গুম-অপহরণ আর সহ্য নয়: বিএনপি

আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস পালনে ঢাকায় মানববন্ধন করে ‘গুম-অপহরণ’ আর ‘সহ্য করা হবে না’ বলে সরকারকে হুঁশিয়ার করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2014, 06:55 AM
Updated : 2 Sept 2014, 09:32 AM

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর নয়া পল্টন সড়কে ২০ দলীয় জোটের উদ্যোগে এই মানববন্ধন হয়।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মানববন্ধনে অভিযোগ করেন, ‘‘আজ সারাদেশে এক ভীতিকর ও সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। গুম-অপহরণের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হচ্ছে। বিরোধী দলকে স্তব্ধ করতে সরকার তার রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে নির্যাতন চালাচ্ছে।’’

এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ আজকের মানববন্ধন কর্মসূচিতে ব্যাপক জনসমাগমই প্রমাণ করেছে- জনগন আর গুম-অপহরণ সহ্য করবে না। সরকারকে বলব, এটা বন্ধ করুন। দেশবাসীকে বলব- আসুন, নিরবে গুম-অপহরণ দেখার সময় আর নেই। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে।’’

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ঘোষিত ‘আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ’ দিবসের দিন ৩০ অগাস্ট এই মানববন্ধনের কর্মসূচি হওয়ার কথা থাকলেও সেদিন পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় এই কর্মসূচি মঙ্গলবার হলো। 

কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল রেস্তোরাঁর মোড় থেকে আরামবাগ সড়কের শেষ প্রান্ত নটরডেম কলেজ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে ২০ দলের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী ব্যানার-ফেস্টুন হাতে বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এই মানববন্ধনে অংশ নেন।

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীদেরও বড় আকারের ব্যানার হাতে মানববন্ধনে উপস্থিত দেখা যায়। তাদের ব্যানারে লেখা ছিল- ‘জামায়াত-শিবিরসহ বিরোধী দলের গুম হওয়া নেতা-কর্মীদের ফিরিয়ে দাও।’

মির্জা ফখরুল বলেন, “নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্রুত একটি নির্বাচন আয়োজনে বর্তমান সরকারকে বাধ্য করতে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর করতে হবে।”

বিশ্বব্যাপী গুম-অপহরণের প্রতিবাদে ও সচেতনতা তৈরিতে জাতিসংঘ ২০১১ সাল থেকে প্রতি বছর ৩০ অগাস্ট ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে ফর ভিকটিমস অব এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স’ পালন করে আসছে।   

এ জোটের নেতাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর চৌধুরী আলমসহ সারাদেশে তাদের ৬৫ জনেরও বেশি নেতা-কর্মী গুম হয়েছেন।

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘প্রতিদিন গুম হচ্ছে, রক্তপাত হচ্ছে। কেবল তাই নয়, আরো গুম করার জন্য তালিকা করা হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে। এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”

বিএনপির ‘নিখোঁজ’ সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর বড় ছেলে আবরাব ইলিয়াস অর্নব, খালেদ হাসান সোহেলের স্ত্রী শাম্মী সুলতানা, সম্রাট মোল্লার বোন কানিজ ফাতেমা রীতা, মো. সোহেল সরকারের বাবা শামসুর রহমান, তরিকুল ইসলাম তারার বাবা নুরুল ইসলাম, মাইনুল হাসানের বাবা সফর উদ্দিন, নিজাম উদ্দিন মুন্নার বাবা শামসুদ্দিন আহমেদ, জহিরুল ইসলামের মা হোসনে আরা বেগম, সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন মারুফা ইসলাম ফেরদৌসী, আদনানের বোন ফারহানা সুলতানাসহ ‘নিখোঁজ’ নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যরা এই মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন।

আবেগময় কণ্ঠে তারা ‘হারিয়ে যাওয়া’ স্বজনদের ফিরিয়ে দেয়ার আর্জি জানান।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান, এম কে আনোয়ার, আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, জ্যেষ্ঠ নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু, আবদুল মান্নান, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন,  বরকত উল্লাহ বুলু, সালাহউদ্দিন আহমেদ, রুহুল কবির রিজভী, আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, খায়রুল কবির খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামীমুর রহমান শামীম, মহানগর সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল এবং কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই মানববন্ধনে অংশ নেন।

২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ছিলেন ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির শফিউল আলম প্রধান, লেবার পার্টির মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ইসলামিক পার্টির আবদুল মোবিন ও সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ।

জোটের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আরো ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর অধ্যাপক তাসনীম আলম, আমিনুল ইসলাম, সেলিম উদ্দিন, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, খেলাফত মজলিশের সৈয়দ মজিবুর রহমান, এনডিপির আলমগীর মজুমদার, ডিএল-এর সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, মুসলিম লীগের জলফিকার বুলবুল চৌধুরী, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, জমিয়তে উলামা ইসলামের মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, লেবার পার্টির হামদুল্লাহ আল মেহেদি, ইসলামিক পার্টির আবদুল রশীদ প্রধান, কল্যাণ পার্টির এম এম আমিনুর রহমান, এনপিপির মুস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা।

এই কর্মসূচি ঘিরে সকাল থেকেই নয়া পল্টন সড়কের বিভিন্ন মোড়ে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।