সন্ত্রাস রুখতে সম্মিলিত উদ্যোগ চান প্রধানমন্ত্রী

‘বহুমাত্রিক সন্ত্রাস’ মোকাবেলায় সম্মিলিতভাবে এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2014, 05:59 AM
Updated : 2 Sept 2014, 10:16 AM

মঙ্গলবার সকালে রেডিসন হোটেলে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা প্রধানদের সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, “বিশ্ব আজ যে বহুমাত্রিক সন্ত্রাসী হুমকির সম্মুখীন, তা কোনো দেশের পক্ষে এককভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব নয়।

“এদের মোকাবিলার জন্য সবাইকে সম্মিলিতভাবে একে অন্যের সঙ্গে সহযোগিতা ও সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।”

যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক কমান্ড এবং বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা প্রধানদের সম্মেলনের সফলতাও প্রত্যাশা করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি আশা করি, এই সম্মেলনের মাধ্যমে আপনাদের পরস্পরের মধ্যে বিদ্যমান দেয়ালগুলো ভেঙে যাবে। আপনাদের মধ্যে দূরত্ব কমে যাবে এবং বোঝাপড়া বৃদ্ধি পাবে।”

সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘দ্য ফিউচার: চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড অপরচুনিটিস ফর সিকিউরিটি কো-অপারেশন’।

বর্তমান বৈশ্বিক পেক্ষাপটে এ সম্মেলন গুরুত্ব তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “বিশ্ব বর্তমানে একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশে দেশে উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠীর উত্থান ঘটছে। এসব জঙ্গি গোষ্ঠী সাধারণ মানুষের জানমালের পাশাপাশি বিশ্বশান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ।”

“বিশ্বশান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে এই উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠীর মোকাবিলা আজ শান্তিকামী দেশগুলোর জন্য একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ।”

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কোন হুমকিই আমাকে সন্ত্রাস এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নেওয়া অবস্থান থেকে সরাতে পারবে না।”

২০০৯ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণের কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমার বক্তৃতায় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার যে প্রতিজ্ঞা আমি করেছিলাম তাতে আমি আমৃত্যু অবিচল থাকব।”

সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি সন্ত্রাসবাদ বিস্তারের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা। বাংলাদেশের মাটিকে যাতে কোন বিদেশি উগ্রবাদের চারণভূমি হতে না পারে, সেজন্য আমরা কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছি।”
সন্ত্রাস দমনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, “সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে যেন মানবাধিকার অক্ষুণ্ণ থাকে তার জন্য কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছি।”
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে হত্যাকাণ্ড এবং ২০০৪ সালের ২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলার কথাও প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে তুলে ধরেন।
২০০৯ সালে জঙ্গি দমন ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত ১৭ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় কমিটি গঠন এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে নিষিদ্ধ ঘোষিত সকল সন্ত্রাসী দলকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার কথাও বলেন তিনি।
পাশাপাশি ২০০৯ সালে সন্ত্রাস বিরোধী আইন এবং ২০১২ সালে সন্ত্রাসবাদ বিস্তারে অর্থের জোগান বন্ধে অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন প্রণয়নের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি জানান, সন্ত্রাস এবং অপরাধ প্রতিরোধ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে দ্বিপক্ষীয় কার্যক্রম চালু রয়েছে।
“আমি সবসময়ই একটা কথা বলে থাকি- সন্ত্রাসীদের কোন নির্দিষ্ট সীমানা নেই। এরা দেশের শত্রু, দেশের মানুষের শত্রু, বিশ্ব মানবতার শত্রু। এরা বিশ্বশান্তির পথে অন্তরায়।”
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা গোয়েন্দা কাজের অন্যতম উদ্দেশ্য- উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “মনে রাখবেন, সন্ত্রাসীরা তাদের টিকে থাকার জন্য সর্বদাই উদ্ভাবনী শক্তিতে খুবই তৎপর। যখনই তাদের কোন একটা কর্মকৌশল উদ্ঘাটিত হয়, সাথে সাথে তারা নতুন কৌশলের উদ্ভাবন ঘটায়। কাজেই আপনাদের মিশন সত্যিই চ্যালেঞ্জিং।”
এই সম্মেলন শেষে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রয়োগযোগ্য নতুন নতুন কর্মকৌশল উদ্ভাবিত হবে বলেও আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আপনাদের মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। বিশ্বশান্তির শত্রুদের পরাজয় হবে এবং আমাদের বিজয় হবে।”

অনুষ্ঠানে তিন বাহিনীর প্রধান, ডিজিএফআই’য়ের মহাপরিচালক এবং ডিআইএ’র পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।