এদিকে হত্যা রহস্য উদঘাটনে তিন ‘প্রত্যক্ষদর্শীকে’ থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানার উপ পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম জানান, নিহতের মেজ ছেলে ফয়সাল বুধবার মধ্যরাতে ৭/৮ জনের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বুধবার রাতে ডাকাতি করতে এসে পূর্ব রাজাবাজারের বাসায় নুরুল ইসলাম ফারুকীকে গলা কেটে হত্যা করে চলে যায় দুর্বৃত্তরা।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের এই নেতা ইসলামী ফ্রন্টের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। হাই কোর্ট মাজার মসজিদের খতিবের দায়িত্বও পালন করে আসছিলেন তিনি।
ফারুকী চ্যানেল আইয়ের ‘শান্তির পথে’ ও ‘কাফেলা’ নামে দুটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতেন।
১৭৪ নম্বর পূর্ব রাজাবাজারে চারতলা একটি বাড়ির দ্বিতীয় তলায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন ফারুকী।
তিনি হজে লোক পাঠানোর কাজেও যুক্ত ছিলেন বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। হজের কথা বলেই কয়েকজন যুবক রাতে বাড়িতে ঢুকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে।
তার ভাগ্নে মারুফকে উদ্ধৃত করে রাজধানীর মিরপুরের বায়তুল রশিদ মসজিদের ইমাম মুফতি ইহসানুল হক হত্যাকাণ্ডের পর সাংবাদিকদের বলেন, “সাড়ে ৮টার দিকে হজে যাওয়ার কথা বলে দুই যুবক বাসায় আসে। দরজা খোলার পর তাদের সঙ্গে আরো ৬/৭ জন লোক ঢুকে পড়ে।
“তারা অস্ত্র বের করে বলে- কত টাকা আছে, আমাদের দেন। নুরুল ইসলাম বলেন, এখন বাসায় এক লাখের মতো টাকা আছে। তখন তারা বলে- আমরা এতগুলো মানুষ, এক লাখ টাকায় আমাদের হবে না।”
এরপর বাড়ির সবাইকে গামছা ও কাপড় দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফারুকীকে শোবার ঘরে নিয়ে জবাই করে যুবকরা চলে যায় বলে মুফতি ইহসানুল জানান।
বাসায় তখন মারুফ ছাড়া ছিলেন ফারুকীর স্ত্রী, মা ও গৃহকর্মী। নুরুল ইসলামের তিন ছেলের মধ্যে বড়জন আহমেদ রেজা ফারুকী বর্তমানে সৌদি আরব রয়েছেন। মেজ ও ছোট ছেলে তখন ঘরে ছিলেন না।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে জানাজা ও দাফনের জন্য ফারুকীর লাশ বাসায় নেয়া হবে বলে পরিবারের সদস্যরা জানান।
পুলিশের তেঁজগাও অঞ্চলের উপ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এ ঘটনার অন্তত তিনজন প্রত্যক্ষদর্শীকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। অপরাধী হিসেবে নয়, রহস্য উদঘাটনে তাদের সহায়তা নেয়া হচ্ছে।”
তবে নিরাপত্তা ও তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম বলতে রাজি হননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “পুলিশ সর্ব্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে হত্যারহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করেছে”।
কারা এই ঘটনা ঘটনা ঘটিয়েছেন বলতে না পারলেও ফয়সাল ফারুকী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, হত্যাকারীদের মধ্যে অন্তত দুইজন দুদিন আগেও একবার তাদের বাড়িতে আসে।
“খাদেমরা দুজনকে চিনতে পেরেছিল। সেদিন আসার পর আব্বা তাদের আজকে আসতে বলেছিলেন। তাদের হাতে পিস্তল ও চাপাতি ছিল।”
হত্যাকাণ্ডের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বুধবার রাতে নিহতের বাড়ির কাছে গ্রিন রোডে বিক্ষোভ করে ইসলামী ফ্রন্ট ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের নেতা-কর্মীরা। চট্টগ্রামে বিক্ষোভ থেকে কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করা হয়।