বাইরে থাকা দল বিএনপির বিরোধিতার মধ্যে মন্ত্রিসভায় পাস হওয়া বিলটি রোববার সংসদে উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

উত্থাপনের পর ‘সংবিধান (ষোড়শ সংশোধন) বিল-২০১৪’ বিলটি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠিয়েছেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

বিলটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিতে প্রবীণ রাজনীতিক সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত নেতৃত্বাধীন সংসদীয় এই কমিটিকে এক সপ্তাহ সময় দেয়া হয়েছে।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত কয়েক দিন আগে বলেছেন, বিলটি তার কমিটিতে এলে তিনি সবার মতামত নেবেন।

“চাইলে বিএনপিও মতামত দিতে পারবে। সুপ্রিম কোর্ট, বার কাউন্সিলকে ডাকব। তাদের মতামত নেয়া হবে। সমস্ত মতামত রেকর্ড করা হবে এবং সংসদীয় কমিটির কাছে থাকবে।”

তবে বিল উত্থাপনের আগে রোববার এক আলোচনা সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘অবৈধ’ সংসদে সংবিধান সংশোধনের এই উদ্যোগের সমালোচনা করেন।

“এরকম একটি সংসদের কাছে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা দেয়া হলে এটি হবে একটি বিশেষ দলের সিদ্ধান্ত। এতে দেশে ন্যায়বিচার থাকবে না।”

অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জবাবদিহিতার বিষয়ে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো সমুন্নত রাখতে শাসনতন্ত্রে ষোড়শ সংশোধনের এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। 

“বিলটি আইনে পরিণত হলে স্বাধীন বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা আরও বৃদ্ধির পাশাপাশি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কাছে উহার জবাবদিহিতা থাকা সংক্রান্ত সংবিধানের মৌলিক কাঠামো সমুন্নত থাকবে মর্মে আশা করা যায়,” বিল উত্থাপনের সময় বলেছেন আইনমন্ত্রী।

১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের সময় এর ৯৬ অনুচ্ছেদের বলে উচ্চ আদালতের বিচারকদের পদের মেয়াদ নির্ধারণ ও তাদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ছিল।

১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর (বাকশাল গঠন) মাধ্যমে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত হয়।

চতুর্থ সংশোধনী বাতিল হলে জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকারের আমলে এক সামরিক আদেশে বিচারপতিদের অভিশংসনের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হয়। এখন পর্যন্ত তা-ই বলবৎ রয়েছে।

জাতীয় সংসদের ফাইল ছবি

রোববার সংসদে উত্থাপিত বিলে বর্তমান সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব করে বলা হয়েছে, “বিচারকদের পদের মেয়াদ-(১) এই অনুচ্ছেদের বিধানবলী সাপেক্ষে কোন বিচারক ৬৭ বৎসর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন।

“(২) প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের কারণে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতার দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ ব্যতীত বিচারককে অপসারিত করা যাইবে না।”

“এই অনুচ্ছেদের (২) দফার অধীন প্রস্তাব সম্পর্কিত পদ্ধতি এবং কোন বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করিবেন। (৪) কোন বিচারক রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করিয়া স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদত্যাগ করিতে পারিবেন।”

সংবিধানে নতুন করে সংশোধনের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে আইনমন্ত্রী বলেন, সংসদের আস্থা হারালে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকারও যেহেতু পদে থাকতে পারেন না, সেই একই বিষয় বিচারপতিদের ক্ষেত্রে থাকলেও তা পরে বাদ দেয়া হয়। এখন তা  পুনঃস্থাপিত হচ্ছে।

বিচারপতি অপসারণের বর্তমান পদ্ধতি সংবিধানের মূল চেতনার বিরোধী জানিয়ে তিনি বলেন, “জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত সংসদে রাষ্ট্রের অন্যান্য অঙ্গের ন্যায় উচ্চ আদালতের বিচারকদের জবাবদিহিতার নীতি বিশ্বের অধিকাংশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিদ্যমান রয়েছে।”

গত ১৮ অগাস্ট সংবিধান সংশোধনের এই প্রস্তাব মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর দশম সংসদের চলমান অর্থাৎ তৃতীয় অধিবেশনেই বিলটি পাস হবে বলে আগেই ইঙ্গিত মিলছিল।

২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর সময়ে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া নিয়ে আলোচনা ওঠে। যদিও তখন তা করা হয়নি।

পরে ২০১২ সালে তৎকালীন স্পিকার ও বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের একটি রুলিংকে কেন্দ্র করে কয়েকজন সংসদ সদস্য হাই কোর্টের একজন বিচারপতিকে অপসারণের দাবি তোলেন।

মূলত সে সময়েই বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনার দাবি জোরালো হয়।