বনানীতে নিজের ঘরে দম্পতির গুলিবিদ্ধ লাশ

রাজধানীর বনানী ডিওএইচএসের একটি বাড়ি থেকে এক দম্পতির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Sept 2014, 03:32 PM
Updated : 2 Sept 2014, 06:13 AM

স্ত্রী রোখসানা পারভীনকে হত্যার পর আব্দুর রব নামে ওই ব্যবসায়ী আত্মহত্যা করেন বলে ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।  

নিহত দম্পতির ছেলেও বলেছেন, ব্যবসায় মন্দার কারণে তার বাবা ও মায়ের মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল।

পঞ্চাশোর্ধ্ব এই দম্পতির তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। নয় বছরের ছোট মেয়েকে নিয়ে ওল্ড ডিওএইচএসের ৫ নম্বর রোডের ৬০/এ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন তারা।

আশপাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা জানান, সোমবার সন্ধ্যায় পাঁচতলা ওই ভবনের চতুর্থ তলায় হঠাৎ গুলির শব্দ পান তারা। পরে ওই দম্পতির মেয়ের চিৎকারে ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে দুজনকে মৃত দেখে থানায় খবর দেন।

খবর পেয়ে পুলিশের সঙ্গে র‌্যাব কর্মকর্তারাও সেখানে যান। সিআইডির ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দলও সেখানে যায়।

পুলিশ বাড়িটি ঘিরে রেখেছিল এবং কাউকে ঢুকতে দিচ্ছিল না।

ওই ভবনের অন্য একটি ফ্ল্যাটে স্বজনের কাছে আসা জাহিদ হাসান বেরিয়ে আসার সময় সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা শুনলাম, সন্ধ্যা বেলা তাদের ছোট মেয়েটি (৯ বছর) বাইরে খেলা শেষে বাসায় ফিরে দেখে তার বাবা-মা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।”

ঢাকা মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার কুদরাত-ই খুদা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তারা ঘরে ঢুকে দুটি লাশ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।

খবর পেয়ে বাবার বাসায় আসেন নিহত রব-রোখসানার ছেলে নাফিস আহমেদ। তারা তিন ভাই গুলশানে দাদার বাড়িতে থাকেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।

নাফিস সাংবাদিকদের বলেন, “আমার ছোট বোন বাইরে থেকে বাসায় ঢুকে বাবা-মাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। তার চিৎকারেই আশেপাশের লোকজন ছুটে আসে।”

ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নারীর লাশটি বিছানায় উপুড় হয়ে পড়ে ছিল, পাশেই মেঝেতে তার স্বামীর লাশ। তার পাশে পড়ে ছিল একটি আগ্নেয়াস্ত্র।

“ওই ব্যক্তির মাথায় একটি গুলির চিহ্ন রয়েছে। একটি অস্ত্রও রয়েছে। সব দেখে মনে হয়েছে, স্ত্রীকে হত্যার পর তিনি নিজের মাথায় গুলি চালান।”

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, রবের মাথার ডান পাশে গুলির চিহ্ন রয়েছে,যেখান থেকে রক্ত ঝরছিল। অস্ত্রটি পড়েছিল তার ডান পায়ের কাছেই।

আর বিছানায় উপুড় হয়ে পড়ে থাকা রোখসানার চশমাটি কপালে ওঠানো ছিল।

ঘটনাস্থল থেকে গুলির দুটি খোসা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার লুৎফুল কবীর। অস্ত্রটিও লাইসেন্স করা বলে জানান তিনি।

নাফিস বলেন, ব্যবসায় ধসের কারণে তার বাবা হতাশায় ভুগছিলেন। তাছাড়া ঋণের কারণে নানা দিক থেকে চাপও আসছিল।

“এসব নিয়ে ফ্যামিলিতে অশান্তি লেগে ছিল। মনে হচ্ছে, এ থেকেই মা-কে হত্যার পর বাবা আত্মহত্যা করে।”

রবের শিপিং ব্যবসা ছিল বলে নাফিস জানান। তবে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত নাফিসের কাছে ব্যবসার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানার অবকাশ এই সময় ছিল না।

পুলিশ বলছে, ব্যবসা নিয়ে সঙ্কটে থাকার কথা রবের বন্ধুদের কাছেও জেনেছেন তারা।  

ধারণা করা হলেও ময়না তদন্তের পরই এই দম্পতির নিহত হওয়ার কারণ স্পষ্ট হওয়া যাবে, বলেছেন পুলিশ কর্মকর্তা লুৎফুল কবির।