৭ খুন: ডিআইজি নুরুজ্জামানকে দেড় ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ

নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনায় পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এস এম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামানকে দেড় ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2014, 11:13 AM
Updated : 31 August 2014, 01:11 PM

সচিবালয়ে কমিটির প্রধান শাহজাহান আলী মোল্লার কক্ষে রোববার বেলা আড়াইটা থেকে ৪টা পর্যন্ত এই পুলিশ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদের পর নুরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, “ওই ঘটনা সম্পর্কে যেসব বিষয় আমি জানি তা কমিটিকে বলেছি। কমিটি আমার কাছে যেসব বিষয়ে জানতে চেয়েছে তাও তাদের জানিয়েছি।”

এছাড়া সাত খুন নিয়ে নিজের কিছু মতামতও কমিটির কাছে তুলে ধরেছেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

শাহজাহান সাংবাদিকদের জানান, সাত খুনের ঘটনায় কারা জড়িত থাকতে পারে এবং ওই ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো গাফিলতি ছিল কি না- এসব বিষয়ে কমিটি ডিআইজির কাছে জানতে চেয়েছে।

আগামী ৯ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া সম্ভব হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ওই দিন তারা আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন দেবেন।

“তদন্তে যথেষ্ট অগ্রগতি আছে। চারশর মতো মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। অনেক ডকুমেন্টও সংরক্ষণ করেছি।”

তদন্ত কমিটির প্রধানের ভাষায়, এই হত্যা মামলা যথেষ্ট ‘জটিল’। তারপরও তারা ‘সুষ্ঠু তদন্তের’ চেষ্টা করেছেন।

সাত খুনের ঘটনায় র‌্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্তে হাই কোর্টের নির্দেশে গত ৭ মে এই তদন্ত কমিটি করে সরকার।

নারায়ণগঞ্জের অপহরণ ও হত্যার সঙ্গে প্রশাসনের কোনো সদস্য বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা বা সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না- গণতদন্তের মাধ্যমে তাও উদঘাটন করবে কমিটি।

অপহৃত ব্যক্তিদের জীবিত উদ্ধারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো অবহেলা বা গাফিলতি ছিল কি না- কমিটিকে তা খতিয়ে দেখতে বলেছে আদালত।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম গত ২৭ এপ্রিল অপহৃত হন। পরে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

অপহরণের ঘটনার পরপরই নজরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা করা হয়। নূর হোসেন র‌্যাবকে ছয় কোটি টাকা দিয়ে সাতজনকে হত্যা করিয়েছেন বলে নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেন।

শুরুতে অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদ মাধ্যমে বক্তব্য দিলেও অপহৃতদের লাশ উদ্ধারের পর লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান নূর হোসেন। পরে দুই সহযোগীসহ তিনি পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হন।

র‌্যাবের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠার পর র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন এবং লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এমএম রানাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। গ্রেপ্তার হওয়ার পর কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে নিজেদের ‘দোষ স্বীকার’ করে আদালতে তারা জবানবন্দিও দেন।

এই সাত খুনের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাংসদ শামীম ওসমান ও মেয়র সেলিন হায়াত আইভীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্ত কমিটি।