গাজায় হামলার নিন্দায় বাংলাদেশের সংসদ

গাজায় ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়ে সর্বসম্মতভাবে প্রস্তাব গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2014, 04:53 PM
Updated : 18 Sept 2014, 04:39 PM

ইসরায়েলের ৫১ দিনের অভিযানে দুই হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পরে দশম সংসদের তৃতীয় অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার এই নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করা হল।

গাজায় অভিযানের সময় মন্ত্রিসভায় নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিল। ওই ঘটনার পর সংসদের প্রথম অধিবেশনেই একই প্রস্তাব গ্রহণ করা হল। 

গাজায় ইসরাইলের দখল করা ভূমি ফেরত এবং এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের দাবির প্রতি সমর্থনও জানিয়েছে সংসদ।

সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “ফিলিস্তিনির পাশে কেউ না থাকলেও বাংলাদেশ থাকবে।”

হামলার বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলে ১১৯ জন ইসরায়েলি সৈন্যকে হত্যার জন্য ফিলিস্তিনের কট্টরপন্থি দল হামাসের প্রশংসাও করেন সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ আলোচনার পর সরকার ও বিরোধী দল সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাবটি পাস করে।

গাজায় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতার সঙ্গে তুলনা করে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সববেদনা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।

“আমরা প্যালেস্টাইনি ভাই-বোনদের সাথে আছি। তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। দরকার হলে বাংলাদেশে নিয়ে এসে চিকিৎসা করব। এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত।”

ইসরায়েলি অভিযানে হতাহত শিশুদের ছবি দেখিয়ে সংসদ নেতা বলেন, এই শিশুরা কী অপরাধ করেছে?

“কত ছবি দেখাব? শুধু লাশ আর লাশ।আমি জানি মাননীয় স্পিকার, এটা সহ্য করা যায় না।”

ইসরায়েলি অভিযান প্রশ্নে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে নির্লিপ্ততার অভিযোগ এনে তিনি বলেন, “আমাদের দেশে যারা মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেন, তারা এখন চুপ। যারা আমাদের দেশে কিছু হলে চিঠি পাঠায়, তারাও চুপ।

“মানবাধিকারবিরোধী অপরাধীর ফাঁসি ঠেকাতে আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতিসংঘের মহাসচিব ফোন করেন, এখন তারা কোথায়?”

বেশ কয়েকটি ছবি দেখানোর পর হামলায় আহত শিশুদের একটি ছবি দেখিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এই ছবি দেখার পর আর বক্তৃতা দেয়া যায় না।

“ইসরায়েলের প্রতি ধিক্কার জানাই, নিন্দা জানাই। যারা ইসরায়েলকে সমর্থন করছে- তা প্রত্যাহার করুন। এই হামলার জন্য তাদের বিচার করা উচিত।”

ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার পরও মুসলিম বিশ্ব সরব না হওয়ারও সমালোচনা করেন ওআইসির সদস্য রাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

“আমার অবাক লাগে, মুসলিম উম্মা কেন চুপ? কিসের ভয়? মুসলিম উম্মা এক হলে ইসরায়েল এই আক্রমণ চালাতে পারত না।”

মধ্যপ্রাচ্যের এই সঙ্কট নিরসনে কার্যকর ভূমিকা নিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এটা বললে, ওটা বললে- চলবে না। কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে।”

ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবির প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন পুনরায় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “তাদের এই জায়গায় কেউ উড়ে এসে জুড়ে বসবে... ইসরায়েল তাই করছে।

“ইসরায়েল যে ভূমি দখল করে রেখেছে-তা ছেড়ে দিতে হবে। ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা দিতে হবে।”

সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ইসরায়েলকে সমর্থন দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেন।

“ওই দেশের নিন্দিত সরকার যা করে, তা ওই দেশের জনগণ সমর্থন করে না।”

“আমাদের দেশের তথাকথিত নোবেলজয়ীর চেহারা আজ উন্মোচিত হয়েছে,” এই প্রসঙ্গ ধরে মুহাম্মদ ইউনূসকে ইঙ্গিত করে বলেন তিনি।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেননও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার নিন্দা জানান।

প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার সমালোচনা করে বলেন, “তারা গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে কথা বলে, কিন্তু ইসরাইলের হামলা নিয়ে কিছু বলে না।”

সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ করে বলেন, “তারা আমাদের হিউম্যান রাইটস শেখাতে আসে। আমি আমেরিকাকে প্রশ্ন করতে চাই, পশ্চিমা মানবাধিকার সংগঠনগুলো কোথায়?

“জাতিসংঘকে বলি, আমেরিকার কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করেন। আন্তর্জাতিক আদালতে তাদের বিচার করতে হবে।”

সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য তারানা হালিম গাজা অভিযান নিয়ে পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমে ‘পক্ষপাতমূলক’ খবর প্রকাশের নিন্দা জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে সঠিক সংবাদ দেয়া হয়েছিল।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত,  স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ, তাহজিব আলম সিদ্দিকী, পীর ফজলুর রহমান, কাজী ফিরোজ রশীদ, রুস্তম আলী ফরাজী, হাছান মাহমুদ, এস এম আবুল কালাম আজাদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, ফজলে হোসেন বাদশা, নজীবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, মইনুদ্দিন খান বাদলও এই আলোচনায় অংশ নেন।