বাবা-মায়ের পাশে শায়িত ফারুকী

নুরুল ইসলাম ফারুকীকে পঞ্চগড়ের নাউতারী নবাবগঞ্জ গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের পাশে দাফন করা হয়েছে।

পঞ্চগড় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 August 2014, 08:22 AM
Updated : 30 August 2014, 02:38 PM

শনিবার সকালে বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের নাউতারী মুন্সিপাড়া গোরস্থান মাঠে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।

ফারুকীর বড় ভাই ইসমাইল হোসেন বলেন, তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়েছে।

বড়শশীর সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম জানান, বেলা ১১টায় জানাজা হওয়ার কথা থাকলেও লোকজনের ভিড় সামাল দিতে নির্ধারিত সময়ের আগে সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ জানাজায় অংশ নিতে পারেননি।

দাফন শেষ হওয়ার পরও অনেক ভক্ত-সমর্থক ফারুকীকে শেষবারের মত দেখতে আসেন বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, জানাজা পড়ান ফারুকীর ছেলে আহমদ রেজা ফারুকী। মোনাজাত পরিচালনা করেন মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম।

এর আগে ভোর ৪টার দিকে তার মরদেহ এলাকায় পৌঁছয়। সেখানকার নাউতারী সর্দারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তার মরদেহ রাখা হয়। এসময় তার স্বজন-প্রতিবেশী ও ভক্ত-সমর্থকরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম সুজন, ফারুকীর ভাই আব্দুর রউফ দ্রুত হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দাবি করেন।

বোদা থানার ওসি মজনুর রহমান জানান, যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ওই এলাকায় একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

‘এভাবে আসবেন, ভাবিনি’

ছয় মাস পর শনিবারই গ্রামে আসবেন বলে ঠিক করে রেখেছিলেন নিহত ফারুকী। 

ফারুকী প্রতিষ্ঠিত নাউতারী নবাবগঞ্জ দারুছুন্নাত হাফেজিয়া মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সদস্য মইনুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,  “তার সঙ্গে আমাদের বেশ কয়েকদিন আগে কথার সময় তিনি জানিয়েছিলেন শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট মাজার মসজিদে জুমার নামাজ পড়িয়ে শনিবার গ্রামে আসবেন।

“এখানে এসে পরিবার ও পরিচিত মানুষসহ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিতে চেয়েছিলেন। একই সঙ্গে মাদ্রাসার উন্নয়ন বিষয়েও আলোচনা করার কথা ছিল। অথচ মানুষটি লাশ হয়ে এলেন। এভাবে আসবেন তা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি।”

তিনি জানান, সর্বশেষ গত ৩ ও ৪ মার্চ নাউতারী দারুল কুরআন ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা মাঠে ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য রাখার জন্য গ্রামে এসেছিলেন।

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের নাউতারী নবাবগঞ্জ গ্রামের হাজি জমসেদ আলীর পুত্র মাওলানা ফারুকী ছিলেন বাবা মায়ের দ্বিতীয় সন্তান।

তার আপন ৩ ভাই ও ৪ বোন এবং দুইজন সৎ ভাই রয়েছেন। নিজ এলাকাতেই তিনি ফাজিল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন।

বড়শশী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম বলেন, উনি এলাকার জন্য বেশ উপকারী মানুষ ছিলেন। তার অসময়ে চলে যাওয়াতে এলাকারও বেশ ক্ষতি হয়ে গেল।

দারুছুন্নাত হাফেজিয়া মাদ্রাসার হেফজ শিক্ষার্থী হাশিবুল (১৫) বলে, “মাওলানা ফারুকী এলাকায় আসলে শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যেত। শিক্ষার্থীদের যার যেটা প্রয়োজন তিনি তাৎক্ষণিকভাবে মেটানোর চেষ্টা করতেন।

“যে ক'দিন থাকতেন সেই কয়দিন নিজ উদ্যোগে উন্নতমানের খাবারের ব্যবস্থা করতেন। প্রায় প্রতি শীত মৌসুমে শীতবস্ত্র ও বিভিন্ন সময়ে অনেকের জন্য নানা উপহার সামগ্রীও বিতরণ করতেন।”

মাদ্রাসার আরেক শিক্ষার্থী ফারুক (১৩) বলে, “হুজুর আসলে আমাদের ঈদ লেগে যেত। আমরা খুব আনন্দে থাকতাম।”