সেই সঙ্গে ত্রিপুরার বামপন্থি সরকারকেও মার্কিনিরা দুর্বল করার তৎপরতা চালাচ্ছে বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন।
মার্কিনিদের এই তৎপরতার বিষয়ে ভারতের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের একজন প্রতিনিধি দেখেছেন, যাতে এই পরিকল্পনায় পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের সংশ্লিষ্টতা দেখা গেছে।
পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারকে হটাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পেয়েছিল বলে মনে করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজ্যসভায় তৃণমূলের এমপি আহমেদ হাসান ইমরান এবং টেকনাফ থেকে ভারতে পাড়ি জমানো মাওলানা আসিফ খান গত ছয় মাস ধরে খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাঠাচ্ছেন।
ভারতের ঊর্ধ্বতন এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব ও তাদের কর্মীদের হত্যা এবং জন অসন্তোষের মাধ্যমে বাংলাদেশে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিই মূল পরিকল্পনা।”
বিএনপি ও জামায়াত নেতারা বাংলাদেশে নতুন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছেন। আর যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবও নতুন নির্বাচনের পক্ষে।
মার্কিনিদের এই তৎপরতার সঙ্গে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও জড়িত রয়েছে বলে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা দাবি করেছেন।
গোয়েন্দারা বলছেন, তৃণমূলের এমপি মুনমুন সেন পাকিস্তানের তেহরিক-ই ইনসাফ নেতা ইমরান খানের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখে চলেন।
ইমরান ক্রিকেটার থাকার সময় সুচিত্রাকন্যা মুনমুনের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে বেশ আলোচনা ছিল। রাজনীতিক বনে যাওয়া ইমরান বর্তমানে তার দেশে নওয়াজ শরীফের সরকার হটানোর আন্দোলনে রয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে পাকিস্তান হাইকমিশনারের বৈঠকের পর কলকাতার একদল সাংবাদিকের পাকিস্তান সফরের ব্যবস্থাও হয়।
ওই সময় পাকিস্তানি হাইকমিশনার পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমদের পাকিস্তানি ভিসা পাওয়া সহজ করতে কলকাতায় ডেপুটি হাইকমিশন খোলার প্রস্তাব জানান মমতার কাছে। ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা অবশ্য ওই দাবি নাকচ করে দেন।
গোয়েন্দারা মনে করেন, কলকাতার উর্দুভাষীদের ভোট নিশ্চিত করতেই পাকিস্তানি কূটনীতিকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছেন মমতা।
পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম ভোটারদের ভোট বরাবরই কংগ্রেস ও সিপিএম পেয়ে আসছিল। এই বছরের পার্লামেন্ট নির্বাচনে তৃণমূলের জয়জয়কার হলেও মুসলিম ভোটের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা যায়নি।
কলকাতার উর্দুভাষী মুসলিমরা সবসময়ই মৌলবাদীদের সমর্থন করে থাকে। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সভা-সমাবেশেও তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা যায়।
ওই সম্পাদক কিছুদিন আগে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছে সূত্রটি।
ভারতে বর্তমানে ক্ষমতাসীন বিজেপির সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগ স্থাপনে ওই সম্পাদককে সহায়তা করছেন এক ব্যবসায়ী, যার বিরুদ্ধে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং-‘র’ এর হয়ে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে।
তবে বিজেপির জ্যেষ্ঠ অনেক নেতাই দলভুক্ত ওই সম্পাদকের তৎপরতায় নাখোশ হয়েছেন। তারা বলছেন, দলে নিজের গোষ্ঠীর মধ্যে তিনি বিএনপির একটি লবি তৈরি করছেন।
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির এক শীর্ষ নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী, কিন্তু মনে হচ্ছে এই মুসলিম সম্পাদক বিএনপি-বিজেপি শক্তিশালী সম্পর্ক তৈরির কাজটি নিজের কাঁধেই নিয়েছেন।”
মমতার মনোনয়নে রাজ্যসভার সদস্য হওয়া আহমেদ হাসান ইমরান সম্পর্কে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি নিষিদ্ধ স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়ার (সিমা) নেতা ছিলেন।
প্রতিবেদনে সংগঠনটির সঙ্গে মুসলিম সন্ত্রাসী দলগুলোর সম্পর্ক থাকার পাশাপাশি এমপি ইমরান কিভাবে সীমান্তপথে টাকা পাঠাচ্ছেন তারও বিবরণ রয়েছে।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, দণ্ডিত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং মীর কাসেম আলীর সঙ্গে ইমরানের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে।
ভারতীয় গোয়েন্দারা বলছেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধে সৌদি আরবের মতো শক্তিশালী ইসলামী দেশগুলোর সঙ্গে মিলে একাত্তরে পরাজিত পাকিস্তানও চেষ্টা চালাচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূলত ক্ষমতায় গেলে সেইন্ট মার্টিন দ্বীপে নৌঘাঁটি স্থাপনে অনুমতির প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় বিএনপি-জামায়াতকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভারতের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জেনেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে বর্তমানে লন্ডনে থাকা তারেক রহমানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বৈঠকও করেছেন।
মিয়ানমারের রাখাইন অধ্যুষিত এলাকা কাইয়ুকপিউতে চীনের বন্দর অবকাঠামো নির্মাণ এবং বাংলাদেশের প্রস্তাবিত সোনাদিয়া বন্দরের ওপর নজর রাখতেই এই নৌঘাঁটি স্থাপন করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের পর এখন বাংলাদেশ লাগোয়া ত্রিপুরার মানিক সরকার নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকারকে দুর্বল করে দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি সম্ভব হলে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে সম্পর্কে আগ্রহী ভারতের ওই রাজ্য সরকারকে উৎখাতের পরিকল্পনাও বাদ দিচ্ছে না।