শার্শায় নারীর মুখে সোনালী হাসি

যশোরের শার্শা উপজেলার সামটা গ্রামের রেঞ্জুয়ারা খাতুন, আকলিমা খাতুন, বারিছোন বিবি আর টেংরা গ্রামের তছলিমা খাতুন, খুকুমনির এখন দম ফেলার সময় নেই। পাট ধোয়া আর আঁশ ছাড়ানোর কাজে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত তারা।

আসাদুজ্জামান আসাদ, বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2014, 07:34 AM
Updated : 31 August 2014, 07:37 AM

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে শার্শায় পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও পাটকাঠি থেকে আঁশ ছাড়ানোর কাজে অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ১৩ হাজার নারী। পুরুষদের পাশাপাশি এই কাজে অংশ নিয়ে কিছুটা বাড়তি আয়ের মুখ দেখছেন তারা।

বেনাপোলের বারোপোতা গ্রামের জরিনা বেগম জানান, এক আঁটি পাট ছাড়ালে পাওয়া যায় ১৮ টাকা। একজন নারী দিনে ২০ থেকে ৩০ আঁটি পাটের আঁশ ছাড়াতে পারেন। অন্য সময় ক্ষেতমজুর হিসেবে কাজ করলে যে টাকা মেলে, পাট ধোয়ার কাজে পাওয়া যায় তার তিনগুণ বেশি টাকা।

এ কারণেই সংসারের কাজের পাশাপাশি পাট মৌসুমে পাট ছাড়ানোর কাজে যোগ দিচ্ছেন নারীরা। অনেকে আবার কাজটি করছেন পাটকাঠি নেয়ার শর্তে। এতে সংসারের ব্যয় নির্বাহে কিছুটা হলেও সহযোগিতা করতে পারছেন তারা।

শার্শা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষিবিদ হীরক কুমার সরকার জানান, উপজেলায় দুই হাজার নারী নিজের জমিতে চাষাবাদ করেন। অন্যের জমিতে মজুর হিসেবে কাজ করেন আরো প্রায় চার হাজার নারী।

“তবে মৌসুমে পাটকাঠি থেকে পাট ছাড়ানোর কাজ করেন এ জনপদের প্রায় ১৩ হাজার নারী।”

এদিকে উপজেলার অনেক হাট-বাজারে শুরু হয়েছে আগাম পাট বিক্রি।

পুটখালির পাটচাষী আব্দুর রহিম জানালেন, প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকায়। প্রতি আঁটি পাটকাঠি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।

উপজেলার স্বরূপদাহ গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান জানান, মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় চার বিঘা জমিতে লাগানো পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। তবে পরে বৃষ্টি হওয়ায় ফলন ‘মোটামুটি ভালোই’ হয়েছে।

চার বিঘা জমি থেকে পাওয়া ৫০ মণ পাট এবার ভালো দামে বিক্রি করতে পারবেন বলেই তিনি আশা করছেন।

এ বছর সাড়ে তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করা বেনাপোলের বড় আচড়া গ্রামের কৃষক সাজেদুর রহমানও ভালো দাম পাওয়া আশায় রয়েছেন।

কৃষি কর্মকর্তা হীরক বলেন, “এবার উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম জমিতে পাট চাষ হয়েছে। শার্শায় পাট চাষের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমির বিপরীতে চাষ হয়েছে ৪ হাজার ৮৫০ হেক্টরে।”

মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি কম হওয়ায় পাটের আবাদ শুরু হয় কিছুটা দেরিতে। তবে পরে বৃষ্টি হলেও কৃষকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি বলে মনে করেন তিনি।

হীরক বলেন, “পাট চাষে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়েছে কৃষি বিভাগ। সব মিলিয়ে উপজেলায় পাটের ভালো ফলন হয়েছে। আশা করছি কৃষক ভালো দাম পাবেন।