তিন দিন আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে ৮৮ বছর বয়সী আবদুল মতিনের মস্তিস্কে জমাট বাঁধা রক্ত অপসারণ করা হয়।
বর্তমান অবস্থা কী- জানতে চাইলে তার ভায়রা টিপু বিশ্বাস শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তার হার্টের পজিশন আনস্টেবল, প্রেসার উঠানামা করছে। শরীরের ডান অংশ নাড়াতে পারছেন না, বাম অংশেরও প্রায় একই অবস্থা।”
“মাঝে মাঝে চোখ মেললেও অবস্থার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই,” বলেন টিপু বিশ্বাস। তবে চিকিৎসকরা ‘ভয়ের কিছু নেই’ বলে আশ্বস্ত করেছেন বলে জানান তিনি।
শনিবার তাকে দেখতে হাসপাতালে যান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
কমিউনিস্ট নেতা আবদুল মতিন গত ১৮ অগাস্ট গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরে তাকে নেয়া হয় বিএসএমএমইউতে। সেখানে ২০ অগাস্ট তার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়। তার চিকিৎসার পুরো খরচ বিএসএমএমইউ বহন করছে বলে উপাচার্য প্রাণ গোপাল দত্ত জানান।
আবদুল মতিনের জন্ম ১৯২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর, সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলার ধুবলিয়া গ্রামে।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ১৯৪৫ সালে। ভাষা আন্দোলনের পর তিনি ছাত্র ইউনিয়ন গঠনে ভূমিকা রাখেন এবং পরে সংগঠনটির সভাপতি হন। এরপর তিনি কমিউনিস্ট আন্দোলনে সক্রিয় হন।
১৯৫৪ সালে পাবনা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক হন মতিন। মওলানা ভাসানী ‘ন্যাপ’ গঠন করলে তিনি ১৯৫৭ সালে তাতে যোগ দেন। ১৯৫৮ সালে মতিন ‘পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল ) গঠন করেন।
চীনকে অনুসরণকারী বামপন্থি দলগুলোর নানা বিভাজনের মধ্যেও আবদুল মতিন সক্রিয় ছিলেন রাজনীতিতে। ১৯৯২ সালে তিনি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
২০০৬ সালে ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। পরবর্তীকালে ২০০৯ সালে হায়দার আকবর খান রনোর নেতৃত্বে ওয়ার্কার্স পার্টি (পুনর্গঠন) গঠিত হলে আবদুল মতিন তাদের সঙ্গে যোগ দেন। হায়দার আকবর খান রনো বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিলেও আবদুল মতিন পুনর্গঠিত ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গেই রয়েছেন।
ভাষা আন্দোলন নিয়ে তার রচিত বিভিন্ন বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘বাঙালী জাতির উৎস সন্ধান ও ভাষা আন্দোলন’, ‘ভাষা আন্দোলন কী এবং কেন’ এবং ‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস’।
আত্মজীবনীমূলক বই ‘জীবন পথের বাঁকে বাঁকে’ লিখেছেন একুশে পদকে ভূষিত আবদুল মতিন।