ফারুকী খুন: ৭ টিভি উপস্থাপকের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি ছাত্র সেনার

নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যার পরিকল্পনায় বিভিন্ন টেলিভিশনে ইসলামী অনুষ্ঠানের সাতজন উপস্থাপক জড়িত বলে সন্দেহ করছে ইসলামী ছাত্র সেনা।

গোলাম মুজতবা ধ্রুববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 August 2014, 05:36 PM
Updated : 30 August 2014, 05:37 PM

তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন সংগঠনটির ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার।

শনিবার সংগঠনের ফকিরাপুলের কার্যালয়ে হরতালের সংবাদ সম্মেলনের পর তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যার পরিকল্পনাকারী ও হুকুমের আসামি হিসেবে ইসলামী ছাত্র সেনা সাত টেলিভিশন উপস্থাপকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।”

তারা হলেন- এটিএন বাংলার উপস্থাপক আরাকানউল্লাহ হারুনী ও তারেক মনোয়ার, আরটিভির নিয়মিত উপস্থাপক খালেদ সাইফুল্লাহ বকসি, এসএ টিভির কেফায়েত উল্লাহ ও মোস্তফিজুর রহমান, বাংলাভিশনের মোক্তার আহমদ ও দেশ টিভির মুফতি ইব্রাহিম।

তুষারের সঙ্গে কথা বলার সময় ছাত্র সেনার কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ নুরুল হক চিশতিও উপস্থিত ছিলেন।

ইসলামী ফ্রন্টের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুকী নিজেও চ্যানেল আইয়ে ইসলামী অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতেন। সুন্নিবাদী সংগঠন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন তিনি।

ফারুকী হত্যাকাণ্ডে তার পরিবার ইতোমধ্যে একটি মামলা করেছে।

ফারুকীর হত্যাকাণ্ডের পেছনে উগ্র ইসলামপন্থিরা রয়েছে বলে তার পরিবারের দাবি; তাদের সন্দেহ, ওহাবি মতাবলম্বীরা এতে জড়িত থাকতে পারে।

গত বুধবার রাতে যারা ফারুকীকে তার বাড়িতে গলা কেটে হত্যা করেছিল, তারা ‘শেরেকি-বেদাতির’ শাস্তি দেয়ার কথা বলেছিল বলে এই সুন্নিবাদী নেতার ভক্তরা জানান।

ছাত্র সেনা নেতা ইমরান বলেন, গত ২২ অগাস্ট এটিএন বাংলার একটি স্টুডিওতে আরাকানুল্লাহ হারুনীর সভাপতিত্বে একটি বৈঠকে ফারুকীর বিষোদগার করা হয়েছিল।

টেলিভিশনে ইসলামী অনুষ্ঠানগুলোতে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের নিয়ে আলাদা একটি সংগঠন করার জন্য ডাকা ওই সভায় ইমরানও ছিলেন। সেখানে ‘এসোসিয়েশন অব ইসলামিক মিডিয়া পারসোনালিটি’ নামে একটি সংগঠন গড়ার সিদ্ধান্ত হয়।

“আমি বিভিন্ন টেলিভিশনে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করি বলে সেখানে উপস্থিত ছিলাম। খালেদ সাইফুল্লাহ, জামায়াতের রুকন তারেক মনোয়ার, মোক্তার আহমেদসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।”

ইমরান বলেন, “তারেক মনোয়ার বলেছিল, ‘আমরা এক থাকলে ফারুকীর মতো শেরেকী ও বেদাতী গোষ্ঠীকে পায়ে চাপা দিয়ে মেরে ফেলা সম্ভব হবে’।”

বাংলাভিশনের একটি ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মোক্তার আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ফারুকীর টেবিল চাপড়িয়ে কথা বলা বন্ধ করে দেয়ার কথা বলেছিলেন বলে দাবি করেন ছাত্র সেনা নেতা ইমরান।

তিনি বলেন, “এসময় শহীদুল্লাহ নামের এক উপস্থাপক ফারুকীর পক্ষে কথা বলতে চাইলে তারেক মনোয়ার ক্ষেপে গিয়ে বলে, ‘ফারুকীর দালালি করবি না’।”

ইমরান বলেন, ওই সভা শেষ হওয়ার পর সন্ধ্যায় মাওলানা ফারুকীর বাসায় গিয়ে তাকে সব জানালেও তিনি বলেছিলেন, ‘আল্লাহ ছাড়া কাউকে আমি ভয় করি না’।

ইমরানের অভিযোগের বিষয়ে জানতে আরটিভির উপস্থাপক খালেদ সাইফুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সেদিন তারা একটি সভা করেছিলেন এবং সেখানে ইমরানও উপস্থিত ছিলেন।

তিনি দাবি করেন, একটি সংগঠন গড়তেই তারা ওই সভায় মিলিত হয়েছিলেন, অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।

ফারুকীর মতাদর্শে বিশ্বাসী হিসেবে পরিচিত ওসমান সালেহী, কাফেলউদ্দীন সরকার সালেহী ও মাওলানা শহীদুল্লাহও ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন বলে খালেদ জানান।

ইমরানের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, “তারা এতদিন পর কেন ‘আমরা ষড়যন্ত্র করেছি’ এই অভিযোগ করলেন? তাছাড়া একটা টেলিভিশন চ্যানেলে ২০ জন আলেম বসে হত্যার পরিকল্পনা করবে, সেটা কি বিশ্বাসযোগ্য?

“ওরা (ছাত্র সেনা) বোমার মতো আচরণ করছে। তাদের এমন কর্মকাণ্ডে মূল আসামিরা পার পেয়ে যেতে পারে।”

ফারুকীর হত্যাকাণ্ডের পেছনে তার মতাদর্শিক অবস্থানই গুরুত্বপূর্ণ ধরে তদন্ত করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ছাত্র সেনা নেতা ইমরান বলেন, “মতাদর্শগত পার্থক্যের জের ধরে মাওলানা ফারুকীকে হত্যা করা হয়েছে। জামায়াতের আদর্শে বিশ্বাসীরা তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। হয়তো তারা স্বশরীরে ঘটনাস্থলে যায়নি, তবে পরিকল্পনা করেছে।”

ফারুকী যেন সৌদি আরবে না যেতে পারেন, সেজন্য দেশ টিভির উপস্থাপক মুফতি ইব্রাহীম সৌদি দূতাবাসেও নালিশ জানিয়েছিলেন বলেও দাবি করেন ইমরান।