তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হত্যাকাণ্ডের মোটিভ এখনো ক্লিয়ার না।”
ইসলামী ফ্রন্ট ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের কেন্দ্রীয় এই নেতার খুনিদের গ্রেপ্তার দাবিতে এদিন সারাদেশে আধাবেলা হরতাল করে ইসলামী ছাত্র সেনা।
গত ২৭ অগাস্ট রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের বাসায় গলা কেটে হত্যা করা হয় টেলিভিশনে ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ফারুকীকে।
হত্যাকাণ্ডের পর তার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সুন্নিবাদী এই নেতাকে হত্যার পেছনে ভিন্ন মতাবলম্বীরা জড়িত।
পুলিশ কর্মকর্তা নাজমুল বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। অন্যান্য খুনের ঘটনার চেয়ে আলাদা। সব কিছু বিবেচনা করে তদন্তকে এগিয়ে নিতে চাই।”
মতাদর্শগত, ব্যবসায়িক, পারিবারিক- যে কোনো বিরোধ থেকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।
“বিভিন্ন বিষয়কে আমলে নিয়েই আমরা কাজ করছি,” বলেন তিনি।
মতাদর্শিক বিরোধ থেকে ফারুকীকে আগেও হুমকি দেয়া হয়েছিল বলে তার ভক্তরা জানায়। কয়েকজন টিভি উপস্থাপককেও সন্দেহের কথা বলে আসছে ছাত্র সেনা নেতারা।
ফারুকী হজে লোক পাঠাতেন, হজে যাওয়ার কথা বলেই তার বাড়িতে সেদিন খুনিরা ঢুকেছিল। এছাড়া তার দুটি সংসার রয়েছে। দ্বিতীয় স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে তিনি রাজাবাজারের বাড়িতে থাকতেন।
এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে এক নারীসহ তিনজনকে ইতোমধ্যে আটক করেছে পুলিশ। এদের দুজনকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এবং একজনকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে ধরা হয়।
এর মধ্যে আটক মাহমুদা খাতুন খুন হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে ফারুকীর বাড়িতে গিয়েছিলেন, তবে তার আচরণ সন্দেহজনক ছিল বলে ফারুকীর পরিবারের দাবি।
মাহমুদাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। কোনো তথ্য মিলছে কি না- জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (পশ্চিম)আশিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তার সঙ্গে কথা বলার পর দুটি ব্যাপার একটু ভাবিয়েছে। এগুলো নিয়ে তাকে আরো বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”
স্বামীর মৃত্যুর পর সাতক্ষীরা ছেড়ে জীবনের অধিকাংশ সময় নারায়ণগঞ্জে কাটানোর পরও মাহমুদা কেন সাতক্ষীরায় জমি কিনতে গেলেন, তা পুলিশের কাছে প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
মাহমুদা পুলিশকে বলেছেন, সাতক্ষীরায় তার দুই ভাই আবদুর গফুর ও আবদুর রহিম থাকেন। তাই সেখানে জমি কিনেছিলেন তিনি। আর ধর্মীয় বিষয়ে জানতে আলেম হিসেবে ফারুকীর বাসায় থাকতে চেয়েছিলেন তিনি।
মাহমুদার বাড়ি সাতক্ষীরার তালতলা গ্রামে। বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় স্বামীর মৃত্যু হলে ১৯৮৩ সালে মাহমুদা তার পাঁচ বছরের ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় এসে মিরপুরের এক গার্মেন্টসে চাকরি নেন।
প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়াশোনার পর মাহমুদার ছেলে বিয়ে করার পর তার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান।
ওই দূরত্ব কমাতেই ফারুকীর কাছে গিয়েছিলেন বলে মাহমুদা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।
শনিবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া থেকে মাহমুদার সঙ্গে শরিফুল ইসলাম নামে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দুজনকেই রোববার রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। শনিবারই কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ইউসুফ নামে আরেকজনকে।
শফিকের বিষয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তা আশিকুর রহমান বলেন, নারায়ণগঞ্জের একটি টেইলার্সে কাজ করেন তিনি। মাহমুদা তার কাছে কাপড় কাটার কাজ শিখতেন।
হত্যাকাণ্ডের রাতেই নিহতের ছেলে ফয়সাল ফারুকী অজ্ঞাতপরিচয় ৭/৮ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা দায়ের করেন। গোয়েন্দা পুলিশ তার তদন্ত করছে।