বাড়িতে বন্যার পানি থই থই করছে। ভূমিহীন শহীদ একই ঘরে পরিবার-পরিজন, গরু, রান্নার সামগ্রী, চুলা সবকিছু নিয়ে বসবাস করছেন। তার সম্পদের মধ্যে রয়েছে দুটি গরু। তাই সারা রাত জেগে পাহারা দেন গরু।
নিজের ও পরিবারের ক্ষুধার সঙ্গে গরুর খাবারের কথাও ভাবতে হয় সারাদিন। চারদিকে অথৈই পানি, কোথাও তো ঘাস নেই।
বগুড়ার ধুনটের গোসাইবাড়ী পূর্ব পাড়ার রাস্তার পাশে বানভাসি শহীদের সঙ্গে দেখা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধির।
একইভাবে বিনিদ্র রাত কাটছেন চুনিয়াপাড়ার আনসার, চান্দারপারার করিম, সারিয়াকান্দি দড়িপাড়ার মোকলেছের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সারিয়াকান্দির রহাদহ থেকে দড়িপাড়া, কুতুবপুর থেকে জোরগাছা, ধুনট সদর থেকে ১২ কিলোমিটার রাস্তার সহড়াবাড়ি পর্যন্ত এবং সারিয়াকান্দি রহাদহ থেকে ধুনট উপজেলার বানিয়াজান পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দুপাশে সারি সারি বন্যাদুর্গত মানুষের ছোট ছোট ছাউনি ঘর।
একই ঘরে স্ত্রী, সন্তান, গরু-ছাগল, হাস-মুরগি নিয়ে বসবাস তাদের। একই ঘরে চলছে রান্না ও খাওয়ার কাজ।
ধুনটের গুয়াডহরী গ্রামের বাছেদ জানান, “বন্যায় ঘরে পানি উঠেছে। তাই পাকা রাস্তার পাশে ছাউনি করে গরু-ছাগল-হাস-মুরড়ি নিয়ে খুবই কষ্টে আছি।”
চুনিয়াপাড়া গ্রামের শহীদ বলেন, “ঘরে পানি উঠেছে। গোসাইবাড়ি পূর্ব
পাড়ার রাস্তার পাশে অবস্থান করছি। রাত জেগে গরু পাহারা দেই। দু-চোখে ঘুম আসে না। গরুর খাবার যোগাতে পারছি না।”
শেষ সম্বল হলো দুটি গরু, যেগুলো চুরি হলে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না, বলেন তিনি।
চিথুলিয়া গ্রামের বাদশা মিয়া জানান, বন্যায় মাঠ পানিতে ভরে গেছে। কোথাও ঘাস নেই। আগে যমুনার চরে গিয়ে গরুর ঘাস নিয়ে আসতেন। কিন্তু চরে পানি উঠায় সে ঘাসও পাওয়া যাচ্ছে না। গরুর খাবার নিয়ে কষ্টে আছেন।
আগে বাজারে বিদেশি নেপিয়ার ঘাস কিনতে পাওয়া যেত। কিন্তু বন্যার কারণে এখন তাও পাওয়া যাচ্ছে না। ঘাসের পরিবর্তে বাজারে খড় পাওয়া যাচ্ছে। দাম দ্বিগুণ। আগে এক ভার খড় ১০০ টাকায় পাওয়া যেত। এখন সেই খরের দাম ২০০ টাকা।
“নিজের খাবারের টাকা নেই। গরুর খাবার কিনব কীভাবে?”
জোরখালি গ্রামের ঘাস বিক্রতা মো. ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, “৬ বিঘা জমিতে অন্য ফসল না করে বিদেশি নেপিয়ার ঘাসের চাষ করেছিলাম। কিন্ত সেই সব ঘাস বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। আমার মতো অনেকের একই অবস্থা।”
বগুড়া জেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তা আ ম শফিউজ্জামান জানান, সোমবার উপজেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করা হয়েছে। বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষদের খাদ্য হিসাবে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে।
তেমনি গবাদি পশু বাঁচাতে ত্রাণ হিসেবে ঘাস, খড় এবং দানাদার খাবার দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলকে জানানোর বিষয়ে সুপারিশ গ্রহণ করা হয়েছে।
“বন্যা এলাকায় গবাদি পশুর খাদ্যের তীব্র সংকট। আমাদের পশু সম্পদকে বাচাতে হবে,” বলেন তিনি।