গত ১৭ জুলাই বিদ্যালয় ভবনের একাংশ তিস্তার ভাঙনে বিলীন হওয়ার পর বাকিটা নিলামে বিক্রি করে দেয়া হয়। তখন থেকে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির বাড়ির উঠানে ত্রিপল টাঙিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
বেঞ্চ পেতে যেখানে শিক্ষকরা ক্লাস নিচ্ছেন তার পাশেই রয়েছে গোয়াল ঘর; বৃষ্টি হলে ওই ঘরে গরুর সঙ্গেই আশ্রয় নিতে হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।
এই পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষাও নেয়া হয়েছে দায়সারাভাবে। বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র খোলা আকাশের নিচে ফেলে রাখায় তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সোহেল রানা বলেন, “আমাদের প্রাথমিক সমাপনী (পিএসসি) পরীক্ষা নভেম্বরে। কিন্তু ক্লাস ঠিকমত হয় না।”
উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা নিখিল চন্দ্র রায় বলেন, “শিক্ষা কার্যক্রম পরিদর্শন করতে গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ দেখে আমরা হতবাক। এভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চলে না।”
“নভেম্বরে প্রাথমিক সমাপনী (পিএসসি) পরীক্ষা। সভাপতি তার বাড়িতে ক্লাস নেয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কিন্তু সেখানেও জায়গা কম। গোয়াল ঘরের পাশে খোলা জায়গায় ত্রিপল টাঙিয়ে ক্লাস নিতে হচ্ছে।”
প্রধান শিক্ষক জানান, ওই উঠোনে স্কুলের ৩৪৫ জন শিক্ষার্থীকে জায়গা দেয়া সম্ভব না। তাই পর্যায়ক্রমে একটি করে শ্রেণির পাঠদান চলছে।
“গরুর মলমূত্রে অবস্থা খুবই খারাপ। বৃষ্টি হলে গরুর সঙ্গেই আশ্রয় নিতে হয়।”
বিদ্যালয়ের সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, স্কুল নদী ভাঙনের মুখে পড়লে তখনই সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। সবাই বলেছেন ‘দেখছি’। এরপর গত ১৬ জুলাই ভবনটি হেলে পড়ে।
বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম আসাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, “বিদ্যালয় ভবন নিমার্ণের জন্য প্রথম পর্যায়ে এক লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। কোথায় ভবন হবে সে স্থান নির্ধারণ করা হয়নি। স্থান নির্ধারণ হয়ে গেলেই নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।”
কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের একটি গ্রাম ঢুষমারা চর। তিস্তা নদীবেষ্টিত এ গ্রামে ৪৫০ পরিবারের বাস। ১৯৪০ সালে গ্রামটিতে প্রতিষ্ঠা করা হয় ঢুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২০০৫ সালে একতলা এবং ২০১১ সালে দ্বিতল ভবন নির্মিত হয়।
গত ৪ জুলাই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে ‘দশ হাত ভাঙলেই বিদ্যালয়টি তলিয়ে যাবে’ এবং ১৯ জুলাই ‘বিদ্যালয়টি তিস্তায় গেল’ শিরোনামে দুটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।