বাচ্চা চুরি: মা-বাবাকে দুষল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে নবজাতক চুরির ঘটনায় বাবার-মায়ের অসচেতনতাকে দায়ী করলেন হাসপাতালের পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 August 2014, 12:32 PM
Updated : 28 August 2014, 12:32 PM

চুরি হওয়া শিশুটিকে বৃহস্পতিবার গাজীপুর থেকে উদ্ধারের পর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। হাসপাতালের উপ-পরিচালক মশিউর রহমানও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

পরিচালক বলেন, “বাচ্চাটি চুরির পেছনে শিশুর মা-বাবার অসচেতনতাই দায়ী।”

যদিও এর আগে বাচ্চা চুরির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

রুনা আক্তার নামে ঢাকার মোহাম্মদপুরের এক নারী গত ২০ অগাস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যমজ সন্তানের জন্ম দেন। পরদিন ভোরের দিকে তার একটি ছেলেকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায় অজ্ঞাতপরিচয় এক নারী। 

এ ঘটনায় আলোড়ন সৃষ্টি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। শাহবাগ থানায় একটি মামলাও দায়ের করা হয়।

গণমাধ্যমে আসা এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশু চুরির সময় হাসপাতালের ৫৩টি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার একটিও চালু ছিল না।

২০ অগাস্ট রাত ৯টা থেকে প্রায় ১২ ঘণ্টা হাসপাতালের সার্ভার স্টেশন বন্ধ ছিল। বন্ধ থাকার সময়ই সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শিশুটি চুরি হয়।

ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে শিশু চুরির ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।

চুরির ঘটনার এক সপ্তাহের মাথায় বুধবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে গাজীপুর বোর্ডবাজারের উত্তর কলমেশ্বর এলাকায় বেলি আক্তার ওরফে রহিমা নামের এক নারীর বাসা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে র‌্যাব।

র‌্যাব জানিয়েছে, রাশেদা খানম পারভীন (৪৮) নামের এক ধাত্রী হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে চুরি করে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে রহিমার হাতে তুলে দেন।

শিশু চুরির ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায় ছিল না দাবি করে পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “হাসপাতালে প্রতিদিন ত্রিশ থেকে চল্লিশটি শিশু ভূমিষ্ট হয়। মায়ের কাছে জানতে চাওয়া হয় শিশুটি কার কাছে দেয়া হবে। সে অনুয়ায়ী রোগীর সঙ্গে থাকা স্বজনের কাছে শিশুকে হস্তান্তর করা হয়।”

সেভাবেই চুরি হওয়া শিশুটি তার নানির কাছে দেয়া হয়েছিল বলে জানান তিনি।

বাচ্চা চুরির পর রুনার মা গুলেনুর বেগম পুলিশকে বলেছিলেন, যমজ শিশু দুটিকে ওয়ার্ডে নিয়ে আসার পর থেকেই এক নারীকে ওয়ার্ডে ঘুর ঘুর করতে দেখেন তারা।  তাদের প্রশ্নের জবাবে ওই নারী বলেন, তার ভাবী পাশের ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।

পরদিন সকালে নবজাতক শিশু দুটো কান্নাকাটি শুরু করলে ওই নারী একজনকে কোলে নিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেন বলে জানান গুলেনুর বেগম। কিছুক্ষণ পর শিশুটিকে নিয়ে উধাও হয়ে যান সেই নারী।

চুরির আগের দিন শিশু কোলে সেই ধাত্রী। সময় টিভিতে প্রচারিত সিসিটিভির ভিডিও থেকে নেয়া ছবি

চুরির সময় ক্যামেরা বন্ধ থাকলেও আগের দিন সিসিটিভিতে ধারণ করা একটি ভিডিও সময় টেলিভিশনে প্রকাশ করা হয়। তাতে দেখা যায়, সন্দেহভাজন সেই নারী একটি শিশুকে কোলে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন। এভাবেই তিনি শিশুটির মা ও স্বজনদের আস্থা অর্জন করেন বলে র‌্যাবের ধারণা।

পরিচালক দাবি করেন, র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া রাশেদা খানম ওরফে পারভীনকে শিশুটির অভিভাবকরা নিজেদের আত্মীয় বলে হাসপাতাল কর্মচারীদের কাছে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, “হাসপাতালের কোনো কর্মচারীর ওই ঘটনায় জড়িত থাকা সম্ভব নয়। তারপরও নবজাতক ওয়ার্ডের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।”

চুরি যাওয়া শিশুটিকে উদ্ধারের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদের বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তর করে র‌্যাব।