ছাত্রলীগের সঙ্গে গোলমালের পর রেলকর্মী বরখাস্ত

টিকিট না পেয়ে সংঘর্ষের পর ছাত্রলীগের দাবির মুখে চট্টগ্রাম স্টেশনের কর্তব্যরত দুই রেলকর্মী এবং তিন নিরাপত্তা রক্ষীকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 August 2014, 04:18 PM
Updated : 27 August 2014, 06:46 PM

ঢাকায় সমাবেশে যেতে টিকিট না পেয়ে বুধবার সন্ধ্যার পর বন্দর নগরীর বটতলীতে স্টেশনে বিক্ষোভ শুরু করে ছাত্রলীগকর্মীরা।

এক পর্যায়ে তাদের সঙ্গে রেলকর্মীদের সংঘর্ষ বেঁধে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এই সময় স্টেশনে ভাংচুরও হয়, যাতে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

খবর পেয়ে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গিয়ে বিক্ষোভরত ছাত্রলীগকর্মীদের দাবির মুখে রেলের পাঁচ কর্মীকে সাময়িক বরখাস্তের কথা জানালে প্রায় দুই ঘণ্টা পর পরিস্থিতি শান্ত হয়।

পূর্ব রেলের বিভাগীয় আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক এস এম মুরাদ হোসেন রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, দুই রেলকর্মী ও তিন নিরাপত্তা রক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এছাড়া ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে বলে মুরাদ হোসেন জানান।

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া দুই রেল কর্মচারী হলেন স্টেশন মাস্টার আবু জাফর ও স্টেশনের দুই নম্বর কাউন্টারে কর্মরত বুকিং সহকারী মহসিন। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর তিন সদস্য হলেন- মনির হোসেন, সাব্বির, হাফিজ।

পাশাপাশি জিআরপি থানার ওসি ইয়াছিন ফারুককে সাময়িক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান মুরাদ হোসেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, টিকিট না পেয়ে সন্ধ্যার পর বিক্ষোভ শুরু করে ছাত্রলীগকর্মীরা। রাত ৮টার দিকে রেল পুলিশ ও রেলকর্মীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাঁধে। এই সময় স্টেশনে ভাংচুর চালায় ছাত্রলীগকর্মীরা।

ছাত্রলীগ নেতাদের দাবি, তাদের ওপর রেল পুলিশ ও রেলকর্মীরা হামলা চালায়।

নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজম রনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আগামী ৩১ অগাস্ট ঢাকায় সমাবেশে যোগ দিতে চট্টগ্রাম ছাত্রলীগের কর্মীদের জন্য টিকিট চেয়ে গত ২০ অগাস্ট আবেদন করা হয়।

পূর্ব রেলের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান বুধবার সন্ধ্যায় আসতে বলেছিলেন জানিয়ে রনি বলেন, “স্টেশনে গেলে আধ ঘণ্টা বসিয়ে রাখার পর স্টেশন মাস্টার আবু জাফর আমাদের বাইরে থেকে টিকিটের ব্যবস্থা করে নিতে বলেন।

“এসময় আমি জানতে চাই, আমরা কেন কালোবাজারে টিকিট কিনব? এ নিয়ে তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়।”

এরপরই স্টেশন চত্বরে থাকা ছাত্রলীগকর্মীদের ওপর স্টেশন মাস্টার আবু জাফর ও জিআরপি থানার ওসি ইয়াছিন ফারুকের নির্দেশে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন রনি।

তিনি বলেন, হামলায় আমাদের পাঁচজন আহত হন। দুই কর্মীকে তুলে নিয়ে মারধর করা হয়। কোতোয়ালি থানার ওসিকে ফোনে ঘটনা জানানোর পর ওই দুজনকে বের করে আনা হয়।

রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনের দুই থেকে সাত নম্বর কাউন্টারের আয়না ভাঙা। ছাত্রলীগকর্মীরা তা ভেঙেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

এরপর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা স্টেশন এলাকায় মিছিল করে এবং স্টেশন মাস্টার আবু জাফর, জিআরপি ওসি ইয়াছিন ফারুক ও বুকিং সহকারী মহসিনের শাস্তি দাবি করতে থাকেন।

স্টেশনের সবকটি ফটকে অবস্থান নিয়ে ছাত্রলীগকর্মীরা বিক্ষোভ করছিল বলে বাইরে থেকে কোনো যাত্রী ভেতরে ঢুকতে পারছিল না। স্টেশনে অপেক্ষায় থাকা বিভিন্ন ট্রেনের যাত্রীদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

রাত ৯টার দিকে স্টেশনে যান পূর্ব রেলের ডিআরএম মুরাদ হোসেন ও রেলওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাকসুদুর রহমান।

এরপর তারা পুলিশ কর্মকর্তা ও ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। আধা ঘণ্টা পর বৈঠক শেষে মুরাদ হোসেন রেলকর্মীদের শাস্তির ঘোষণা দেন।

গঠিত ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে পূর্ব রেলের ডিভিশনাল ট্রান্সপোর্টেশন অফিসার ফিরোজ ইফতেখারকে।

মুরাদ হোসেন বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

রেল পুলিশের কর্মকর্তা মাকসুদুর রহমান বলেন, “জিআরপির ওসির বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। তার কোনো দায় পাওয়া গেলে পরে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।”