নতুন এলাকা প্লাবিত, ত্রাণ বিতরণ চলছে

প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে চলা বন্যায় দেশের কয়েকটি জেলায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে বানভাসি লাখ লাখ মানুষ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2014, 02:45 PM
Updated : 31 August 2014, 02:45 PM

বগুড়া ও ফরিদপুরে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। চাঁদপুরে মেঘনার প্রবল স্রোতে ভেঙে গেছে শহররক্ষা বাঁধ। জামালপুর ও সিরাজগঞ্জে পানিবন্দি হয়েছে কয়েক লাখ মানুষ। কুড়িগ্রামে চলছে ত্রাণ না পাওয়ার হাহাকার।

শেরপুরে বন্যার পানিতে ডুবে স্কুল ছাত্রসহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। শরীয়তপুরে অন্তত ১২টি বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে।

রোববার কুড়িগ্রামে ত্রাণ বিতরণ করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।

বগুড়ার নতুন এলাকায় প্লাবন, পানিবন্দি দেড়লাখ

বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। তলিয়ে গেছে সাড়ে দশ হাজার হেক্টর জমির ফসল।

সারিয়াকান্দির রোহাদহের ভাঙন দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। সারিয়াকান্দির উত্তর ও ধুনট উপজেলার রাস্তাঘাটে পানি উঠে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ঘণ্টায় ঘণ্টায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

এরইমধ্যে সারিয়কান্দির চন্দনবাইশা, কামালপুর ইউনিয়ন, ধুনটের চিকাশি, গোসাইবাড়ি, এলাঙ্গী, কালেরপাড়া, নিমগাছী ইউনিয়নে ফসলি জমিসহ বহু ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে।

ধুনটের গোসাইবাড়ি, চিকাশি, নিমগাছী, সারিয়াকান্দির চন্দনবাইশা, কামালপুর ইউনিয়নের কাঁচা ও পাকা রাস্তায় পানি ওঠায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. আরিফুজ্জমান জানান, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে সাড়ে দশ হাজার হেক্টর। কাঁচা ও পাকা মিলে মোট ৮৩ কিলোমিটার রাস্তা তলিয়ে গেছে।

বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান ও বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান জানান, “ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সব ধরনের সহযোগিতার জন্য নিজেরাই সরকারি অন্যান্য কর্মকর্তাদের পাশপাশি মাঠ পর্যায়ে রাতদিন অবস্থান করছি।

“ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য ঢাকায় যোগাযোগ অব্যহত রেখেছি।”

চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধে ধস

মেঘনার প্রচণ্ড স্রোতে রোববার দুপুরে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের ১৫ ফুট দেবে গেছে। এ সময় বাঁধের ২০/২৫টি ব্লক হঠাৎ দেবে যায়।

এতে শহর রক্ষা বাঁধটি বেশ ঝুঁকিতে পড়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই স্থানে বালির বস্তা ফেলা শুরু করেছে। শহররক্ষা বাঁধের বড় স্টেশন এলাকার সকল স্থাপনা সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিক উল্যাহ জানান, রোববারও মেঘনা নদীর পানি বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

দেবে যাওয়া শহররক্ষা বাঁধের অংশ মেরামতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।

ঘটনাস্থলে থাকা চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ আলম সিদ্দিকী জানান, শহররক্ষা বাঁধের বড় স্টেশন এলাকাটিকে ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে এখানে লোকজনের চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

যেই স্থানটি মেঘনার স্রোতে দেবে গেছে সেখানে বালিভর্তি ব্যাগ ফেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ আলম সিদ্দিকী, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র নাসির উদ্দিন আহমেদ, চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিক উল্যাহসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

জামালপুরে চার লাখ মানুষ পানিবন্দি

জামালপুরে পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে চার লাখেরও বেশি মানুষ।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নব কুমার চৌধুরী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৫২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

অন্যদিকে ব্র‏হ্মপুত্রের পানি বিপ সীমার নীচে থাকলেও বৃদ্ধি পেয়েছে ১৬ সেন্টিমিটার।

স্থানীয়রা জানান, জেলার ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মাদারগঞ্জ, সরিষাবাড়ি, মেলান্দহ, বকশিগঞ্জ ও সদর উপজেলার ৪০টি ইউনিয়নের বাসিন্দারা বন্যার কবলে অসহায় হয়ে পড়েছে।

বিভিন্ন বাঁধ ও উচু স্থানে আশ্রয় নিলেও বিশুদ্ধ খাবার পানি, শুকনো খাবার ও গবাদি পশুখাদ্যের সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো. শাহাবুদ্দিন খান জানান, বন্যার্তদের সহায়তার পাশাপাশি বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।

সরকারি হিসাবে জেলায় ৮৩ হাজার ৫৩৫টি পরিবারের ৪ লাখ ৬ হাজার ৯৯২ জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছে বলে তিনি জানান।

তাদের সাহায্যে সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত ১৬২ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।

বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে জামালপুর জেলা প্রশাসন।

রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় জেলার বন্যা পরিস্থিতি ও বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করা হয়।

সভায় সাংবাদিকরা বন্যার্তদের সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ তৎপরতা আরো বৃদ্ধি করার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও কৃষি পুনর্বাসনের দাবি জানান।

কুড়িগ্রামে পাঁচ লাখ মানুষ বন্যা কবলিত

কুড়িগ্রামে পাঁচ লাখ মানুষ বন্যা কবলিত হয়েছে। ঘরে ঘরে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। ডুবে গেছে ২০০ একর রোপা আমন ক্ষেত।

রোববার ব্রক্ষপুত্রের পানি বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

ভোরে রৌমারীর শিবের ডাঙ্গি এলাকায় ডিসি রাস্তার ৮০ ফুট পানির তোড়ে ভেঙে যাওয়ায় নতুন করে প্লাবিত হয়েছে ৭টি গ্রাম। রৌমারীর সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।

প্লাবিত গ্রামগুলো হলো-শিবেরডাঙ্গি দক্ষিণ পাড়া, শিবেরডাঙ্গি উত্তর পাড়া, শিবেরডাঙ্গি পূর্ব পাড়া, পূর্ব মরিচা কান্দি, উত্তর মরিচা কান্দি, দক্ষিণ মরিচা কান্দি ও বালিয়ামারী। এতে ১২শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া শিবেরডাঙ্গি ব্রিজের দুপাশের রাস্তা ধসে গেছে।

রৌমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মজিবর রহমান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ খান দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

কিছু কিছু জায়গায় ত্রাণ পাওয়া গেলেও অনেকেই না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

ত্রাণ সহায়তার প্রতি প্যাকেজে ছিল চাউল ১৫ কেজি, চিড়া ২ কেজি, গুড় আধা কেজি, লবণ আধা কেজি, গ্যাস লাইট ১টি, ওরাল স্যালাইন ১ বাক্স, ও পানি বিশুদ্ধ করণ ট্যাবলেট ১ পাতা।

এ প্যাকেজ একসঙ্গে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা পঙ্গু জহির উদ্দিন। খাটো হাল্ল্যাহ এলাকার এ মনুষটি গত ১৬ দিন থেকে বাড়িতে মাচা করে ছিলেন। ভিক্ষা তার পেশা। বন্যার কারণে ৩ জনের এ সংসারে অর্ধাহার অনাহারে ছিলেন।

ত্রাণের বস্তা বুকে জড়িয়ে বলেন, “খুব শান্তি লাগছে। ৬ দিন চলবে এ ত্রাণে।”

অনন্তপুরের অজবালা (৮০) বলেন, “কদিন থাকি ভাতের নাগাইল পাই না। এ বাড়ি ওবাড়ি খুঁজি খাই। মন্ত্রীর হাত থাকি পেটের ধন (চাউল) পায়া মন ভরি গেছে।”

নীলকন্ঠের তারামনি বেওয়ার সহায় সম্বল কিছুই নেই। অন্যের বাড়িতে আশ্রিত। ত্রাণ পেয়ে আনন্দ আর ধরে না।

“আমারে যারা অন্ন দিচ্ছে আল্লাহ তারে শান্তি দেবে,” বলেন তিনি।

অপরদিকে ত্রাণ না পাওয়াদের মনের অবস্থা অন্যরকম।

“হামার নাম ন্যাকো বাহে। এক গালা পানিত ডুবি আছি। ইলিপ জোটে নাই কপালোত। মন্ত্রী আইল তাও হামার নাম নাই,” গাবুরজান এলাকার মৃত শুকারু মামুদের বিধবা স্ত্রী মমেনা বেগম সাংবাদিকদের গাড়ির গতি রোধ করে এসব কথা বলেন।

একই এলাকার ছোলেমা বেওয়াও ত্রাণ না পেয়ে কষ্টের কথা জানান।

মোফাজ্জল হোসেন মায়ার ত্রাণ বিতরণ

রোববার কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের বাগুয়া অনন্তপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ত্রাণ বিতরণ করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।

মন্ত্রীর আসার খবর শুনে শত শত নারী পুরুষ ভির করে ত্রাণের আশায়।

মন্ত্রী কয়েকজনের হাতে ত্রাণ তুলে দিয়ে চলে যান। এরপর শুরু হয় না পাওয়া মানুষের হৈচৈ।

উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে মাত্র ৪০০ মানুষর নামের তালিকা তৈরি করে ইউনিয়ন পরিষদ। এর বাইরে রয়েছে হাজারো না পাওয়া মানুষ।

এসব অসহায় মানুষ দল সাংবাদিকদের গাড়ি ঘিরে ধরে জানায় অভিযোগের কথা।

গাবুরজান গ্রামের কাঞ্চন মালা অভিযোগ করেন, ১৬ দিন থেকে তিনি বন্যায় হাবুডুবু খাচ্ছেন। চেয়ারম্যান মেম্বার কেউ খোঁজ নেয়নি। পরিবারের একমাত্র সম্বল ৩টি ভেড়া খাদ্যভাব ও অসুস্থ্য হয়ে মরে গেছে গত শুক্রবার। এখন ঘরে নিজেরও খাবার নেই।

ত্রাণ না পেয়ে রাস্তায় গরু ছাগল নিয়ে ১০ দিন থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন একই এলাকার আবেদ আলীর স্ত্রী আমিনা বেগম।

তিনি বলেন, “কষ্টে আছি। হাস-মুরগিও বিক্রি করা শেষ। এখন বিক্রি করার মতো আর কিছু নেই।”

তার আকুতি, “মোর নামটা একনা নেকি দেন বাহে। ইলিপ না হইলে ছাওয়া-পোয়া নিয়া মরি যামো।”

কলিমা, খায়রুন বেওয়া জানান, বাড়িতে খাবার নেই। হাতে টাকাও নেই। ধারও কেউ দিতে চায় না। পানিতে থাকতে থাকতে হাতে পায়ে ঘা হয়েছে।     

কাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন জানান, চার হাজার পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। এখন পর্যন্ত ১৬ মেট্রিক টন চাল এক হাজার ৪০০ পরিবারকে দেয়া সম্ভব হয়েছে। আরো ৬ টন চাল ২/১ দিনের মধ্যে পাওয়া যাবে। ত্রাণ স্বল্পতার কারণে সবাইকে ত্রাণ দেয়া যায়নি। বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে সবাইকে ত্রাণের আওতায় আনা হবে।

মন্ত্রীর সঙ্গে আসা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উল আলম বলেন, “কুড়িগ্রাম থেকে দেশের প্রথম বন্যার সৃস্টি হয়। তাই ১৫ অগাস্ট বন্যা শুরুর প্রথমেই ত্রাণ তৎপরতা শুরু করি। এ কারনে এবার বন্যায় মানুষ মারা যায়নি। পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা দেয়া সম্ভব হয়েছে।”

মানুষের হাতে কাজ দিতে পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে শুরু হবে অতি দরিদ্রদের জন্য ১০০ দিনের কর্মসূচি। এছাড়া টেস্ট রিলিফসহ অন্যান্য কার্যক্রম হাতে নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া কুড়িগ্রামের চিলমারী ও উলিপুর উপজেলার বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন এবং ৮ শতাধিক বানভাসি মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন।

সিরাজগঞ্জে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি

যমুনার পানি সামান্য কমলেও সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। রোববার সকালে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

বন্যার পাশাপাশি বৃষ্টিতে বন্যা কবলিতদের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে ডায়রিয়া, আমাশয়সহ পানিবাহিত নানা রোগ বাড়ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল চন্দ্র শীল জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ৭ সেন্টিমিটার কমেছে। জেলার কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, শাহজাদপুর, চৌহালী উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ এখন পানিবন্দি।

কাজিপুর উপজেলার মেঘাই রিং বাধ ভাঙায় নতুন করে ৩টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ বন্যা কবলিত রয়েছে।

এদিকে, সিরাজগঞ্জ-কাজিপুর আঞ্চলিক সড়কের মেঘাই এলাকায় সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। 

শরীয়তপুরে ১২ বিদ্যালয় বন্ধ  

পদ্মা নদীর সুরেশ্বর পয়েন্টে ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে শরীয়তপুরের নড়িয়া, জাজিরা ও ভেদরগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের ১৪টি ইউনিয়নের ৬০টি গ্রামে প্লাবিত হয়েছে।

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার অনেক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ইতোমধ্যে প্লাবিত হওয়ায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আলেয়া ফেরদৌস শিখা বলেন, বন্যার কারণে শরীয়তপুরের ১০/১২টি স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পানি বাড়লে আরো অনেক স্কুলেই পানি উঠবে এবং অনেক স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে।

সামনে সমাপনী পরীক্ষা, তাই অনেক ছাত্র-ছাত্রীর পড়াশুনার ক্ষতির আশংকা করছেন তারা।

শেরপুরে পানিতে ডুবে ৩ জনের মৃত্যু

শেরপুরে বন্যার পানিতে ডুবে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

এরা হলেন সদর উপজেলার বলাইর চর ইউনিয়নের চরশ্রীপুর গ্রামের  জানিক মিয়ার ছেলে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র আব্দুর রশীদ (১৪), চরভাবনা কান্দাপাড়া গ্রামের মৃত কিতাব আলীর ছেলে কৃষি শ্রমিক সমেজ উদ্দিন (৩৫) ও চরশেরপুর ইউনিয়নের যোগিনী মোড়া খড়িয়াপাড়া গ্রামের  জমশেদ আলী (৫৫)। 

স্থানীয়রা তিন জনের মৃত্যুর কথা বললেও শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আইরীন ফারজানা দুইজনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছেন।

সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইলিয়াছ উদ্দিন জানান, স্কুল ছাত্র আব্দুর রশীদ মামা বাড়িতে বেড়াতে এসে চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের পোড়াদোকানের কাছে বন্যার পানিতে শনিবার বিকালে গোসল করতে নামলে স্রোতে ভেসে যায়। রোববার সকালে ডুবুরিরা তার লাশ উদ্ধার করে।

চরমোচারিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম শিপন জানান, শনিবার সন্ধ্যায় চরভাবনা এলাকায় কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে কৃষি শ্রমিক সমেজ উদ্দিন বন্যার পানি সাঁতরে তীরে ওঠার সময় ডুবে মারা যান।

এলাকাবাসী জানান, শনিবার সন্ধ্যায় মৃগী খালের বন্যার পানিতে গোসলে নেমে ডুবে মারা গেছেন যোগিনিমোড়া খড়িয়াপাড়া গ্রামের জমশেদ আলী (৫৫)।

শেরপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইলিয়াছ উদ্দিন বন্যা কবলিত চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন শেষে রোববার বিকালে জানান,  পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের পানি প্রবেশ করায় অন্তত ৪০টি গ্রামে বন্যা দেখা দিয়েছে।

ফরিদপুরে নিম্নাঞ্চলে প্লাবন

গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদী পানি ৫ সেন্টিমিটার বেড়ে গোয়ালন্দ পয়েন্টে বিপদসীমার ২৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

গত কয়েকদিনে সদর, চরভদ্রাসন ও সরদপুর উপজেলার শতাধিক গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি, কয়েশ একর ফসলি জমি।

ফরিদপুর জেলা প্রশাসক সরদার সরাফত আলী জানান, বন্যার কারণে ৬টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে, এছাড়া প্রধামন্ত্রীর নির্দেশে প্রতিদিন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে জরুরি ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।

যেসব এলাকাগুলোতে বেশি পানি প্রবেশ করেছে সে সকল জায়গায় উঁচু স্থানে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সদর উপজেলার চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামিম মন্ডল জানান, তার ইউনিয়নের ১২টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

</div>  </p>