বিক্ষোভ-মিছিলে শেষ হলো ছাত্রসেনার হরতাল

ঢাকা, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে ইসলামী ছাত্রসেনার আধা বেলা হরতাল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2014, 02:50 AM
Updated : 31 August 2014, 09:31 AM

ইসলামী ফ্রন্ট নেতা নুরুল ইসলাম ফারুকীর খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে সারা দেশে সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত এই কর্মূচিতে দেশের কোথাও বড় কোনো গোলযোগের খবর পাওয়া যায়নি।

তবে চাঁদপুরে হরতালকারীরা একটি ট্রেন প্রায় এক ঘণ্টা আটকে রাখে। চট্টগ্রাম নগরীতে যানবাহন চলাচলেও বাধা দেয় তারা।

সকাল থেকে দূর পাল্লার কোনো বাস না ছাড়লেও হরতালে রাজধানীতে গণ পরিবহনের চলাচল ছিল অনেকটাই স্বাভাবিক।

সদরঘাট থেকে লঞ্চ ও কমলাপুর থেকে ট্রেনও সময়মতো গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

গত ২৭ অগাস্ট রাতে নিজ বাসায় খুন হন ইসলামী ফ্রন্টের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুকী। হাই কোর্ট মাজার মসজিদের এই খতিব সুন্নি মতাবলম্বী সংগঠন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

একটি বেসরকারি চ্যানেলে ‘শান্তির পথে’ ও ‘কাফেলা’ নামে দুটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানেরও উপস্থাপনা করতেন তিনি।

হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে শনিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়ার পর রোববার আধা বেলার হরতাল ডাকে ইসলামী ফ্রন্টের সহযোগী সংগঠন ছাত্রসেনা।

হরতালকারীরা সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর গেণ্ডারিয়া, কল্যাণপুর, বিজয়নগর, মিরপুর ও মতিঝিলে মিছিল করে।পরে পল্টনে রাস্তার ওপর এক সমাবেশ থেকে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়।   

ইসলামী ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সচিব মোহাম্মদ মাসউদ হোসাইন আল-কাদরী সমাবেশে বলেন, “সরকার জামায়াতকে বাঁচাতে চাইছে। হত্যাকাণ্ডের পর সরকোরের তরফ থেকে কোনো নিন্দা জানানো হয়নি। জামায়াতের পক্ষ থেকে যেভাবে মাওলানা ফারুকীর বিরুদ্ধে প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানো হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে তারাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।”

ইসলামী ফ্রন্ট জাতীয় রাজনৈতিক সংগঠন হলেও বৃহত্তর চট্টগ্রামে তারা সাংগঠনিকভাবে বেশ সুদৃঢ়। ধর্মীয় আদর্শভিক্তিক সংগঠন আহলে সুন্নাতেরও প্রভাব রয়েছে ওই অঞ্চলে। ফলে হরতালে বন্দরনগরীতে সংগঠনগুলোর কর্মীদের তুলনামূলকভাবে বেশি সক্রিয় দেখা যায়।

আমাদের চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন স্থানে মিছিল-সমাবেশের পাশাপাশি গাড়ির টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রসেনার কর্মীরা। এসব মিছিলে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের কর্মীদেরও দেখা যায়।

বন্দরনগরীর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ চললেও দুপুর পর্যন্ত শহরের রাস্তায় যান চলাচল করতে দেখা যায়নি। হাতেগোনা কিছু অটোরিকশা নামলেও তাতে বাধা দিয়েছে হরতালকারীরা।

নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি জোন) শাহ আব্দুর রউফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিভিন্ন স্থানে হরতাল সমর্থকরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করলেও ভাঙচুর বা বিশৃঙ্খলার কোনো ঘটনা ঘটেনি।”

এদিকে হরতালকারীরা চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায় রেললাইনে অবস্থান নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা ট্রেন আটকে রাখে বলে আমাদের জেলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন।

তাদের অবরোধের কারণে রোববার সকাল পৌনে ৭টা থেকে পৌনে ৮টা পর্যন্ত চট্টগ্রামগামী মেঘনা এক্সপ্রেস চিতোষী রেল স্টেশনে আটকে থাকে।

পরে পুলিশ এসে হরতালকারীদের সরিয়ে দিলে পৌনে ৮টার দিকে ট্রেনটি চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় বলে চিতোষীর স্টেশন মাস্টার তপন কুমার মিত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

রাজশাহী প্রতিনিধি জানান, হরতালে রাজশাহীর সব রুটে যান চলাচল প্রায় বন্ধ ছিল। তবে কোথাও পিকেটিং করতে দেখা যায়নি।

বেলা ১১টার দিকে নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে থেকে বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত রাজশাহী শাখার ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল হয়। পরে বড় মসজিদের সামনে সমাবেশ করে তারা।

হরতালে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের বলেন, “কোনো হরতালতো হচ্ছে না। সারাদেশে তাই কোনো গণ্ডগোলও নেই।”