‘বিচার বিভাগ সাহসী হলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হত’

গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সামরিক শাসক-জান্তা-অনির্বাচিত সরকারের সামনে সাহসী বিচার বিভাগ প্রত্যাশা করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন, যিনি সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 August 2014, 07:44 PM
Updated : 28 August 2014, 07:45 PM

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় দেয়া বক্তব্যে ‘ব্যক্তিগত মত’ হিসাবে সাবেক সংসদ সদস্য খোকন এই বক্তব্য দেন।

‘স্বাধীন বিচার বিভাগের ওপর প্রস্তাবিত সংবিধান সংশোধনী’ শিরোনামে ওই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে ওয়ার্ল্ড ওয়াচ সোসাইটি নামে একটি সংগঠন।

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিতে সরকারের উদ্যোগের সমালোচনা করে খোকন বলেন, “আমাদের বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন, কিন্তু অত্যন্ত দুর্বল। আমাদের এমনি  দুর্বল এই বিচার ব্যবস্থার ওপর আবার কেন আঘাত?

“আমাদের সুপ্রিম কোর্ট থাইল্যান্ডের সুপ্রিম কোর্টের চেয়েও দুর্বল,” এই মন্তব্য করে সামরিক শাসনের সময় বিচার বিভাগের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এই বিএনপি নেতা।

“আমরা দেখেছি যে, ১/১১’র সময় পার্লামেন্টে কোর্ট করেছে, পিপি সাহেবরা আর্মি অফিসারসহ আগে আগে যেতেন, জাজের সঙ্গে কথা বলতেন, তারপর শুনানি হত। আবার আর্মি ও পিপি সাহেবরা কথা বলার পর তারা রায় দিতেন।”

“কই আমাদের সুপ্রিম কোর্ট তো এ ব্যাপারে কিছু করেন নাই। আমাদের সুপ্রিম কোর্ট ওনারা যে সময় থাকেন, যা বলেন, হুবহু তাই পালন করেন।”

“যেই মুহূর্তে তারা চলে যায়, সামরিক শাসন বলেন, অনির্বাচিত সরকার বলেন আর অবৈধ সরকার বলেন, চলে যাওয়ার পর বলেন, সুপ্রিম কোর্টের কিন্তু এর একটা ব্যাখ্যা দেয়ার ক্ষমতা আছে, এই যে শাসন করলেন, এটা অবৈধ ছিল। থাকতে কিন্তু বলে না।”

“নইলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র অনেক শক্তিশালী হত। যদি আমাদের সুপ্রিম কোর্ট সাহস দেখাতে পারতো যে না এটা অবৈধ সরকার। আর্মি সরকার ইজ অবৈধ গভমেন্ট। ‍দিস আর্মি ব্যাকড কেয়ারটেকার গভমেন্ট ইজ অবৈধ গভমেন্ট। এই পরিমাণ সাহস তারা দেখাতে পারেন নাই,” বলেন খোকন।

তিনি বলেন, “পাশাপাশি থাইল্যান্ডে দেখেন, বিচার বিভাগ সেখানে শক্তিশালী। সেখানে সুপ্রিম কোর্ট বলে দিয়েছে, দিস ইলেকশন ইজ ভয়েড। বাতিল করে দিয়েছে। আমাদের সুপ্রিম কোর্ট শুনছেন কোনো সময়ে এটা করেছে? পারে নাই। চলে যাওয়ার পরে বলে। এই অবস্থায় কেন আমরা এই সংশোধনী করতে যাচ্ছি।”

সংবিধান সংশোধনের পেছনে সরকারের ভবিষ্যতের কোনো পরিকল্পনা রয়েছে বলে এই আইনজীবী নেতার সন্দেহ।

“যেমন সম্প্রচার নীতিমালা করছে। নির্বাচন কমিশন থেকে বলে দিবে, কমিশনের অফিসিয়াল বক্তব্য ছাড়া টিভির পর্দায় কোনো কিছু আসতে পারবে না।”

“বিচার বিভাগ নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে পারে। নির্বাচন বাতিল করে দিতে পারে। নির্বাচন করাতে ছোট খাটো ক্রটি বা সরকারের পক্ষপাতিত্ব থাকতে পারে। এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এটা করছে।”

সংসদে আইন প্রণয়ন পদ্ধতির সমালোচনা করে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, “এই সংসদকে কেন সরকার বিচারকদের অপসারণের বা মিস কন্ডাক্টের দায়িত্ব দিচ্ছে?”

‘জিয়াকেও বলেছি, তার সরকার শেষ সরকার নয়’

“মনে রাখতে হবে, এই সরকারই শেষ সরকার নয়,” সরকারের উদ্দেশে এই কথা বলে খোকন জানান, ছাত্র থাকা অবস্থায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াকেও একই কথা বলেছিলেন তিনি।

“ইন্টারমিডিয়েটে পড়তাম। নোয়াখালীতে দিনব্যাপী প্রোগাম। আমি স্লোগান দিচ্ছিলাম। প্রেসিডেন্ট জিয়া আমাকে ডেকে নিয়েছেন স্টেজে। স্লোগান নিয়ে আলাপ করলাম। কেন এই স্লোগান দিচ্ছি-জিজ্ঞেস করলেন। এক পর্যায়ে আমি বললাম, স্যার আপনি বিশ্বাস করেন নিশ্চয়ই। এই সরকার শেষ সরকার নয়। যদি ডেমেক্রেসিতে আমি বিশ্বাস করি।”

“তিনি বললেন, নিশ্চয়ই, আমি ডেমোক্রেসিতে বিশ্বাস করি। এটা বিশ্বাস করতে হবে। দিস ইজ নট দ্য লাস্ট গভমেন্ট। প্রেসিডেন্ট জিয়ার মতো লোকও স্বীকার করছে, এই সরকারের পরও সরকার আছে।”

গোলটেবিল আলোচনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন খোকন। প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফ।