সাগর-রুনী হত্যা: জামিন মেলেনি তানভীরের

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার মো. তানভীর রহমানের জামিন আবেদন ফেরত দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2014, 08:25 AM
Updated : 2 Sept 2014, 08:25 AM

বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের বেঞ্চ মঙ্গলবার আবেদনটি ফেরত দেয়।

আদালতে আবেদনকারীপক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এএসএম নাজমুল হক।

এর আগে ২২ জুলাই একই বেঞ্চে এই আবেদনের উপর শুনানি হয়। ওইদিন আদালত আদেশ না দিয়ে ২ সেপ্টেম্বর পরবর্তী দিন রাখে।

ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানি করেন।

সেদিন ফাওজিয়া করিম আদালতে বলেন, তানভীরকে বিনা বিচারে আটক রাখা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। মামলার বিচার কাজও চলছে না। এই অবস্থায় জামিন পাওয়া তার অধিকার।

জবাবে মামলাটিকে ‘স্পর্শকাতর’ উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ মামলার তদন্ত চলছে। এ অবস্থায় আসামিকে জামিন দেয়া ঠিক হবে না।

এর আগে তানভীরের জামিন চেয়ে গত ১৩ জুলাই রিট আবেদন করেছিল মানবাধিকার কমিশন। ওইদিন বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চে শুনানিও হয়।

হাই কোর্ট ও বিচারিক আদালতে বারবার আবেদন করেও জামিন না পাওয়ার যুক্তি দেখিয়ে ‘ব্যতিক্রমধর্মী’ এই জামিনের আবেদন করা হয়। আইনজীবীদের দেয়া আদালতের পরামর্শে তানভীর জামিনের এই আবেদন করা হয়।

সাগর-রুনির কথিত পারিবারিক বন্ধু তানভীর রাজধানীর স্কলাসটিকা স্কুলের ডেপুটি ম্যানেজার ছিলেন। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করলে ২০১২ সালের ১০ অক্টোবর বিচারক তাকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠান। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই আছেন।

তার আইনজীবীর দাবি, তানভীরকে ওই বছরের ১ অক্টোবর আটক করা হলেও আদালতে হাজির করা হয় ১০ দিন পর।

বিচারিক আদালতে তানভীরের জামিন আবেদন নাকচ হলে তিনি হাই কোর্টে যান। ২০১৩ সালের ২ জুন হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ আবেদনটি ‘উপস্থাপিত হয়নি’ মর্মে খারিজ করে দেয়।

পরে একটি অবকাশকালীন বেঞ্চ স্বল্প সময়ের জন্য জামিন দিয়ে তা নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠায়। কিন্তু আদেশের অনুলিপি না পাওয়ায় সেই আদেশে কারাগার থেকে বের হতে পারেননি তানভীর। এরপর নিয়মিত বেঞ্চও তার জামিন বাড়ায়নি।

বিচারিক আদালত তার জামিন আবেদন আবারো নাকচ করলে তার আইনজীবীরা ফের হাই কোর্টে আসেন এবং গত এপ্রিলে তা আবারো উপস্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ হয়।

ছেলেকে ‘বিনা-বিচারে’ আটকে রাখার অভিযোগ এনে গত ৯ ফেব্রুয়ারি তানভীরের বাবা মাহবুবুর রহমান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করেন। সেই আবেদন বিবেচনায় নিয়েই কমিশন ও এর চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান রিট আবেদন করেন।

ফাওজিয়া করিম শুনানিতে বলেন, বাংলাদেশের আদালতে জামিনের জন্য রিট করে আদেশ পাওয়ার দৃষ্টান্ত না থাকলেও ভারতীয় আদালতে বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে নিজেদের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর এবং তার স্ত্রী এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রুনি।

হত্যারহস্যের কিনারা করতে না পারায় হাই কোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল মামলাটি পুলিশ থেকে র‌্যাবে স্থানান্তর করা হয়।

র‌্যাব তদন্তের দায়িত্ব নেয়ার পর সন্দেহভাজন ১৬ জনের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়। এছাড়া আলামত হিসেবে জব্দ করা ছুরি ও পোশাকের নমুনাও পাঠানো হয়। কিন্তু তাতেও খুনি সনাক্ত করা যায়নি।

হত্যাকাণ্ডের এক বছর আট মাস পর ঘটনায় ‘জড়িত’ আটজনকে চিহ্নিত করে সাতজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছিলেন তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। এর মধ্যে পাঁচজনই চিকিৎসক নেতা ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত নিতাই হত্যা মামলার আসামি।