রাবির দুই নতুন বিভাগে শিক্ষকও দুজন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য চালু করা দুই বিভাগে বিভাগীয় প্রধান ছাড়া গত তিন মাসে কোনো শিক্ষক নিয়োগ করা হয়নি, ঠিক হয়নি কোনো পাঠ্যসূচি কিংবা শ্রেণিকক্ষ।

এস এম নাদিম মাহমুদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Sept 2014, 02:56 PM
Updated : 1 Sept 2014, 02:56 PM

এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে দুই বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করায় বিভাগ দুটির শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছে ভর্তিচ্ছুরাও।      

বিভাগ দুটি হলো ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক।

বিভাগীয় প্রধানরা হলেন ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্সের আব্দুল কুদ্দুস ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আবুল কাশেম।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চলতি বছরের ২৩ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে নতুন দুই বিভাগ চালুর নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।

পরদিন উপাচার্য মুহাম্মদ মিজানউদ্দিন ফাইন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসকে ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগের সভাপতি এবং ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেমকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের দায়িত্ব দেন।

পরবর্তীতে ওই দুই বিভাগের জন্য শ্রেণিকক্ষ দেয়ার কথা থাকলে তা দেয়া হয়নি। পঠন ও পরীক্ষা পদ্ধতি অনুসরনের জন্য নিদিষ্ট পাঠ্যসূচিও হয়নি গত তিন মাসে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি শিক্ষাবর্ষে ভর্তি কার্যক্রম ২৭ অগাস্ট থেকে শুরু হয়েছে, চলবে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এবার ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে বাণিজ্য অনুষদভুক্ত ‘ডি’ ইউনিটে ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগে ৪০ জন এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ই’ ইউনিটে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে আরো ৩০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হবে।

ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে নতুন দুই বিভাগে বাণিজ্য ও সামাজিক অনুষদের নিদিষ্ট শর্ত রাখা হয়েছে।

নতুন বিভাগের এই হাল শুনে অভিজিত পাল নামের এক ভর্তিচ্ছু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন দুই বিভাগ হয়েছে জেনে খুশি হয়েছি। এমনিতে আসন সংকট এর মাঝে এই দুইভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবে তা সুখের বিষয়। কিন্তু যখন শুনলাম এখনো কোনো শ্রেণিকক্ষ নেই, নেই কোনো শিক্ষক তখন খুব খারাপ লাগছে।”

আরেক ভর্তিচ্ছু ফারিয়া তাবাসুম মিথি বলেন, “আমি ইতিমধ্যে ওই বিভাগে ভর্তির জন্য বাণিজ্য অনুষদে আবেদন করেছি। এখন যদি বিভাগে শিক্ষকই না থাকে কিংবা শ্রেণিকক্ষই না থাকে তাহলে বিভাগে ভর্তি হয়ে কি ভাল করা সম্ভব?”

ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুসের মতে, “নতুন সংসার হলে টানপোড়ন হয় এটাই স্বাভাবিক।”

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাকে দায়িত্ব দেয়ার সময় শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষক দেয়ার কথা বলেছিল কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত দিতে পারেনি। শুধুমাত্র রবীন্দ্র ভবনে ৩২৬ নম্বর কক্ষটি সভাপতির জন্য বরাদ্ধ হয়েছে।”

ভর্তিচ্ছুদের শঙ্কার কথা জানালে তিনি দাবি করেন, বাণিজ্য অনুষদভুক্ত অন্যান্য বিভাগের চেয়ে তার বিভাগের চাহিদা অনেক বেশি হবে।

শিক্ষক নিয়োগের কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডিন আমজাদ হোসেন বলেন, “এটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দেখার বিষয়। তবে আমার কাছে যেটা মনে হচ্ছে অন্য বিভাগ থেকে শিক্ষক এনে ক্লাস নেয়া হতে পারে।”

সভাপতির কক্ষেই আপাতত ব্যাকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগের অস্থায়ী কার্যালয় করা হয়েছে বলে জানান এই অনুষদের প্রধান।

এদিকে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি আবুল কাসেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি এই বিষয়ে কোনো কথা বলবো না। আপনি (প্রতিবেদক) আমার সঙ্গে পরে একবার দেখা করবেন।”

ভর্তি কমিটির সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এন্তাজুল হক বলেন, “দুই সভাপতি নিয়োগের মাধ্যমে আমরা ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। উনারা (সভাপতিদ্বয়) বিভাগ চেয়েছে তাই নতুন দুই বিভাগ দেয়া হয়েছে আর তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তো সব কিছু জেনেশুনেই ভর্তি করাচ্ছে। সেখানে কোনো সমস্যা হবে কি না তা আমি বলতে পারব না।”

সবকিছু বিবেচনা করে হয়তো আগামীতে খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হতে পারে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মিজানউদ্দিন বলেন, “আমরা ওই দুই বিভাগের উন্নয়নে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়নি তবে তা নিয়োগ করা সময়ের ব্যপার মাত্র।”