মুক্তিযুদ্ধের জীবিত কমান্ডারদের নিয়ে গঠিত সংগঠনটির চেয়ারম্যান তিনি।
শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনের নেতারা বলেন, “এ কে খন্দকার তার বইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ২৬ মার্চের বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষণা সম্পর্কে বিভিন্নভাবে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। যাকে আমরা চরম দুর্ভাগ্যজনক ও বস্তুনিষ্ঠ নয় বলে মনে করি।”
সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের চেয়ারম্যান এ কে খন্দকার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন গত মহাজোট সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলেন। তার লেখা ‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’ বইটি গত বুধবার প্রকাশিত হওয়ার পর শুরু হয় সমালোচনা।
বইয়ে তিনি লিখেছেন, ৭ মার্চের ভাষণ ‘জয় পাকিস্তান’ বলে শেষ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
ফোরামের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তিযুদ্ধে এস ফোর্সের প্রধান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল কে এম সফিউল্লাহর নেতৃত্বে ২১ জন সদস্য প্রকাশিত বই নিয়ে যৌথ বিবৃতিতে দেন।
“বইটি একান্তভাবেই খন্দকারের নিজস্ব; যার বক্তব্য ও মন্তব্যের সাথে ফোরামের নীতি, আদর্শ ও ঐতিহাসিক সত্য উপলব্ধির মিল নেই। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৩ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের উপসেনাপতির বক্তব্য বিভ্রান্তিকর।”
সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম বিবৃতিতে জানায়, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা একটি প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক সত্য -যা সারা বিশ্বে সংরক্ষিত রয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরাচার ও শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাতির ধারাবাহিক রাজনৈতিক সংগ্রাম ও গণমানুষের আত্মত্যাগের চূড়ান্ত পরিণতি, যার মূখ্য নেতৃত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
“বইটিতে তিনি [খন্দকার] মুক্তিযুদ্ধের প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ সম্পর্কেও যে দাবি উত্থাপন করেছেন, তা বাস্তবতাবিবর্জিত। এমন বিভ্রান্তিকর বক্তব্য আমাদের হতবাক করেছে।”
মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিয়ে উপসেনাপতির বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় বলেও জানান সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম নেতারা।
আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি ছিল না বলে বইয়ে লিখেছেন সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে খন্দকার।
লেখার কারণে তার তীব্র সমালোচনা করে বৃহস্পতিবার সংসদে বইটি নিষিদ্ধের দাবি তোলেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন সাংসদ। তারা বলছেন, বইয়ে এ কে খন্দকার তথ্য বিকৃতি করেছেন। মেজর রফিক নামে খ্যাত
মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার রফিকুল ইসলাম সংসদে বলেছেন, “এই বইয়ের বক্তব্য অসত্য ও ভুল। কোনো মহলের প্ররোচনা থাকতে পারে।”
স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতিকারীরা এ বিভ্রান্তিকে ‘নতুন অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে বলেও মত দেয় ফোরাম।
“খন্দকারের বহুল বিতর্কিত বইটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতিতে লিপ্ত দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীদের হাতে বিভ্রান্তি ছড়াবার নতুন অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে বলেও আমাদের আশঙ্কা। আমরা বইটির দ্রুত তথ্য সংশোধন ও পরিমার্জন আশা করছি।”
পাশপাশি বইটির ভুল তথ্যে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্যে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম।
ফোরামের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হারুন হাবীব স্বাক্ষরিত যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন ফোরামের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল কে এম সফিউল্লাহ, সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সি আর দত্ত, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু ওসমান চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল সামসুল আলম, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হারুন হাবীব, ম. হামিদ, মোহা. নুরুল আলম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল শাহজাহান, আনোয়ারুল আলম শহীদ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জিয়াউদ্দিন আহমেদ, মোহা. অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ পাটোয়ারী, ক্যাপ্টেন শাহাব ইউ আহমেদ, ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ, সৈয়দ সদরুজ্জামান হেলাল, অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান শওকত, সৈয়দ দিদারুল আলম, মোশাররফ হোসেন, ড. মমতাজউদ্দিন পাটোয়ারী, হাফেজ মৌলানা জিয়াউল হাসান ও তুষার আমীন।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন বেগবান করতে মুক্তিযুদ্ধের জীবিত সেক্টর কমান্ডারদের নিয়ে ২০০৭ সালে গঠিত হয় সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম।