বুধবার নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের নিয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। সেই সঙ্গে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করার যে কোনো চেষ্টার বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা যখন বেসরকারি খাতে টেলিভিশন এবং রেডিও দিই, তখনই কিন্তু আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল একটা নীতিমালা করতে হবে।
“আসলে যা কিছুই চলুক, সবকিছুই একটা নীতিমালার ভিত্তিতে চলতে হয়। আপনি অধিকার যখন ভোগ করবেন, আপনার দায়িত্ববোধটাও থাকতে হবে, কর্তব্যবোধটাও থাকতে হবে।”
সম্প্রতি জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়নের পর বিএনপিসহ বিভ্ন্নি রাজনৈতিক দল এবং সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন এর সমালোচনা করে বলছে, এতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা যদি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার স্বাধীনতায়ই বিশ্বাসী না হব, তাহলে আমরা এতগুলো বেসরকারি খাত উন্মুক্ত করে দেব কেন? এত পত্রিকা আমরা দেব কেন? এত বেসরকারি চ্যালেন ও রেডিও আমরা দেব কেন? আমরা স্বাধীনতাই বিশ্বাস করি বলে দিয়েছি।
“আবার স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা না। সমাজের প্রতি দায়িত্ব, মানুষের প্রতি দায়িত্ব, দেশের প্রতি, রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব থাকতে হবে।”
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর বাংলাদেশে প্রথম বেসরকারি টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে ৪১টি টেলিভিশনের সম্প্রচার অনুমতি রয়েছে, যার মধ্যে ২৬টি সম্প্রচারে রয়েছে। এছাড়া সম্প্রচারের অনুমতি থাকা ২৮টি এফএম রেডিওর মধ্যে বর্তমানে ১২টি সম্প্রচারে রয়েছে।
সম্প্রচার নীতিমালার সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সম্প্রচার নীতিমালা কিন্তু হুট করে একদিনে করা হয় নাই। এটা দীর্ঘদিন ওয়েবসাইটে রাখা হয়েছে, সেখানে মানুষের মতামত গ্রহণ করা হয়েছে। সেই মতামত অনুযায়ী সংশোধন করা হয়েছে।
“এখন যারা নানাভাবে কথাবার্তা বলছেন, ওখানে কিন্তু তাদের মতামত পাবেন না।”
সম্প্রচার নীতিমালা ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের (বিবিসি) ‘অনুকরণে’ করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকেই নিছক বিরোধিতার জন্যই সম্প্রচার নীতিমালার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
“কেউ হয়ত বিরোধিতা করতে হবে বলেই বিরোধিতা করছেন। কেউ হয়ত...সরকার যা কিছুই করুক তাই খারাপ, কোনো ভালোই যাদের চোখে পড়ে না... সে রকম একটা শ্রেণি তো বাংলাদেশে আছেই। তারা সেইভাবেই কথা বলে যাচ্ছেন।”
“আবার কারো কারো হচ্ছে, ‘যা কিছু হারায়, গিন্নি বলেন/ কেষ্টা বেটাই চোর’। যাই কিছু হোক না কেন সব দোষ আওয়ামী লীগের।”
“ভাগ্যি ভালো যে, আমি আমার তথ্যমন্ত্রী জাসদ থেকে করেছি। নইলে আরো ঝড় ঝাপটা আমাদের ওপর আসত। আমি একটু বুঝে শুনেই করে দিছি যে, ধাক্কাটা ওই দিক থেকে যাক। পুরো ধাক্কাটা না হলে আমার একার বইতে হত, তাই না। এখন এটা শেয়ার করছেন।”
অনুষ্ঠানে ওয়েজ বোর্ড, তথ্য অধিকার আইনসহ সাংবাদিকদের কল্যাণে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
সেই সঙ্গে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমি শুধু সাংবাদিকদের এটুকুই বলব, হ্যাঁ সমালোচনা করবেন, কোনো আপত্তি নেই। তবে একটা কথা সবাই মনে রাখবেন, যে ডালে বসেন সেই ডালটা কেটে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করবেন না। তাহলে নিজে ধপাস করে পড়ে যাবেন। আমার মনে হয় বুদ্ধিমানের জন্য ইশারাটাই যথেষ্ট।”
সাংবাদিকদের সহায়তা ও অনুদান দেয়ার এই অনুষ্ঠানে সরকারি তহবিল থেকে অসুস্থ, অসচ্ছল ও দুর্ঘটনাজনিত আহত ৫৭ জন সাংবাদিকের হাতে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার চেক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
সাংবাদিকদের স্থায়ীভাবে এ সহায়তা দেয়ার জন্য একটা কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটা প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থা করে দিতে চাই। কারণ চিরদিন তো বেঁচে থাকব না, আর চাইলেই কেউ দেবে না।”
কল্যাণ ট্রাস্টে সরকারের পাশাপাশি আগামীতে সাংবাদিক ও মালিকদেরও অর্থ জোগানোর আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
“আমরাও অর্থ দেব, কিন্তু সাংবাদিকদেরও এ ট্রাস্টে অর্থ আনতে হবে। আর বিশেষ করে মালিকরা, এত দামি দামি টেলিভিশন চালাচ্ছেন, পত্রিকা চালাচ্ছেন; অর্থ ছাড়া তো কেউ চালাতে পারেন না।”
“বাংলাদেশে পত্রিকার মালিক হতে পারে কে? যে খুব বড় ব্যবসায়ী হয়। তাদের ব্যবসাটাও হয়, আর আমাদের এক্সপ্লয়েট করে কিছু আদায় করার সুযোগটাও থাকে। এছাড়া তো কেউ পত্রিকা চালাতে পারবে না। এটা তো বাস্তব কথা।”
“আমাদের যারা পত্রিকার মালিক তারাও কিছু অনুদান দেবে, তাদেরকে দিতে হবে,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।