নীলফামারীতে অনাহারে বানভাসি মানুষ

অব্যাহত বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি আবারো বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলের গ্রামগুলোর পাঁচ হাজারের বেশি পরিবার ১৫ দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছে।

নীলফামারী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 August 2014, 03:42 PM
Updated : 27 August 2014, 03:42 PM

বুধবার সকাল ৬টা থেকে নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রীর অভাবে বন্যাকবলিত মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।

এদিকে বন্যার কারণে বুধবার ডিমলা উপজেলার ছোটখাতা গ্রামের দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে নদীর পানি বাড়তে থাকে, যা বুধবার বিকাল ৩টায় বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

তিনি বলেন, “গত ১৫ অগাস্ট নদীর পানি বিপদ সীমার ৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও বেশ কিছু দিন যাবৎ পানি কমে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এর মধ্যে মঙ্গলবার রাত থেকে আবারো পানি বাড়তে শুরু করেছে।”

পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যারাজের সবকটি গেইট খুলে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে পানি বৃদ্ধির ফলে ডিমলা উপজেলার নদী তীরবর্তী টেপাখড়িবাড়ী, পুর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, ঝুনাগাছচাঁপানী, পূর্বটেপাখড়িবাড়িসহ পাশ্ববর্তী বাইশপুকুরচর, কিসামত ছাতনাই, ঝাড়শিঙ্গেরশ্বর, বাঘেরচর, টাবুর চর, ভেন্ডাবাড়ী, ছাতুনামা, হলদিবাড়ী, একতারচর, ভাষানীর চর, খালিশাচাঁপানী ও জলঢাকা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী, কৈমারী এলাকার নদী তীরবর্তী চরগ্রামগুলো প্লাবিত হয়।

এসব এলকার অন্তত পাঁচ সহস্রাধিক পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল মোতালেব মোল্লা জানান, ডিমলার ছয়টি ও  জলঢাকার তিনটি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়েছে। এর মধ্যে মিমলায় ২ হাজার ৭৯২ পরিবার এবং জলঢাকায় ৫৮৭ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানী ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামের মফি উদ্দিন  (৫৫) বলেন, ১৫ দিন ধরে বানের পানিতে বাড়ি-ঘর কোমর পানিতে তলিয়ে আছে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছি।”

ওই গ্রামের মর্জিনা বেগম (২৮) বলেন, বানের পানিতে ঘরে থাকা চাল, চুলাসহ সকল আসবাবপত্র তলিয়ে রয়েছে। গত কয়েক দিন থেকে এক মুঠো ভাত খেতে দিতে পারিনি ছেলে মেয়েদের। শুধুমাত্র চিড়াগুড় খেয়ে বেঁছে আছি।

“সপ্তাহখানের আগে চেয়ারম্যান এসে নামের তালিকা করে নিয়ে গেছে। কিন্তু কিছুই পেলাম না।”

একই ইউনিয়নের গ্রোয়িং পাড়ার জয়নুদ্দীন (৭০) বলেন, “খেয়ে না খেয়ে সকলে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছি।”

পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন, “আমার ইউনিয়নের পূর্ব ছাতনাই ও ঝারসিংহেরস্বর চরের আটশ’ পরিবার এখনো পানি বন্দি রয়েছে। গত ১৯ অগাস্ট সরকারিভাবে একশ’ পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। গতকাল প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ৪০ পরিবারের তালিকা চেয়েছে। আমি দেই নাই। কারণ কাকে ছেড়ে কার নাম দিব।”

ডিমলা উপজেলার খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, কিসামত ছাতনাই চরের দুটি ওয়ার্ডের সাড়ে তিনশ’ পরিবার পানি বন্দি রয়েছে। গতকাল তারা উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছিল।

মঙ্গলবার তাদের মাঝে শুকনো খাবার ও স্যালাইন  দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এছাড়া ১৬৬ পরিবারকে সরকারি সহায়তা দেওয়া সম্ভব হয়েছে বলেও জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক মো. জাকীর হোসেন বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে দুই দফায়  ডিমলা উপজেলায় ২৫ মেট্রিক টন চাল, ৪০ হাজার টাকা ও জলঢাকা উপজেলায় ১০ মেট্রিক টন চাল ও ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সহিদুল ইসলাম বলেন, বন্যার পানি ওঠায় ডিমলার ছোটখাতা উত্তরপাড়া নব্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ছোটখাতা ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বুধবার ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।