আইন-শৃঙ্খলা: প্রধানমন্ত্রীর ‘বিশেষ পদক্ষেপ’ চান রওশন

সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা সংসদে তুলে ধরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীকে ‘বিশেষ পদক্ষেপ’ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Sept 2014, 03:20 PM
Updated : 1 Sept 2014, 06:36 PM

তিনি বলেছেন, “মানুষকে ঘরে নিরাপদ থাকতে দিতে হবে। যেভাবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থির অবনতি ঘটছে তা জনগণ ভালোভাবে নিচ্ছে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, যেভাবে হোক কীভাবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয় সেটা দেখতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।”

চলতি সংসদের তৃতীয় অধিবেশনের প্রথম দিন সোমবার এক অনির্ধারতি আলোচনায় এ কথা বলেন জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রওশন। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও তার হাতেই রয়েছে।

ইসলামী ফ্রন্টের নেতা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে রওশন সংসদে বলেন, “যেমন করেই হোক, দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক। শাস্তি দেয়া হোক। জনগণ চায় এখানে  আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক। তা না হলে নির্বিচারে এসব ঘটনা ঘটতে থাকবে।”

বিরোধী দলীয় নেতার পর্যবেক্ষণ, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি হঠাৎ করেই খারাপের দিকে যাচ্ছে।

“সুপ্রিম কোর্ট জামে মসজিদের খতিব (ফারুকী) নিজের বাড়িতে খুন হয়েছে। পরের দিনও তিনটি খুন হয়। বাইরে সমস্য-বিশৃঙ্খলা দেখলে আমরা ঘরে ফিরি। কিন্তু নিরাপদ আশ্রয়ে এমন ঘটনা ঘটলে মানুষ কোথায় যাবে?

“বাড়ি থেকে লাশ উদ্ধার হয়। ডোবায় লাশ পাওয়া যায়। মনে হচ্ছে যেন খুন-গুম-হত্যা করলে বিচার হয় না।”

গত ২৭ অগাস্ট রাতে পূর্ব রাজাবাজারের বাড়িতে পরিবারের সবাইকে বেঁধে ইসলামী ফ্রন্টের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুকীকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এর একদিনের মাথায় মগবাজারের সোনালীবাগে এক বাড়িতে হামলা চালিয়ে তিনজনকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।

পরপর এ দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটলেও দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ রয়েছে দাবি করে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল রোববার সাংবাদিকদের বলেন, “সব দেশেই এ ধরনের ঘটনা কিছু না কিছু ঘটে। তা পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায়।”

বিরোধী দলীয় নেতা সংসদে বলেন, “গুলশানে দিনে দুপুরে ছিনতাই হলো। হতে পারে বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সুশাসন প্রতিষ্ঠা না হলে, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা না থাকলে এগুলো ঘটতেই থাকবে।”

খাদ্যে ভেজাল ও বিষ নিয়েও জনগণ আতঙ্কের মধ্যে গত ঈদ করেছে বলে মন্তব্য করেন এক সময়ের ফার্স্ট লেডি রওশন এরশাদ।

তিনি বলেন, “মানুষ ভয়ে ভয়ে সেমাই খেয়েছে, ভেজাল ছিল। কাপড়ের রঙ ছিল। খাসির মাংসের মধ্যে ফরমালিন। যদি এই ধরনের খাবার খাই তবে ঈদ কীভাবে উদযাপন হবে?”

“নজরুলের ‘রমজানের ওই রোজার শেষে’ গানটাই এখন খুশি। আর কিছু নেই।”

দেশে প্রতিবছরই বন্যা হলেও বিরোধী দলীয় নেতার মনে হচ্ছে- “এবার যেন বেশি হয়েছে।”

তিনি বলেন, বন্যায় দেশের কয়েকটি জেলার ১৫ লাখ মানুষ গৃহহীন। সরকারিভাবে ত্রাণ যা দেওয়া হচ্ছে তা অপ্রতুল। অনেক মানুষ না খেয়ে আছে।

বন্য পরিস্থিতি মোকাবেলা ও পুনর্বাসন কাজে সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

অনির্ধারিত এই আলোচনায় গত ৪ অগাস্ট মুন্সীগঞ্জের লঞ্চ দুর্ঘটনা নিয়েও কথা বলেন বিরোধী দলীয় নেতা।

তিনি বলেন, “নৌ দুর্ঘটনা ঘটছেই। ঈদের পরে ঘটতেই থাকে। স্বাধীনতার পর থেকে দুর্ঘটনা তদন্তে পাঁচশ কমিটি হয়েছে। তিনটির প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, বাকিগুলোর খোঁজ নেই। গুরুত্ব সহকারে দেখে না বলেই এসব ঘটনা ঘটছে।”

রওশন প্রশ্ন করেন,“যেহেতু নদীমাতৃক দেশ, কেন সতর্কতা গ্রহণ করি না?”

সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করারও আহ্বান জানান তিনি।

রওশন বলেন, “সম্প্রচার নীতিমালা করতে যাচ্ছেন। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে করা গেলে বিতর্ক হয় না। অনেক কিছু করা যায়। পরিবর্তন করা যায়। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নীতিমালা করলে গ্রহণযোগ্যতা পাবে।”

গত ১২ অগাস্ট সংসদ থেকে ভুয়া মেজর আটকের ঘটনা ‘সংসদের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে ফেলেছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এক বছর একজন ভুয়া মেজর কীভাবে সেখনে থাকল। এর দায় কার? কে আশ্রয় দিল? গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যেখানে থাকেন সেখানে নিরাপত্তা না থাকলে দেশের নিরাপত্তা কিভাবে দেখব?”

নিজের নির্বাচনী এলাকা ময়মনসিংহকে বিভাগ ঘোষণা করারও দাবি জানান বিরোধী দলীয় নেতা।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, “ময়মনসিংহ বিভাগ করতে হবে। না করলে হবে না। করতেই হবে।”

এসময় পেছন থেকে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু কিশোরগঞ্জের কথা বললে রওশন বলেন, “কিশোরগঞ্জ নেব না। শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা ময়মনসিংহ। এত বড় জেলা ডিভিশন হলো না, ছোট ছোটগুলো হয়ে গেল। এটা করে দিতে হবে।”